এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জম্মু ও কাশ্মীরে যাওয়ার কথা ছিল। ১৯ এপ্রিল ছিল তাঁর নির্ধারিত সফরের দিন। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের কাছে খবর এসেছিল, এই সময়ে জঙ্গি হামলা হতে পারে এবং তাতে বিশেষ ভাবে নিশানা হতে পারেন পর্যটকেরা। কিন্তু আগে থেকে খবর পেয়েও জঙ্গি হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ কাশ্মীর পুলিশ এবং উপত্যকার নিরাপত্তাবাহিনী। মূলত দু’টি তথ্যগত ভুলের কারণেই তারা ব্যর্থ হয়েছে— এক, স্থান এবং দুই, কাল।
সূত্রের খবর, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর সম্ভাব্য হামলার খবর এসেছিল। এপ্রিল মাসেই সেই হামলা হতে পারে বলে জেনেছিলেন গোয়েন্দারা। কিন্তু খবর ছিল, ১৯ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রীর কাশ্মীর সফরের আশপাশে পর্যটকদের নিশানা করা হতে পারে। হামলার স্থান হতে পারে শ্রীনগর। এই তথ্য অনুযায়ী পদক্ষেপ করেছিল প্রশাসন। হিন্দুস্তান টাইম্স জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ডিজি নলিন প্রভাত খবর পাওয়ার পরেই শ্রীনগরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। টানা নজরদারি চালিয়েছিলেন হামলার সম্ভাব্য স্থানগুলির উপর। যেখানে পর্যটক বেশি থাকেন, যেখানে আগেও হামলা হয়েছে, সেই এলাকাগুলি আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে সবরকম নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।
আরও পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রীর সফর বাতিল হয়ে যায় খারাপ আবহাওয়ার কারণে। কাশ্মীরে মূলত হেলিকপ্টারের মাধ্যমে যাতায়াতের পরিকল্পনা ছিল মোদীর। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের স্থানীয় পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১৮-১৯ তারিখে উপত্যকায় আবহাওয়া খারাপ থাকবে বলে জানানো হয়েছিল। সেই পূর্বাভাস দেখে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এর পরেও কাশ্মীরে নিরাপত্তা শিথিল করেনি পুলিশ। ডিজিপি নিজে শ্রীনগরে থেকে গিয়েছিলেন টানা চার দিন। সংবাদমাধ্যমে দাবি, ২২ এপ্রিল জম্মুতে ফেরেন তিনি। আর সে দিনই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। স্থান শ্রীনগর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকা। গোয়েন্দারা যেমন তথ্য পেয়েছিলেন, সে ভাবেই বেছে বেছে পর্যটকদের উপর হামলা চালানো হয়। জম্মুতে নেমেই আবার পহেলগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা দিতে হয়েছিল কাশ্মীরের ডিজিকে। তিনি এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করতে চাননি। তবে কাশ্মীরের সব প্রশাসনিক কর্তাই এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন যে, গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্যে পহেলগাঁওয়ের কোনও উল্লেখ ছিল না। ফলে সেখানে হামলা হবে কেউ ভাবতে পারেননি। বরং শ্রীনগরে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘এই ধরনের গোয়েন্দা তথ্য দশের মধ্যে ন’বারই মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিন্তু এটা মিলে গিয়েছিল। আমরা তথ্য পেয়েছিলাম, তার ভিত্তিতে পদক্ষেপও করেছিলাম, কিন্তু জায়গাটা ভুল জেনেছিলাম।’’
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলা হয়। অভিযোগ, পর্যটকদের বেছে বেছে মাথায় গুলি করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত সরকার। এখনও হামলাকারীদের ধরা যায়নি। তাঁদের খোঁজে উপত্যকায় চিরুনিতল্লাশি চলছে।