জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার পর ধারাবাহিক ভাবে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। পাকিস্তানকে ওই ঘটনার জন্য দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা, ভারতে পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলের পর পাকিস্তান পাল্টা জানায়, ভারতের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য তারা বন্ধ করে দিচ্ছে। শনিবার নয়াদিল্লিও আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দিল, পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সমস্ত বাণিজ্য বন্ধ। এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। পাকিস্তান থেকে বেশ কিছু পণ্য প্রতি বছর ভারত আমদানি করে থাকে। পাকিস্তানের কৃষিকাজ এবং ওষুধের বাজার বিশেষ ভাবে ভারতের উপর নির্ভরশীল। বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় ভুগছে দু’পক্ষই।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তান থেকে কী কী কেনে ভারত
পাকিস্তান থেকে ভারতে আমদানির তালিকায় রয়েছে ফল, তামা, খনিজ তেল, বাদাম, নুন, প্লাস্টিকের উপকরণ, সালফার, তুলো, চামড়া প্রভৃতি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পাকিস্তান থেকে ২.৮৯ লক্ষ টাকার প্লাস্টিক সামগ্রী কিনেছে ভারত। এ ছাড়া, ১৫.১৬ লক্ষ টাকার তুলো, ১১.৩৩ লক্ষ টাকার খেলনা এবং ক্রীড়াসামগ্রী, লাখ খানেক টাকার বৈদ্যুতিক সামগ্রী কেনা হয়েছে। এ ছাড়া ওই বছরের আমদানির তালিকায় আছে কিছু যন্ত্রপাতি ও ধাতব আকরিক। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ৮৪.১০ লক্ষ টাকার নুন, সালফার, প্লাস্টার, চুন, সিমেন্ট পাকিস্তান থেকে আমদানি করেছে ভারত। বিবিধ ভোজ্যবস্তু কেনা হয়েছে ৩ কোটি টাকার।
ভারত থেকে কী কী কেনে পাকিস্তান
ভারত থেকে পাকিস্তানে রফতানিকৃত পণ্যের তালিকায় প্রথম সারিতে আছে ওষুধপত্র এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম। এ ছাড়া, বিভিন্ন রাসায়নিক, সব্জি, দুগ্ধজাত পণ্য, চিনি পাকিস্তানে রফতানি করে ভারত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পাকিস্তান ১৩৮৮ কোটি টাকার জৈব রাসায়নিক, ১০২২ কোটি টাকার ওষুধ, ৪১ কোটি টাকার প্লাস্টিক, ৩৯ কোটি টাকার অজৈব রাসায়নিক ও ধাতু, ২২ কোটি টাকার খনিজ জ্বালানি, তেল এবং ১৭ কোটি টাকার রাসায়নিক ভারত থেকে আমদানি করেছে পাকিস্তান। আমদানির তালিকায় আছে ময়দা, সাবান, বিভিন্ন খাবারের দ্রব্য, দুধ মোম, নুন, সালফার, সুগন্ধী, সিমেন্ট, সব্জি এবং নানা যন্ত্রপাতি।
ভারত-পাকিস্তান বাণিজ্য বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল ২০১৯ সালে। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা এবং তৎপরবর্তী পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই সময় থেকেই দুই দেশের বাণিজ্য কমে আসে। ভারতের আমদানি অনেকটা কমে যায়। পাকিস্তান থেকে যা যা কেনা হত, তার বিকল্প খুঁজে নেয় নয়াদিল্লি। যদিও পরে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়। পাকিস্তানের আমদানির পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু ভারতের পাক পণ্য আমদানির পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছিল। পহেলগাঁওয়ের পর পাকিস্তান আরও এক বার ভারতের সঙ্গে সব বাণিজ্য বন্ধ করার কথা জানিয়েছে। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে নয়াদিল্লিও জানিয়ে দিয়েছে, সরাসরি হোক বা ঘুরপথে, পাকিস্তানি পণ্য কোনও ভাবেই এ দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। পাকিস্তান থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, সমস্ত আমদানি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে ভারতে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সরকারি নীতির স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না-হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এর ব্যতিক্রমের জন্য অবশ্যই ভারত সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হবে।