Advertisement
০২ মে ২০২৪
kerala

NEET Innerwear Conroversy: ‘আর অন্তর্বাস পরতে হবে না, ওটা তুলে বেরিয়ে যান’, ছাত্রীদের বলেছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা!

কোল্লামের এক ছাত্রী জানিয়েছেন, সে দিন পরীক্ষাহলে ঢোকার আগে এবং পরে ঠিক কী কী হয়েছিল। অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

সংবাদ সংস্থা
তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২২ ১০:১১
Share: Save:

ঘাড়ের দু’পাশ থেকে চুল টেনে এনে জামার উপর ফেলে রেখেছিলেন ছাত্রীরা। যাতে কিছু বোঝা না যায়! একই কেন্দ্রে তাঁদের সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন সমবয়সি কয়েকশো ছাত্র। পুরুষ হল-রক্ষীরাও ঘোরাফেরা করছিলেন চার পাশে। তাঁদের মধ্যে অন্তর্বাস ছাড়া বসে থাকতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন প্রত্যেকেই। পেশা-প্রবেশের বড় পরীক্ষা দিতে এসে তারা ভেবেই পাচ্ছিলেন না প্রশ্নপত্রে মন দেবেন, না শরীরের দিকে। চিকিৎসা নিয়ে পড়ার সর্বভারতীয় এন্ট্রান্স পরীক্ষা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট)-এর কেরলের কোল্লামের কেন্দ্রে হওয়া সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা এ বার জানালেন এক ছাত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ওই মানসিক যন্ত্রণা শুধু পরীক্ষার হলেই থেমে থাকেনি। পরীক্ষা দিয়ে বেরোনোর সময়েও হেনস্থা করা হয় তাঁদের। নিরাপত্তাকর্মীদের অমানবিক ব্যবহারে কেঁদেও ফেলেছিলেন বহু ছাত্রী।

একটি সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতা কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন কেরলের কোল্লামের বাসিন্দা ওই তরুণীও। এর আগে তাঁরই মতো এক পরীক্ষার্থীর বাবা ছাত্রীদের হেনস্থার কথা প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। তার পরেই একে একে আরও কয়েক জন ছাত্রী এ ব্যাপারে অভিযোগ জানান। কোল্লামের এই ছাত্রী জানালেন, সে দিন পরীক্ষাহলে ঢোকার আগে এবং পরে ঠিক কী কী হয়েছিল।

হলে ঢোকার শুরুতেই দু’টি লাইনে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল মহিলা পরীক্ষার্থীদের। ঘটনাটির বর্ণনা দিয়েছেন ওই তরুণী। তিনি বলেন, ‘‘ওরা আমাদের ডেকে বলে শরীর স্ক্যান করা হবে। আমরা ভেবেছিলাম স্ক্যান করে ছেড়ে দেবে। কিন্তু স্ক্যান করার পর আমাদের দু’টি লাইনে দাঁড় করানো হল। যাঁদের অন্তর্বাসে ধাতব হুক নেই তাঁদের একটি লাইন, আরেকটি...।’’ দ্বিতীয় লাইনটি কাদের প্রশ্নের জবাবে ওই ছাত্রী বলেন, ‘‘আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আমার অন্তর্বাসে ধাতব হুক আছে কি না। হ্যাঁ বলতেই ওরা ওই দ্বিতীয় লাইনে দাঁড়াতে বলে।’’

ঠিক কী হতে চলেছে তখনও বুঝতে পারছিলেন না ওই ছাত্রী। ‘‘ওরা আমাদের অন্তর্বাস খুলে একটি টেবলে রাখতে বলে। আমি যখন এসে সেই টেবলের সামনে পৌঁছই, তত ক্ষণে সেখানে অন্তর্বাসের একটি স্তূপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমাদের ভয় হচ্ছিল যখন ফিরব তখন নিজের অন্তর্বাস ফেরত পাব তো! অবশ্য ফেরার সময় ওই ঘেঁটে থাকা স্তূপের ভিতর থেকে আমি নিজের অন্তর্বাস শেষপর্যন্ত খুঁজে পেয়েছিলাম।’’

পরীক্ষার হলে অন্তর্বাস ছাড়া প্রবেশ করার দ্বিধাগ্রস্ততার কথাও জানিয়েছেন ছাত্রী। তিনি বলেছেন ‘‘আমাদের প্রায় কারও কাছেই শাল বা চাদর জাতীয় পোশাক ছিল না। পরীক্ষার হলে ও ভাবে বসতে অস্বস্তি হওয়ায় আমরা আমাদের চুল সামনের দিকে পোশাকের উপর ফেলে রেখেছিলাম। যাতে অস্বস্তি কিছুটা কাটে। কিন্তু তাতে এক তো সবসময় সচেতন থাকতে হচ্ছিল। পাশাপাশি পরীক্ষাতেও পুরোপুরি মন দিতে পারছিলাম না।’’

হল থেকে বেরনোর সময় নিরাপত্তাকর্মীদের আচরণ ছিল আরও অমানবিক, অভিযোগ ছাত্রীর। এক ছাত্রী কেঁদে ফেলায় তাকে রীতিমতো ধমক দেওয়া হয়। অন্তর্বাস ফেরত পেয়ে সেটি পরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ছাত্রীরা। অন্ধকার ঘরে অদ্ভুত পরিবেশে পোশাক বদলাতে অস্বস্তিও হচ্ছিল তাঁদের। এক মহিলা নিরাপত্তাকর্মী তাঁদের বলেন, ‘‘পরার দরকার নেই। ওটা তুলে হাতে নিয়ে বেরিয়ে যাও।’’

উল্লেখ্য, নিট-এর আয়োজক সংস্থা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি প্রথমে এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও পর পর অভিযোগ দায়ের হতে একটি অনুসন্ধান দল গড়ে এই ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে। মঙ্গলবার এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারও করা হয়েছে পাঁচ মহিলাকে। তবে পরীক্ষার হলে ছাত্রীর অভিজ্ঞতার বর্ণনা শুনে শিউরে উঠেছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kerala NEET Innerwear Controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE