Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
kerala

Gender Budget: প্রথা ভেঙে বেরচ্ছে কেরল, মহিলাদের প্রতি বৈষম্য কমাতে চালু ‘জেন্ডার বাজেট’

পুরুষ বা অন্য লিঙ্গের মধ্যে সমতা আনার লক্ষ্যে চালু হয়েছে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের বাজেট। এক কথায় যাকে বলা হচ্ছে ‘জেন্ডার বাজেট’।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কোঢ়িকোড শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ ০৭:০২
Share: Save:

ধরা যাক, কেউ জমা দিচ্ছেন বাড়ির জন্য কর। বা কেউ দিচ্ছেন জমির খাজনা। যাঁরা সরকারের খাতায় এমন নানা ধরনের কর দিলেন বা পরিষেবা নিলেন, তাঁদের পুরুষ বা মহিলা পরিচয় আলাদা করে উল্লেখ রাখার চল নেই। সেই প্রথা ভেঙে বেরোতে শুরু করেছে কেরল। অর্থনৈতিক ভাবেও মহিলা, পুরুষ বা অন্য লিঙ্গের মধ্যে সমতা আনার লক্ষ্যে চালু হয়েছে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের বাজেট। এক কথায় যাকে বলা হচ্ছে ‘জেন্ডার বাজেট’।

দক্ষিণী এই রাজ্যের অন্তত ৫০টি স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থা এই বছরই চালু করেছে ‘জেন্ডার বাজেট’। তার মধ্যে আছে একটি পুর-নিগম, ১৮টি পুরসভা, একটি জেলা পঞ্চায়েত (অর্থাৎ জেলা পরিষদ, ৮টি ব্লক পঞ্চায়েত (অর্থাৎ পঞ্চায়েত সমিতি) এবং ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েত। কী ভাবে ‘জেন্ডার বাজেট’ তৈরি করা যায়, তার কোনও প্রতিষ্ঠিত মডেল হাতের সামনে ছিল না।

পুরসভা ও পঞ্চায়েত স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে দফায় দফায় কর্মশালা করে এক ধরনের রূপরেখা তৈরি করেছে কেরল ইনস্টিটিউট অব লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (কিলা)। রাজ্য সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, পঞ্চায়েত ও পুরসভার অভিজ্ঞতা দেখে নিয়ে রাজ্য স্তরেও এমন সমানাধিকারের বাজেটের ভাবনা হাতে নেওয়া হবে।

কোঢ়িকোডে কিলা-র দফতরে বসেই তৈরি হয়েছে অন্তত এক ডজন স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থার বাজেট। কিলা-র স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত শাখার কো-অর্ডিনেটর পি এম অমৃতা বলেছেন, ‘‘পুরোদস্তুর জেন্ডার বাজেট তৈরি করার লক্ষ্যে আরও অনেকটা পথ যেতে হবে। এখন সেই প্রক্রিয়ার সূচনা হল বলা যায়।’’

অমৃতার ব্যাখ্যা, সচরাচর কোনও বাজেটের হিসেব-নিকেশের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য প্রকল্প বাবদ ব্যয়ের খতিয়ান দেওয়া থাকে। কিন্তু নীতি বা বাজেট কাঠামোয় তার প্রতিফলন থাকে না। কিলা উদাহরণ দিয়ে দেখাচ্ছে, মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পের কথা আলাদা। কিন্তু ধরা যাক, সরকারি সহায়তায় যাঁরা কৃষি সরঞ্জাম পান, তাঁদের মধ্যে মহিলা-পুরুষের তথ্য আলাদা করা থাকে না। সম্পত্তি
বা ওই জাতীয় করের ক্ষেত্রেও নাগরিকের মহিলা-পুরুষ পরিচয় ধরে কোনও সমীক্ষা হয় না। অমৃতার বক্তব্য, ‘‘কাজ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, যে সব সফ্‌টঅয়্যার ব্যবহার করে এই সরকারি কাজ হয়, সেখানে অন্যান্য তথ্য দেওয়ার সুযোগই নেই। এখন তাই ‘ইনফরমেশন কেরল মিশন’ প্রকল্পের আওতায়
নতুন সফ্‌টঅয়্যার নিয়ে আসার পরিকল্পনা হচ্ছে।’’

সরকারি তহবিলের টাকা খরচ করে যে সব পরিষেবা বা প্রকল্প চলছে, তার কতটা ফায়দা মহিলাদের কাছে পৌঁছচ্ছে, তাঁদের অসুবিধা বা চাহিদা কী— এই রকম নানা তথ্য বার করে পুরুষ ও মহিলাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা এই ‘জেন্ডার বাজেটে’র লক্ষ্য। কেরলের অর্থমন্ত্রী তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন সদস্য কে এন বালগোপালের বক্তব্য, ‘‘বেশ কিছু ক্ষেত্রে মজুরির প্রশ্নেও মহিলারা পিছিয়ে আছেন। কোথায় কোথায় কেমন সমস্যা রয়েছে, তার সার্বিক তথ্য নিয়ে সমানাধিকারের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা আমরা সকলে মিলে করছি।’’

পুরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি নিজেদের প্রশিক্ষণের পরে বিভিন্ন ধরনের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে। তথ্য নেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের তৈরি সামগ্রী প্রদর্শনী ও বিক্রির কেন্দ্র তৈরি করার প্রকল্পও জেলা পঞ্চায়েত স্তরে হাতে নেওয়া গিয়েছে ‘জেন্ডার বাজেটে’র সৌজন্যে। অমৃতারা অবশ্য চান, উৎসাহ না হারিয়ে এই প্রক্রিয়ায় লেগে থাকুন রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kerala gender equality Kerala Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE