মুজফ্ফরপুরের মেডিক্যাল ক্যাম্পে কাফিল খান ও কানহাইয়া কুমার। নিজস্ব চিত্র
অনেক শিশুর প্রাণ বাঁচালেও বিভিন্ন অভিযোগে সরকারি হাসপাতাল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল এক জনকে, গ্রেফতারও করা হয়েছিল। আর এক জন অবিচার থেকে ‘আজাদি’ চাওয়ায় ‘দেশদ্রোহী’র তকমা পেয়েছিলেন। বিহারে শিশুমৃত্যুর পরে রোগ প্রতিরোধে ময়দানে নেমে কাজ করছেন তাঁরা দু’জন।
গোরক্ষপুরে বিআরডি মেডিক্যাল কলেজে অক্সিজেনের অভাবে ৬০টি শিশু মারা যায়, ২০১৭ সালে। নিজের টাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে আরও শিশুমৃত্যু ঠেকালেও এনসেফ্যালাইটিস চিকিৎসা বিভাগের প্রধান কাফিল খানকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ। এখনও তিনি সাসপেনশনে। সেই কাফিল ১২ দিনের শিবির করলেন মুজফ্ফরপুরে। ফোনে বললেন, ‘‘১৮ জুন থেকে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা করছিলাম। পুরোদমে বর্ষা শুরু হওয়ায় ফিরছি।’’
মুজফ্ফরপুরে গিয়ে কাফিলের সঙ্গে দেখা করেছেন সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমার। তার পর ওআরএস, ওষুধ পাঠিয়েছেন। ফোনে কানহাইয়া বলেন, ‘‘কাফিলজি বিভিন্ন জায়গায় শিবির করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি, দল তৈরি করে গ্রামে পাঠাতে।’’
এ পর্যন্ত অন্তত দেড়শোটি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে মুজফ্ফরপুর-সহ বিহারের বিভিন্ন অংশে। রোগের মূল কারণ এখনও চিহ্নিত করা না গেলেও অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম-এর লক্ষণ দেখা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে দারিদ্র ও অপুষ্টিকেই মূলত দায়ী করছেন কাফিল। বলেন, ‘‘সাতটা কারণ চিহ্নিত করেছি— ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব, স্যানিটেশনের অভাব, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, ঘিঞ্জি বসতি, টিকাকরণের অভাব, অপুষ্টি, অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতা।’’
কানহাইয়াও বলেন, ‘‘দেখুন, আমি মেডিক্যাল সায়েন্সের ডাক্তার নই। আমি সামাজিক বিজ্ঞানের ডাক্তার। সেই ধারণা থেকেই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। যে বিষয় সামনে এল, তা হল অপুষ্টি।’’
শিশু-বিশেষজ্ঞ হিসাবে নিজের পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে কাফিল বলছেন, ‘‘অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস বা জাপানি এনসেফ্যালাইটিস— যা-ই হোক, রোগ প্রতিরোধ করাই আসল কাজ।’’ তাই গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিশুদের জ্বর মাপা, ওআরএস খাওয়ানো বা পরিচ্ছন্নতা শিখিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিহারের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ইনসাফ মঞ্চ’ সাহায্য করেছে। দু’দিন-দু’দিন করে ক্যাম্প চালানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল।’’ উত্তর বিহারে শ্রীকৃষ্ণ মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো নিয়ে চিন্তিত তিনি— ‘‘শিশুবিভাগে একশোটা বেড। একটা বেডে দু’তিন জন করে বাচ্চা। মাটিতে শুইয়ে চিকিৎসা চলছে।’’
নিজের রাজ্যে তো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করার সুযোগ পান না, হতাশ লাগে না? কাফিলের জবাব, ‘‘আমি তো বিনা কারণে দোষী হয়েছি। কমিশনের চক্করে সাপ্লায়ারকে টাকা দেওয়া হয়নি বলে তারা লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। হাইকোর্ট আমায় ক্লিনচিট দিলেও সাসপেনশন ওঠেনি।’’
আর কানহাইয়া বলছেন, ‘‘যাঁরা মাঠে নেমে কাজ করেন, তাঁদের কাজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সরকারি ব্যর্থতা প্রকাশ্যে আসে। তখন তাঁদের অপবাদ দেওয়া হয়। তবে, কাজের মানুষ নিজের কাজ করেই চলেন।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy