সাংবাদিক বৈঠকে সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতা রাকেশ টিকায়েত। ছবি পিটিআই।
বুধবার জাঠ কৃষক নেতা মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েতের জন্মদিনে স্তুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আর তার ঠিক আগের দিনে লখিমপুর খেরির ক্ষোভ প্রশমিত করার কাজে যোগী সরকারকে কার্যত সাহায্য করতেই দেখা গেল মহেন্দ্র সিংহের ছেলে তথা সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতা রাকেশ টিকায়েতকে।
এই দুই ঘটনার মধ্যে প্রচ্ছন্ন সংযোগের সম্ভাবনায় নড়েচড়ে বসেছে ভোটের মুখে দাঁড়ানো উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক মহল।
গত দেড় বছর ধরে দিল্লির সীমানায় তিনটি কেন্দ্রীয় কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে তীব্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন রাকেশ টিকায়েত। উত্তরপ্রদেশের কৃষক সমাজে প্রবল প্রভাবশালী এই টিকায়েত পরিবারকে নিজেদের দিকে আনতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের নেতৃত্ব ধারাবাহিক ভাবে চেষ্টাও করে গিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর এবং বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল দফায় দফায় কথা বলেছেন প্রয়াত মহেন্দ্রর দুই পুত্র নরেশ এবং রাকেশের সঙ্গে। উত্তরপ্রদেশের জাঠ বলয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবারের সঙ্গে সখ্য করে ভোটে ফায়দা তোলা যদি বিজেপি নেতৃত্বের প্রথম উদ্দেশ্য হয়, তা হলে দ্বিতীয়টি হল কৃষি আন্দোলনের ঐক্যে চিড় ধরানো— এমনটাই মনে করছে স্থানীয় শিবির। লখিমপুর খেরির ঘটনায় রাকেশ টিকায়েতকে সরকারের পাশে দাঁড়াতে দেখে প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি তা হলে কিছুর বিনিময়ে শিবির বদলাতে চলেছেন?
ঘটনা হল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলের গাড়িতে পিষ্ট হয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁদের দেহগুলির সৎকারে প্রথমে রাজি হচ্ছিল না পরিবার। বাড়ছিল কৃষকদের ক্ষোভ। কিন্তু মৃতদের পরিবারকে ৪৫ লক্ষ টাকা-সহ বিভিন্ন ক্ষতিপূরণ দেওয়া, সৎকারের ব্যবস্থা, ধর্না উঠিয়ে দেওয়া— এই সব কাজে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ এবং প্রশাসনের পাশে দেখা গিয়েছে রাকেশ টিকায়েতকে। তাঁরই মধ্যস্থতায় সৎকারে রাজি হয় মৃতদের পরিবার। প্রত্যেকটি বাড়ি গিয়ে পরিবারগুলিকে বুঝিয়েছেন রাকেশ। উত্তরপ্রদেশের শীর্ষ পুলিশকর্তা প্রশান্ত কুমারের সঙ্গে যৌথ ভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
গত দেড় বছর যিনি মাঠে দাঁড়িয়ে কৃষক আন্দোলনকে পরিচালনা করলেন, তাঁর এ ভাবে যোগী সরকারের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘিরে উঠছে প্রশ্ন। গত কালই তাঁর বাবা মহেন্দ্র টিকায়েতের জন্মদিনে যোগী টুইট করেন, “কৃষকদের হিতের জন্য আজীবন সংঘর্ষ চালিয়ে যাওয়া জনপ্রিয় চৌধরি মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েতজির জন্মদিনে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।’’ এখানেও না থেমে যোগী আরও লেখেন, ‘‘অন্নদাতাদের জীবনে সুখ এবং সমৃদ্ধি আনার জন্য আপনার প্রয়াস অনুকরণযোগ্য। কৃষকদের উত্থানের জন্য আপনার যাবতীয় স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে উত্তরপ্রদেশ সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এই টুইটের মাধ্যমে আসলে এক ঢিলে অনেক পাখি মারার কৌশল নিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের এই পোড়খাওয়া রাজনীতিক তথা মুখ্যমন্ত্রী। কৃষক-দরদি বার্তা দেওয়া, জাঠ সমাজের মন জয় করা, টিকায়েত পরিবারের প্রতি নিজের আনুগত্য জাহির করা, লখিমপুর খেরির চলতি সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার মতো অনেকগুলি লক্ষ্য রয়েছে তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy