ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে নানা বিতর্কের মধ্যেই বিহারে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ চালাচ্ছেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, আরজেডি-র তেজস্বী যাদবেরা। বিহারের ‘মহাগঠবন্ধনে’র (মহাজোট) অংশীদার বাম দলগুলি ছাড়াও ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক অন্যান্য দলের নেতৃত্ব বাইরে থেকে এসে যাত্রায় যোগ দিচ্ছেন। তামিলনাড়ু থেকে যেমন এসেছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন। রাজ্য জুড়ে বিরোধী শিবিরের এই তৎপরতা চলাকালীনই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আসন-রফার প্রক্রিয়া দ্রুত সেরে ফেলতে চাইছে শাসক এনডিএ। সেই সঙ্গে নীতীশ কুমারকে ‘মুখ’ হিসেবে সামনে রেখেই এনডিএ ফের বিহারে লড়বে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও চলছে!
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ দু’দিনের সফরে দিল্লি গিয়েছেন। সূত্রের খবর, তার আগে পটনায় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে নীতীশের বৈঠকে এনডিএ-র মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এনডিএ-র দুই প্রধান শরিক বিজেপি এবং জেডিইউ-এর তরফে সেই আলোচনায় ছিলেন রাজ্যের অন্যতম উপ-মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধরি এবং নীতীশের দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি সঞ্জয় কুমার ঝা। পাঁচ বছর আগে বিধানসভা ভোটে বিজেপি ১১০টি আসনে লড়ে ৭৪ এবং জেডিইউ ১১৫টি আসনে লড়ে ৪৩টি জিতেছিল। সূত্রের খবর, মোট ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় জেডিইউ এ বারও তাদের আসনের ভাগ বেশি রাখারই দাবি করছে। ধর্মেন্দ্রের সঙ্গে প্রাথমিক কথা সেরে নীতীশ তাঁর দিল্লি সফরে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মন বুঝতে চাইছেন বলে এনডিএ শিবিরের একটি সূত্রের ইঙ্গিত।
জেডিইউ যেমন বৃহত্তম শরিকের মর্যাদা ধরে রাখতে বেশি আসনে লড়তে চায়, তেমন আবার চিরাগ পাসোয়ানের দাবি মাথায় রাখতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। তাঁর লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) জন্য ৪০ আসনের দাবি তুলেছেন চিরাগ। এ ছাড়াও, এনডিএ-র মধ্যে আসনের ভাগ দিতে হবে জিতন রাম মাঁঝির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (হম) এবং উপেন্দ্র কুশাওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চাকে (আরএলএম)। শরিকদের মধ্যে বোঝাপড়া করে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই বিহারে আসন-রফার ঘোষণা সেরে ফেলতে চাইছে এনডিএ।
তবে আসনের ভাগাভাগি ছাড়াও অন্য প্রশ্ন নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। বিজেপি শিবিরের একাংশ এ বার মুখ্যমন্ত্রী আসনের দাবি তুলছে। তাদের যুক্তি, বিহারে আসন ও জয়ের অনুপাতে তারা এগিয়ে। তা ছাড়া, একাধিক বার শিবির বদল করে নীতীশ বিহারে ২০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী। তার ফলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া নীতীশ ও তাঁর দল জেডিইউ-এর বিরুদ্ধেই তীব্র। ‘মুখ’ বদল করে সেই হাওয়ার অনেকটা মোকাবিলা করা সম্ভব। এরই মধ্যে পটনায় জেডিইউ-এর সদর দফতরে নীতীশ-পুত্র নিশান্তের ছবি দিয়ে পোস্টার নতুন জল্পনায় ইন্ধন দিয়েছে। গুঞ্জন উঠেছে, এক কালের সহযোগী এবং অধুনা প্রতিপক্ষ লালুপ্রসাদের মতো নীতীশও কি তাঁর পরিবার থেকেই উত্তরসূরি বেছে নিতে চান?
বিজেপি এবং জেডিইউ, দু’পক্ষই অবশ্য বলছে, আসন-রফা নিয়ে বড় কোনও সমস্যা নেই। রাজ্যের মন্ত্রী এবং জেডিইউ নেতা বিজয় কুমার চৌধরির মতে, ‘‘এই জোটে কেউই অন্যের চেয়ে ছোট হয়ে লড়বে না।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ জায়সওয়ালের বক্তব্য, দ্রুতই তাঁদের বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)