Advertisement
১১ মে ২০২৪
Kozhikode

‘যাত্রী উদ্ধারই ছিল প্রথম কাজ, বিমানের টুকরো দশাটা নীচে নামার পর দেখলাম’

কোন্নগরের ছেলে শনিবার নিজেই জানালেন, বুকে সাহস নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে এর পরে অন্তত ৩৫ জন যাত্রীকে নামিয়ে নিয়ে এসেছেন ভেঙে পড়া বিমান থেকে।

ভেঙে পড়া বিমান। ইনসেটে অভীক বিশ্বাস।

ভেঙে পড়া বিমান। ইনসেটে অভীক বিশ্বাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ০৪:২৬
Share: Save:

ঘাবড়ে যাননি এতটুকু। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি আর তারপর সব অন্ধকার। বিমানের পিছনের অংশে, ‘রিয়ার গ্যালি’তে চেয়ারে সিটবেল্ট পরে বসেছিলেন ২৪ বছরের যুবক অভীক বিশ্বাস।

কোন্নগরের ছেলে শনিবার নিজেই জানালেন, বুকে সাহস নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে এর পরে অন্তত ৩৫ জন যাত্রীকে নামিয়ে নিয়ে এসেছেন ভেঙে পড়া বিমান থেকে। হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বাড়িতে বাবাকে ফোন করে শুধু বলেছেন, ‘‘ঠিক আছি। কিছু সমস্যা হয়েছে। তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।’’

এ দিন কোঝিকোড় থেকে ফোনে অভীক বলেন, “বাবা কিছুই জানত না। আমার কথা শুনে বলেন, কেন কী হয়েছে। আমি বললাম, আর কিছু বলব না। তোমরা টিভি দেখে নাও। টেনশন কোরো না। ভবানীপুরে দিদিকেও খবর পাঠাই। বিমানের পিছন দিকে ছিলাম বলেই বেঁচে গিয়েছি, আঘাতও তেমন লাগেনি।’’

আরও পড়ুন: নিজের জীবন দিয়ে অধিকাংশ যাত্রীর প্রাণ বাঁচালেন বায়ুসেনার পদকপ্রাপ্ত পাইলট​

শুক্রবার সন্ধ্যায় কেরলের কোঝিকোড়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের যে বিমানটি রানওয়ে থেকে বেরিয়ে গিয়ে ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে, অভীক ছিলেন সেই বিমানেই। গত তিন বছর ধরে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসে বিমানসেবকের কাজ করছেন তিনি। বেস স্টেশন কোঝিকোড়। অভীকের কথায়, “সে অর্থে তিন টুকরো হয়ে গিয়েছিল বিমান। ককপিটটা আগে বেরিয়ে গিয়েছিল। বাকি অংশটা দু’টুকরো। ঘটনার মিনিট পনেরোর মধ্যেই অবশ্য উদ্ধারকারীরা চলে আসেন।’’

অভীক জানান, দীপক শাঠের মতো এত অভিজ্ঞ পাইলট ছিলেন বলে তাঁরা ছিলেন নিশ্চিন্তে। কিন্তু রানওয়েতে নামার সময়েই বিকট শব্দে প্রচণ্ড ঝাঁকুনির পরে অন্ধকার হয়ে যায় বিমানের ভিতর। বোঝাই যাচ্ছিল, ভয়াবহ কিছু ঘটেছে। বিমানের ভিতরে তখন যাত্রীদের প্রবল আর্তনাদ। তাঁর কথায়, ‘‘ওই অবস্থায় আমাদের প্রথম কাজ ছিল, যাত্রীদের শান্ত করে, তাঁদের উদ্ধার করা। কয়েকটি ইমার্জেন্সি লাইট নিয়ে পিছনের দিকের দরজা খুলে দিই। এই ধরনের পরিস্থিতিতে একটি রবারের স্লিপ দরজা থেকে মাটিতে নেমে যায়। সেখান দিয়ে যাত্রীদের নামাতে থাকি। বুঝতে পারি, সাহস রাখতে হবে, সাহস জোগাতে হবে। নীচে নামার পর দেখলাম বিমানের টুকরো দশাটা।”

পরে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অভীকের প্রাথমিক চিকিৎসা, রক্ত পরীক্ষা, ব্রেথ অ্যানালিসিস হয়। তার পর কোঝিকোড়ে নিজের ফ্ল্যাটে চলে যান তিনি। কবে বাড়ি ফিরছেন? অভীক বলেন, “এখন আমাদের তদন্ত কমিটির সামনে বসতে হবে। তা শেষ না হলে বাড়ি তো যাওয়া যাবে না।”

আরও পড়ুন: কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত দুই যাত্রীর কোভিড পজিটিভ, নিভৃতবাসে যেতে বলা হল উদ্ধারকারীদের​

গর্বিত বাবা-মাও ছেলের বাড়ি আসা নিয়ে এখন ভাবছেন না। কোন্নগরে সিএস মুখার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে বসে বাবা অজয় বলেন, ‘‘ছেলের কাজে গর্ব তো হচ্ছেই। তবে, এটা ওর ডিউটি।’’ আর মা ভারতীর কথায়, ‘‘ছেলে যে অন্যদের বাঁচিয়েছে, এটা বিরাট পাওনা। ভবিষ্যতেও যেন এ ভাবে অন্যকে রক্ষা করতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kozhikode Plane Crash Air India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE