বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখালেন কংগ্রেসের ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা।—ছবি পিটিআই।
৯০ আসনের হরিয়ানা বিধানসভায় ৪৬টি আসন পেলে নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠতায় পৌঁছনো যায়। বিজেপি ২০১৪ সালে ৪৭টি আসনে জিতেছিল। এ বার ৭৫ পার করার ‘সংঙ্কল্প’ নিয়েছিলেন গেরুয়া নেতৃত্ব। বুথফেরত সমীক্ষা আভাস দিয়েছিল, অতটা হবে না। তবে আগের বারের চেয়ে বেশ খানিকটা বাড়বে বিজেপির আসনসংখ্যা। হল ঠিক উল্টো। হরিয়ানা বিধানসভায় সবচেয়ে বড় দলের তকমা এ বারও বিজেপি পেল ঠিকই, কিন্তু নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা হারাল। ফলে বিধানসভা ত্রিশঙ্কু। সরকার ধরে রাখতে হলে হয় দুষ্যন্ত চৌটালার জেজেপি-র সমর্থন নিতে হবে বিজেপি-কে। অথবা নির্দল প্রার্থী হিসেবে যাঁরা জিতেছেন, তাঁদের প্রায় সকলকে পাশে টানতে হবে।
কংগ্রেসের জন্য অবশ্য সমীকরণটা আরও কঠিন। আসনসংখ্যা আগের বারের দ্বিগুণে নিয়ে যেতে পারলেও ম্যাজিক সংখ্যা থেকে হুডা অনেক দূরে। সরকার গড়তে হলে জেজেপি-কে এবং নির্দলদের অধিকাংশকে একই সঙ্গে পাশে পেতে হবে।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে ফিরলেও স্তিমিত গেরুয়া হাওয়া, দর বাড়াচ্ছে শিবসেনা, শক্তিবৃদ্ধি বিরোধীদের
চার-পাঁচ মাস আগের লোকসভা নির্বাচনে এই মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানাতেই বিরোধীদের ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিয়েছিল বিজেপি তথা এনডিএ। দুই রাজ্যে যখন ভোট ঘোষিত হল, তখনও বিরোধী শিবির ঠিক মতো কাটিয়ে উঠতে পারেনি লোকসভা নির্বাচনে মোদী ঝড়ের ধাক্কা। তাই টালমাটাল পায়েই এ বার দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিজেপির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছিল বিরোধীদের। কিন্তু ভোটের ফলে টাল খেয়ে গেল বিজেপির আত্মবিশ্বাসই।
কেন হল এই পরিস্থিতি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, বিজেপির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই এই ধাক্কার কারণ। অন্যান্য নির্বাচনে যে রকম সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপায় বিজেপি, এ বার তেমনটা করা হয়নি বলে তাঁদের মত। মোদী এবং শাহ এ বার মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় হাতে গোনা সভা করেছেন। ফলে ঝড় তোলা সম্ভব হয়নি। এই তত্ত্ব যদি মেনে নিতে হয়, তা হলে এটাও মানতে হবে যে, নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ ছাড়া বিজেপিতে আর কেউ নেই, যিনি ঝড় তুলতে পারেন। রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির এবং বিজেপি সরকারের নেতৃত্ব যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁদের জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে এই তত্ত্ব।
আরও পড়ুন: সারদা-কাণ্ডে প্রভাবশালী যোগ নিয়ে বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে জেরা করল সিবিআই
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আর একটি অংশ বলছেন, এই ফলাফলের কারণ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অসন্তোষই। দ্বিতীয় বার বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে দেশের ক্ষমতায় বিজেপি ফিরেছে ঠিকই। কিন্তু তার পরে এমন কোনও সিদ্ধান্ত সরকার নেয়নি, যাতে জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনে কোনও সুরাহা আসে। বরং অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশে। ব্যবসায়ী শ্রেণি কিছুটা ধাক্কা খেয়েছেন ইতিমধ্যেই। কর্মসংস্থানের প্রশ্নে এখনও কোনও দিশা মেলেনি। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণের সম্ভাবনা নিয়েও হইচই শুরু হয়েছে। তাই গেরুয়া রং কিছুটা ফিকে হয়ে গিয়েছে।
অনেক পর্যবেক্ষক আবার বলছেন, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানায় আলাদা আলাদা ‘ফ্যাক্টর’ কাজ করেছে।
মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনা জোট করে লড়লেও ভিতরে ভিতরে পরস্পর বিরোধী চোরাস্রোত কাজ করেছে বলে মনে করছেন তাঁরা। ঠাকরে পরিবার থেকে এই প্রথম কেউ নির্বাচনে লড়লেন মহারাষ্ট্রে। আদিত্য ঠাকরেকে ভোটের ময়দানে নামিয়ে শিবসেনা ঘোষণা করেছিল যে, দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই তুলে ধরা হচ্ছে। দেবেন্দ্র ফডণবীস সরকারের মুখ হওয়া সত্ত্বেও আদিত্যর নামে ভোটে লড়তে নেমেছিল শিবসেনা। বিজেপির চেয়ে বেশি আসন পেলে ফডণবীসকে আর কিছুতেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে দেওয়া হবে না— স্থির করে নিয়েছিল উদ্ধব ঠাকরের দল। তাই দুই শরিকই পরস্পরের আসনসংখ্যায় কোপ মারার চেষ্টা ভিতরে ভিতরে চালিয়ে গিয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তার সুবিধা বেশির ভাগ এলাকাতেই এনসিপি পেয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। তবে শরদ পওয়াররা যে এ বার খুব জোরদার প্রচারে নেমেছিলেন এবং গোটা মহারাষ্ট্রে এনসিপি-কে যে চাঙ্গা করে দিয়েছিলেন, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তুলনায় কংগ্রেসের প্রচার এবং উৎসাহ ছিল অনেক ম্যাড়মেড়ে। কংগ্রেস যে গুরুত্ব দিয়ে লড়লই না, সে কথা ভোটগ্রহণ মেটার পরে প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেছিলেন এনসিপি নেতারাও। কংগ্রেস পূর্ণ উদ্যমে ময়দানে নামলে মহারাষ্ট্রের ফল আরও চমকে দিত বলে পওয়ার শিবির এখন দাবি করছে।