Advertisement
E-Paper

সিন্ধু, বিতস্তার প্রধান দুই বাঁধে জলস্তর নামছে! প্রবাহ কমেছে চন্দ্রভাগাতেও, জল-‘যুদ্ধের’ ধাক্কায় উদ্বেগ বাড়ছে পাকিস্তানে

বিতস্তার উপর মংলা জলাধার এবং সিন্ধুর উপর তারবেলা জলাধারে সংরক্ষিত জল কমে এসেছে। এই দুই বাঁধে জলের পরিমাণ কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। আচমকা কমতে শুরু করেছে চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ১৩:০২
সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের পর পাকিস্তানে জলপ্রবাহ কমেছে বলে দাবি।

সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের পর পাকিস্তানে জলপ্রবাহ কমেছে বলে দাবি। ছবি: পিটিআই।

সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি ভারত স্থগিত করে দেওয়ায় নতুন সঙ্কটে পাকিস্তান। উত্তর-পূর্বের (পাকিস্তানের হিসাবে) প্রধান তিনটি নদী নিয়ে পাক কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন। সিন্ধু এবং তার উপনদী চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়। এই তিন নদীর জলের উপর পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিকাজ নির্ভরশীল। কিন্তু ভারত এই সংক্রান্ত চুক্তি স্থগিত করে দেওয়ায় নদীগুলি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দিনে চন্দ্রভাগা নদীর জলপ্রবাহ অনেক কমে গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সিন্ধু এবং বিতস্তা নদীতে অবস্থিত পাকিস্তানের প্রধান দু’টি বাঁধে জলস্তর কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।

পাকিস্তানের ইন্ডাস রিভার সিস্টেম অথরিটি (আইআরএসএ) সম্প্রতি একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বিতস্তার উপর মংলা জলাধার এবং সিন্ধুর উপর তারবেলা জলাধারে সংরক্ষিত জল কমে এসেছে। এই দুই বাঁধে জলের পরিমাণ কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। আচমকা কমতে শুরু করেছে চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহ। পাকিস্তানের এই অঞ্চলে সার্বিক ভাবে জলপ্রবাহ ২১ শতাংশ কমেছে। এর ফলে পঞ্জাব এবং সিন্ধ প্রদেশে চাষবাসে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কারণ, ওই দুই জলাধারের জলই পঞ্জাব ও সিন্ধে সেচের কাজের প্রধান অবলম্বন। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনেও এই জল কাজে লাগানো হয়।

পাকিস্তানে এখন গ্রীষ্মকালীন বীজ বপনের মরসুম চলছে। ফলে তাতে জলের প্রয়োজন। এই পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেই আইআরএসএ ভারতের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারত থেকে সরবরাহ কম থাকার কারণে চন্দ্রভাগায় আচমকা জলপ্রবাহ কমে গিয়েছে। এর ফলে খারিফ মরসুমে জলাধারে জলের ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।’’ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জলাধারের জল ব্যবহারে আরও সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইআরএসএ। ‘বিচক্ষণতার সঙ্গে’ পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।

পাকিস্তানের ‘জল এবং বিদ্যুৎ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (ডব্লিউপিডিএ) সম্প্রতি একটি রিপোর্টে দাবি করেছে, দু’দিনে চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহ কমেছে ৯১ হাজার কিউসেক। ভারতের সিন্ধুচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তই এর নেপথ্যে রয়েছে, দাবি ইসলামাবাদের। পঞ্জাব প্রদেশের সেচ বিভাগের এক কর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘ভারত চন্দ্রভাগা নদীতে জলপ্রবাহ আটকে দিয়েছে। সেই জল ওরা নিজেদের বিভিন্ন বাঁধ বা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে মজুত করছে। ওরা আমাদের জল ব্যবহার করছে। এটা অন্যায়। ভারত এটা করতে পারে না!’’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফও একাধিক বার সিন্ধুচুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বার বার দাবি করেছেন, সিন্ধু এবং তার উপনদীর জলের উপর ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবন নির্ভর করে আছে। ভারতের এই সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা’ এবং ‘বেআইনি’ বলে উল্লেখ করেছেন শাহবাজ়।

পরিসংখ্যান বলছে, মংলা জলাধারের ধারণক্ষমতা ৫৯ লক্ষ একর ফুট। বর্তমানে সেখানে আছে ২৭ লক্ষ একর-ফুট জল, যা অর্ধেকেরও কম। তারবেলা জলাধারে ১.১৬ কোটি একর-ফুট জল থাকার কথা। আছে মাত্র ৬০ লক্ষ একর-ফুট (অর্ধেকের সামান্য বেশি)। যদিও বর্ষা আসন্ন। বর্ষার জল পড়লে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে তার জন্য আরও মাসখানেক অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জল ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কী ভাবে বণ্টিত হবে, তা ঠিক করতে ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে সিন্ধুচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এই চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘জল এবং রক্ত পাশাপাশি বইতে পারে না।’’ পাকিস্তান অবশ্য প্রথম থেকেই পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে যোগ অস্বীকার করেছে। তারা এই ঘটনার নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে। সংঘর্ষবিরতিতে দুই দেশ সম্মত হলেও ভারত সিন্ধুচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তে এখনও অনড়।

Indus Water Treaty Pakistan India Pakistan Conflict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy