উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের পরে কড়া ভাষায় সুপ্রিম কোর্টকে নিশানা করেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং দীনেশ শর্মা। কিন্তু পত্রপাঠ তাঁদের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা স্বয়ং জানালেন, দল ওই দুই সাংসদের ওই মন্তব্য খারিজ করছে। বিজেপি বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সভাপতি ওই দু’জনকে এবং দলের অন্যদের নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা যেন এই ধরনের মন্তব্য আর না করেন।
সুপ্রিম কোর্টকে ‘সুপার পার্লামেন্ট’ আখ্যা দিয়ে ধনখড় বলেছিলেন, সংবিধানের ১৪২তম অনুচ্ছেদে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ক্ষমতা পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সমান হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে রায় দিয়েছিল। আজ বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে সুপ্রিম কোর্টকে নিশানা করে বলেন, ‘‘আপনাদের নিয়োগ করেছেন যাঁরা, আপনারা তাঁদের কী ভাবে নির্দেশ দিতে পারেন?’’ দীনেশ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতিই ‘সুপ্রিম’, তাঁকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না।’’
এর পরেই এক্স হ্যান্ডলে নড্ডা লেখেন, ‘বিচার ব্যবস্থা এবং প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে নিশিকান্ত দুবে এবং দীনেশ শর্মা যে সব মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। এ তাঁদের ব্যক্তিগত মন্তব্য। বিজেপি তাঁদের সঙ্গে একমত নয় এবং তারা কখনও এই ধরনের মন্তব্য সমর্থনও করেনি। বিজেপি সর্বতো ভাবে এই মন্তব্য খারিজ করছে।’
সুপ্রিম কোর্ট বিল পাশের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে যে রায় দিয়েছিল, মোদী সরকার তা পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে চলেছে বলে খবর। কিন্তু ধনখড়ের পরে বিজেপি নেতারা এক সুরে যে ভাবে সর্বোচ্চ আদালতকে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছেন, তাতে দলের বিড়ম্বনাই যে বাড়ছে, নড্ডার কড়া পদক্ষেপে তা স্পষ্ট। সূত্রের মতে, ফের আদালতে যেতে গিয়ে উল্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ চাপলে তা আরও অস্বস্তির হবে বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষে।
সুপ্রিম কোর্টের উদ্দেশে নিশিকান্ত বলেছিলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করেন। দেশের সংসদ আইন তৈরি করে। আপনারা কী ভাবে সংসদকে নির্দেশ দিতে পারেন? আপনারা দেশকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যেতে চান।’’ সংসদের অধিবেশন বসলে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে দাবি করে নিশিকান্ত এমনও বলেন যে, সুপ্রিম কোর্ট দেশে ধর্মীয় লড়াই তৈরি করছে। যদি সব কিছুর জন্যই সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়, তা হলে লোকসভা-বিধানসভা বন্ধ করে দেওয়া হোক।
এই পরিস্থিতিতে নড্ডা এ দিন বলছেন, বিজেপি সব সময়ে বিচার ব্যবস্থাকে সম্মান করে এসেছে এবং তার পরামর্শ ও নির্দেশকে সানন্দে গ্রহণ করেছে। কারণ দল হিসেবে তারা মনে করে, সর্বোচ্চ আদালত-সহ সব আদালতই গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সংবিধান-রক্ষার্থে গঠিত মজবুত স্তম্ভ হল আদালত।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)