উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে ধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের জামিন পাওয়ার নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের এই রায়ের ফলে আপাতত জেলমুক্তি হচ্ছে না বিজেপির বহিষ্কৃত ওই বিধায়কের। গত মঙ্গলবার বিজেপির বহিষ্কৃত নেতা কুলদীপের জামিন মঞ্জুর করেছিল দিল্লি হাই কোর্ট। তার পর জামিন মঞ্জুরের নির্দেশের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
সোমবার জামিন সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তি আর এক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত। এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা দিল্লি হাই কোর্টের গত ২৩ ডিসেম্বরের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিচ্ছি।” এই নির্দেশের ফলে কুলদীপ জেল থেকে ছাড়া পাবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। আগামী জানুয়ারি মাসে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই নির্যাতিতার আইনজীবী বলেন, “আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কোনও অবস্থাতেই অভিযুক্ত ছাড়া পেতে পারেন না।”
২০১৭ সালে উন্নাওয়ে যখন ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে, সেই সময় নির্যাতিতা নাবালিকা ছিলেন। বাঙ্গেরমউ কেন্দ্রের চার বারের বিজেপি বিধায়ক (এখন দল থেকে বহিষ্কৃত) কুলদীপ এবং তাঁর সঙ্গী শশীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। সেই মামলায় ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কিছু দিনের মধ্যেই বিজেপি তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে। পুলিশের চার্জশিটের ভিত্তিতে পকসো আইনের ১২০বি (ষড়যন্ত্র), ৩৬৩ (অপহরণ) ৩৬৬ (অপহরণ ও বিবাহের জন্য বাধ্য করা) ৩৭৬ (ধর্ষণ)-সহ একাধিক ধারায় চার্জ গঠন করে আদালত। সেই মামলায় কুলদীপকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শোনানো হয়।
নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কুলদীপ। সেই মামলায় গত মঙ্গলবার বিজেপির বহিষ্কৃত নেতার জামিন মঞ্জুর করেছিল আদালত। হাই কোর্ট ১৫ লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত বন্ডে কুলদীপের সাজা মকুব করে। আদালত আরও জানায়, উন্নাওয়ের নির্যাতিতার বাড়ির পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না কুলদীপ। নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকি না-দেওয়ারও নির্দেশও দেয় উচ্চ আদালত। তবে জামিনের ওই নির্দেশের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যায় উন্নাওকাণ্ডের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
দিল্লি হাই কোর্টের নির্দেশের পরেও জেলমুক্তি হয়নি কুলদীপের। ধর্ষণকাণ্ডের সাজা থেকে মুক্তি পেলেও নির্যাতিতার বাবার মৃত্যুর ঘটনাতে সাজা ভোগ করতে হচ্ছে তাঁকে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাই কোর্টেই আবেদন করেছেন কুলদীপ, যা এখনও বিচারাধীন। তবে শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পর ধর্ষণের মামলা থেকেও রেহাই পেলেন না বিজেপির বহিষ্কৃত এই নেতা।