প্রতীকী ছবি।
শাসকের মতিগতিমাফিক তোয়াজ নয়! নির্মোহ ভাবে সত্যিটা মেলে ধরাই ইতিহাসবিদের কাজ। এ কথা বলেই বুধবার বিকেলে সারস্বত সমাজকে মিথমুক্ত ইতিহাস প্রচারের আহ্বান জানালেন জহর সরকার। একদা কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব জহরবাবু নিজেও সাংস্কৃতিক ইতিহাসবিদ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক পাঠ বিভাগের বক্তৃতায় তাঁর আহ্বান, ‘‘রোজ অন্তত পাঁচটা পাতা করে মিথমুক্ত ইতিহাস লিখুন, স্টিরিওটাইপ ভাঙতে সাহায্য করুন।’’
বার বার রাজনীতির কৌশলের ঘুঁটি হিসেবেই তৈরি হয় ইতিহাসের সাদা-কালো হিরো-ভিলেন। ফলে, আওরঙ্গজেব থেকে শিবাজি— সবারই কিছুটা মনগড়া ছবি গড়ে ওঠে। জহরবাবুর মতে, ‘‘প্রাক্-বিজেপি জমানার ইতিহাস পাঠেও কিছু ভুল ছিল। এখন সেটা আরও বেশি কল্পকাহিনি নির্ভর।’’ দিল্লির বর্তমান সংস্কৃতি মন্ত্রক কেন্দ্রীয় ইতিহাস কমিটি গড়ে নতুন করে ইতিহাস লিখতে নেমেছে। শাসকের এই ইতিহাস পাঠ নিয়ে এক ধরনের আশঙ্কা কাজ করছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একাংশে। জহরবাবু বললেন, ‘‘এ দেশের ইসলামি শাসনপর্বে কালি লেপে একতরফা পক্ষপাতদুষ্ট ইতিহাসের প্রচার চলছে। বিদ্বেষ তৈরির এই ছক ইতিহাসবিদদেরই রুখতে হবে।’’
‘ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা বিপন্ন: একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ’-শীর্ষক বক্তৃতায় ইতিহাসের চেনা চরিত্রদের অচেনা গল্প শোনাচ্ছিলেন জহরবাবু। আলাউদ্দিন খিলজি হুন আক্রমণ না-রুখলে ভারত মরুভূমি হতে পারত! শিবাজির সেনাদের বড় অংশই ছিলেন মুসলিম। মিরজাফর সিরাজের বিরুদ্ধে গেলেও ব্রিটিশদের এক ইঞ্চি জমি ছাড়েননি। জহরবাবুর মতে, ইতিহাসের এমন নানা টুকরোয় আমাদের ভুলিয়ে রাখা হয়। আওরঙ্গজেব তো সব থেকে প্রিয় ঘৃণ্য চরিত্র। ওঁর বারাণসী নীতির মধ্যে হিন্দু বিদ্বেষের গন্ধ অবান্তর বুঝিয়ে জহরবাবু বলেন, ‘‘কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে রাজবিরোধী শক্তিকে ঠেকাতে ব্যবস্থা নেন আওরঙ্গজেব। সেটা রাজনীতির দাবি। ইন্দিরা গাঁধী যেমন স্বর্ণমন্দিরে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ করেছিলেন।’’ ইসলামি শাসনপর্বের আগেও এ দেশের বহুত্বে ঘা লেগেছে বার বার। বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির মধ্যেও কম টেনশন ছিল না। জহরবাবু বলছিলেন, ‘‘বাংলায় ধ্বংসস্তূপ শব্দটাতেই হিন্দু রাজাদের হাতে বৌদ্ধ ধ্বংসস্তূপের স্মৃতি। গ্রামবাংলার লোকেশ্বর শিবমূর্তি বুদ্ধের অবলোকিতেশ্বর রূপটিকে আত্মসাৎ করেছে।’’ অর্থাৎ, রাজনীতির স্বার্থে শাসকের অত্যাচার ইতিহাসে বহমান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy