‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করায় আজ রাহুল গান্ধীকে দায়িত্বজ্ঞানহীন নেতা বলে ব্যাখ্যা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। তাঁর কথায়, “রাহুল গান্ধী দায়িত্বজ্ঞানহীন বিরোধীর ভূমিকা পালন করছেন। ভগবান তাঁকে সুবুদ্ধি দিন।”
আজ মোদী সরকারের ১১তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপনে সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন নড্ডা। তাঁর দাবি, “অতীতের সরকার এক দিকে দুর্নীতিতে ডুবে ছিল। অন্য দিকে লক্ষ্যই ছিল সংখ্যালঘু তোষণ। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার দেশকে স্বচ্ছ, তোষণমুক্ত ও সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম শাসনব্যবস্থা উপহার দিয়েছে।” নড্ডার দাবি, সমাজের তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি ছাড়াও সংখ্যালঘু সমাজের উন্নয়ন হয়েছে। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে নারী-কেন্দ্রিক উন্নয়নে।
সরকারের বর্ষপূর্তি উদ্যাপনের পরেই সভাপতি নির্বাচনে গতি আনার পক্ষপাতী বিজেপি নেতৃত্ব। তাই সম্ভবত এটিই ছিল নড্ডার সভাপতি হিসেবে শেষ বড়মাপের সাংবাদিক সম্মেলন। আজ নিজের বক্তব্যে তিন তালাক রদ, ওয়াকফ বোর্ড গঠন, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের মতো বিষয়গুলি আলাদা করে তুলে ধরেন নড্ডা। বুঝিয়ে দিতে চান, সংখ্যাগুরুদের পাশাপাশি মুসলিম সমাজের উন্নয়নেও কতটা দায়বদ্ধ বিজেপি সরকার। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াস নীতির মাধ্যমে এনডিএ সরকার মানুষের জীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।”
‘অপারেশন সিঁদুরে’র পরে ভারতীয় বিমান ঘায়েল হওয়া নিয়ে সরকার কেন দেশবাসীকে তথ্য দেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। আজ তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্ষোভ উগরে দেন নড্ডা। বলেন, “রাহুল বা কংগ্রেসের অবস্থান বোঝা কঠিন। রাহুল সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিয়ে সরকারের পাশে থাকার বার্তা দেন। কিন্তু বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসেই ভিত্তিহীন প্রশ্ন তোলেন। এটুকু বলতে পারি, রাহুল গান্ধী দায়িত্বজ্ঞানহীন বিরোধীর ভূমিকা পালন করছেন।” কংগ্রেসের লোকসভার সচেতক মণিকম টেগোরের পাল্টা যুক্তি, “রাহুল গান্ধী দু’টি সর্বদলীয় বৈঠকে কোনও প্রশ্ন করেননি। উল্টে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ভারতের পক্ষ থেকে হামলার বিষয়ে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল। অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। তাই বিদায়ী বিজেপি সভাপতির এ নিয়ে মুখ না খোলাই ভাল।”
দিন দুয়েক আগেই মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে মুখ খুলেছিলেন রাহুল। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আসন্ন বিহার নির্বাচনে কমিশনের সঙ্গে আঁতাঁত করে এই ধরনের কারচুপি করবে বিজেপি। আজ এই প্রসঙ্গে নড্ডা বলেন, “রাহুল গান্ধী বিভিন্ন সাংবাদিক সম্মেলনে মহারাষ্ট্রের ভোটার সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য তুলে ধরছেন। নির্বাচন কমিশনের মতো সংবিধানিক সংস্থার উদ্দেশে এ ভাবে আক্রমণ শানানো অনুচিত।” কংগ্রেসের মণিকম টেগোর বলেন, “রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিজেপি সভাপতি কেন জবাব দিতে এগিয়ে আসছেন তা বোধগম্য নয়।”
গত ১১ বছরে কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটিও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি, তা নিয়েও আজ প্রশ্ন তুলেছিলেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। নড্ডা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী যে পরিমাণ মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতা করেছেন, জয়রাম রমেশ সারা জীবনে ওই পরিমাণ কথা কারও সঙ্গে বলেননি। তা ছাড়া, সব সময়ে প্রধানমন্ত্রীকেই সব কিছু বলতে হবে এমন ভাবার কিছু নেই।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)