ঘরের বিবাদ ছিল জাতীয় শিক্ষা নীতি (২০২০) প্রসঙ্গে। দুই বাম দল সিপিএম ও সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যস্থতায় জাতীয় শিক্ষা নীতির আওতাধীন ‘পিএম শ্রী’ প্রকল্পে অংশগ্রহণ থেকে আপাতত কৌশলগত বিরতি নিল কেরল সরকার। তারই পাশাপাশি, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রশ্নে বিরোধী কংগ্রেস তথা ইউডিএফ-কে ফের পাশে পেল শাসক ফ্রন্ট এলডিএফ। এই জোড়া স্বস্তি নিয়েই প্রবাসী মালয়ালিদের আয়োজিত ‘মালয়লোলসভম’ অনুষ্ঠানে শামিল হতে কাতারে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
গোড়া থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষা নীতি বিরোধিতায় অনড় রয়েছে বিরোধী-শাসিত তিন রাজ্য কেরল, তামিলনাড়ু ও বাংলা। কিন্তু ওই শিক্ষা নীতিরই অধীন ‘পিএম শ্রী’ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা-পত্র সই করেছিল কেরলের বাম সরকার। তাদের যুক্তি, এই প্রকল্পকে সংযুক্ত করে এখন ‘সমগ্র শিক্ষা অভিযানে’র (এসএসএ) তহবিল মঞ্জুর করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ‘পিএম শ্রী’ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত না-হলে এসএসএ-র টাকাও আটকে যাচ্ছে। তাই শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করেও ‘পিএম শ্রী’র শরিক হতে সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছিল বিজয়নের সরকার। তার জেরে এলডিএফের অন্যতম প্রধান শরিক সিপিআইয়ের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছিল সিপিএমকে। সিপিআই নেতৃত্বের পাল্টা যুক্তি, শিক্ষার গৈরিকীকরণ-সহ বিভিন্ন প্রশ্নে বামেরা যে মতাদর্শগত বিরোধিতা করছে, সেই অবস্থান লঘু হয়ে যাবে ওই প্রকল্পে বাম-শাসিত সরকার যোগ দিলে। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন ঘোষণা করেছেন, মন্ত্রিসভার একটি সাব-কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেবে। তার আগে সমঝোতা কার্যকর না-করার জন্য (‘ফ্রিজ়’ রাখতে বলে) কেন্দ্রকে চিঠি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে আশা কর্মীদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে সাম্মানিক বৃদ্ধি ও সরকারি কর্মীদের পেনশন বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজয়নের মন্ত্রিসভা।
কেরল সরকার ‘পিএম শ্রী’ প্রকল্প থেকে পিছিয়ে না-এলে মন্ত্রিসভা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিআই। সিপিএম ও সিপিআইয়ের দুই সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি এবং ডি রাজার প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় মীমাংসা বেরোয়নি। কয়েক দিন আগে আলপ্পুঝার একটি সরকারি গেস্ট হাউসে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক বিনয় বিশ্বমের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। তখনও জট খোলেনি। সূত্রের খবর, এর পরে বেবি ও রাজা ফের আলোচনায় বসেছিলেন। মন্ত্রিসভা বয়কটের পাশাপাশি সিপিআই সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেও কেরলে বাম সরকার বিপাকে পড়ত, সংখ্যার সমীকরণ এমন নয়। কিন্তু জাতীয় শিক্ষা নীতির বিরোধিতার প্রশ্নে বামেরা আপস করছে, এমন বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। এই মর্মে আলোচনার পরে বেবি কেরলের সরকারের তরফে আপাতত কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়ার প্রস্তাব দেন, মেনে নেন রাজা। তার পরেই কেরলের সাধারণ শিক্ষামন্ত্রী ভি শিবনকুট্টির নেতৃত্বে সিপিআই, কেরল কংগ্রেস (এম), এনসিপি, জনতা দল (এস)-এর মন্ত্রীদের নিয়ে ৭ সদস্যের সাব-কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। শিবনকুট্টির মতে, ‘‘সমঝোতা-পত্রে সই করে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে আসা এখন সম্ভব ছিল না। তার অর্থ এই নয় যে, আমরা জাতীয় শিক্ষা নীতির বাকি বিষয় মেনে নিচ্ছিলাম। এখন এই কমিটি গোটা বিষয়টা পর্যালোচনা করবে।’’ প্রসঙ্গত, গোটা দেশে পাঁচ বছরে ১৪ হাজার ৫০০ স্কুলের উন্নয়নের জন্য ‘পিএম শ্রী’ প্রকল্পে ২৭ হাজার ৩৬০ কোটি বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র।
এরই মধ্যে কেরলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) রতন ইউ কেলকরের ডাকে এসআইআর নিয়ে সর্বদল বৈঠক হয়েছে। সেখানে এসআইআর-এর পদ্ধতির বিরোধিতার পাশাপাশি কেরল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সানি জোসেফ প্রস্তাব দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত চলতি মামলায় ওই রাজ্য থেকে কংগ্রেস ও সিপিএম, দু’দলই অংশীদার হোক। প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন সিপিএম নেতা এম ভি জয়রাজন। এসআইআর-বিরোধিতায় আগেই সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ হয়েছিল কেরল বিধানসভায়। বাংলার পাশাপাশি দক্ষিণী ওই রাজ্যেও আগামী ৪ নভেম্বর থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসআইআর শুরু হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)