E-Paper

পুলিশকর্তার নিলম্বন ঘিরে বিতর্কে কর্নাটকের সরকার

গত বুধবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে ওই উৎসবে বাঁধ ভাঙা ভিড়ের মধ্যে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তার আগের দিন ফাইনাল ম্যাচ ঘিরে যে উন্মাদনা ছিল, তাতে পরের দিন অনুষ্ঠান করা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৫ ০৯:১৭
কোহলি এবং আরসিবি তারকাদের দেখতে বিপুল জনসমাগম হয় চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের।

কোহলি এবং আরসিবি তারকাদের দেখতে বিপুল জনসমাগম হয় চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের। —ফাইল চিত্র।

আইপিএলজয়ী রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের বিজয়োৎসবে ১১ জনের পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর পরেই বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার বি দয়ানন্দকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। যা নিয়ে নানা শিবিরের প্রশ্নে বিদ্ধ হয়ে চলেছে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার। অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস ও পুদুচেরির প্রাক্তন উপরাজ্যপাল কিরণ বেদী একটি সাক্ষাৎকারে আজ বলেছেন, এই নিলম্বন ‘যুক্তিযুক্ত এবং ন্যায়সঙ্গত’ নয়। তাঁর মতে, দুধের পাত্র থেকে মাছি তুলে ফেলার মতো করে পুলিশ কমিশনারের নিলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীও বলেছেন, দয়ানন্দ ও কিছু শীর্ষ পুলিশকর্তাকে সরিয়ে দিয়ে প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায় থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে চায় রাজ্য সরকার। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এখনও এই নিলম্বনে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি।

গত বুধবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে ওই উৎসবে বাঁধ ভাঙা ভিড়ের মধ্যে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তার আগের দিন ফাইনাল ম্যাচ ঘিরে যে উন্মাদনা ছিল, তাতে পরের দিন অনুষ্ঠান করা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল। ফাইনাল ম্যাচের জন্য রাতভর রাস্তায় থেকে পুলিশকর্মীরা ক্লান্তও ছিলেন। পুলিশ বলেছিল, রবিবার ওই অনুষ্ঠান করতে। কিন্তু বিদেশি ক্রিকেটারেরা ফেরার আগেই অনুষ্ঠানটি সারতে চাইছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স কর্তৃপক্ষ। পুলিশের পরামর্শে অনুষ্ঠানে কিছু কাটছাঁট হলেও আয়োজনে অব্যবস্থা ছিল চরমে।

কিরণ আজ বলেছেন, “ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কাউকে তো চাই। তাঁর (দয়ানন্দ) কথা শোনার দরকার ছিল। কমিশনার কি সবাইকে অগ্রাহ্য করেছিলেন? শুধু কমিশনারকে বেছে নেওয়া হল কী করে? এটা ন্যায্য নয়। তিনি পুরো একা তো কাজ করেননি।” যুক্তি, ন্যায় বা ব্যাখ্যার অতীত এমন নিলম্বন পুরো বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার মতো, বলেছেন তিনি।

আজ মাইসুরুর বিজেপি অফিসে সাংবাদিক বৈঠকে প্রহ্লাদ বলেন, “মূল দায়িত্ব তো মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রীর।” ওই দিন উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের কোচের মতো হাবভাব করছিলেন স্টেডিয়ামে, কটাক্ষ তাঁর। প্রশ্নও তুলেছেন, কেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া সবাইকে ওই অনুষ্ঠানে আসার খোলা আহ্বান জানিয়েছিলেন? প্রহ্লাদের বক্তব্য, “এটা জনপ্রিয়তা আর কৃতিত্ব কাড়ার পরিকল্পিত রাজনৈতিক চাল ছিল, যা শেষ পর্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক মোড় নিল।” এ বার কেন্দ্র কী করে, সে দিকেই চোখ সবার। বিধি অনুযায়ী, পুলিশ কমিশনারের নিলম্বনে ৩০ দিনের মধ্যে অনুমোদন দিতে হয় কেন্দ্রকে। যে ব্যাপারে আজ রাত পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

ওই দুর্ঘটনায় রাজ্যের সরকারকে কর্নাটক হাই কোর্ট ন’দফা প্রশ্ন করেছে বৃহস্পতিবার। বিষয়টি আজই প্রকাশ্যে এসেছে। একই দিনে কর্নাটক রাজ্য ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সচিবের পদ থেকে এ শঙ্কর ও কোষাধ্যক্ষের পদ থেকে ই এস জয়রাম ইস্তফা দিয়েছেন বলে আজ জানা গিয়েছে। ‘বিশেষ কিছু করার ছিল না’ বলে জানিয়েও ঘটনার নৈতিক দায় নিয়ে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন তাঁরা।

হাই কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতি ভি কমলেশ্বর রাও ও বিচারপতি সি এম জোশীর বেঞ্চ রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছে, বিজয়োৎসব আয়োজনের সিদ্ধান্ত কে বা কারা নিয়েছিলেন? কী ভাবে এবং কখন? অনুষ্ঠান আয়োজনে কি কোনও অনুমতি চাওয়া হয়েছিল? কোনও ক্রীড়া অনুষ্ঠান অথবা এই ধরনের উৎসবে ৫০ হাজার বা তার বেশি লোকের ভিড় সামাল দিতে কর্মপদ্ধতির আদর্শ বিধি (এসওপি) প্রণয়ন কি হয়েছে? ১০ জুনের মধ্যে প্রশ্নগুলির জবাব চাওয়া হয়েছে।

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পদপিষ্ট হয়ে হাসন জেলার ভূমিক লক্ষ্মণের (২১) মৃত্যুর পরে ছেলের দেহের ময়না তদন্ত না করার আর্জি জানিয়ে তাঁর বাবা-মা বলেছিলেন, “কোনও মুখ্যমন্ত্রী, কোনও উপমুখ্যমন্ত্রী এসে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। ওর দেহটা আর কাটাছেঁড়া করবেন না।’’ ভূমিকের কবরে লুটিয়ে বাবা বি টি লক্ষ্মণের হাহাকারের একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, একমাত্র ছেলের কবর ছেড়ে সরতে চাইছেন না বাবা। বলছেন, “ওর কথা ভেবে যে জমিটা কিনেছিলাম, তাতেই ওর স্মৃতিসৌধ করতে হবে।”

অন্য দিকে, আজ কর্নাটক সরকার মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ লক্ষ টাকা করেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RCB Bengaluru

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy