প্রথমে দলীয় নেতৃত্বের পর্যালোচনা। তার পরে ‘আত্মসমীক্ষা’র প্রতীক উপবাস কর্মসূচি। দলে ঢালাও রদবদলের সিদ্ধান্তের পরে, এ বার প্রার্থীদের ডেকে মতামত নেওয়া। বিহারে বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে ধাপে ধাপে একাধিক পদক্ষেপ করেছে প্রশান্ত কিশোরের (পি কে) জন সুরাজ পার্টি। পটনার শেখপুরা হাউসে রবিবার দলের সব প্রার্থীদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন জন সুরাজ নেতৃত্ব। ভোটের মুখে মহিলা রোজগার প্রকল্পে টাকা দেওয়া এবং ‘জঙ্গলরাজ’ ফিরে আসার প্রচারই যে নির্বাচনের ফল নীতীশ কুমারদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে— এমন অভিমতই উঠে এসেছে বৈঠকে।
সূত্রের খবর, সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থীই বৈঠকে বলেছেন, নির্বাচনী আচরণবিধি জারি থাকাকালীন নীতীশের সরকার ‘মহিলা রোজগার যোজনা’য় ১০ হাজার করে টাকা দিয়েছিল। সেই সঙ্গে এ-ও বলা হয়েছিল যে, এই টাকা শোধ করতে হবে না। বরং, দল ক্ষমতায় এলে সব মিলিয়ে দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এখানেই শেষ নয়। জন সুরাজ প্রার্থীদের আরও অভিযোগ, এই প্রকল্পে টাকা জমা পড়ার পরে ‘জীবিকা দিদি’রা ভোট-কেন্দ্র চত্বরে বসে থেকে বিহারের মহিলাদের প্রভাবিত করেছেন এনডিএ প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য। এমনকি, সংশ্লিষ্ট এলাকায় এনডিএ প্রার্থীর নাম বৈদ্যুতিন ভোট-যন্ত্রে (ইভিএম) কত নম্বরে রয়েছে, তা-ও তাঁরা এলাকার মহিলাদের বলে দিয়েছেনবলেও অভিযোগ।
এর পাশাপাশি পি কে-র প্রার্থীদের একাংশের দাবি, বাইরে থাকা আসা বহু লোকজন গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার চালিয়েছেন যে, কোথায়-কাদের ভোট দিলে বিহারে ‘জঙ্গলরাজ’ ফিরে আসতে পারে! তারও প্রভাব পড়েছে ভোটের ময়দানে।রবিবারের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পি কে, জন সুরাজের রাজ্য সভাপতি মনোজ ভারতী-সহ দলীয় নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, বিশদ পর্যালোচনা থেকে শিক্ষা নিয়েই পরবর্তী রণকৌশল ঠিক হবে।
এ দিকে গত কাল, শনিবারই বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর পঞ্চায়েত থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত দলের যাবতীয় সাংগঠনিক পরিকাঠামো ভেঙে দিয়েছেন পি কে। শনিবার পটনায় জন সুরাজ পার্টির রাজ্য সভাপতি মনোজের নেতৃত্বে বসেছিল জাতীয় কাউন্সিলের বৈঠক। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পি কে-ও। সেখানেই দলের সকল সাংগঠনিক কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গেই কোনও নেতা যদি দলের শৃঙ্খলা-ভঙ্গ করে থাকেন কিংবা দলীয় স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকেন, তা-ও দ্রুত চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের শীর্ষ মহলের তরফে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দলের ১২ জন প্রবীণ নেতাকে আগামী দেড় মাসের মধ্যে দলের নয়া সাংগঠনিক পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)