অটুট বন্ধুত্ব। একসঙ্গেই থাকত সর্বক্ষণ। গুজরাতে গির জাতীয় উদ্যানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত দু’জনে। নাম ছিল জয়-বীরু। সম্ভবত তাদের বন্ধুত্ব দেখেই ‘শোলে’ সিনেমার দুই চরিত্রের অনুকরণে তাদেরও নামকরণ করা হয়েছিল। কিছু ক্ষণের জন্য আলাদা হতেই মৃত্যু হল গিরের সেই দুই সিংহের।
গত মাসে দু’টি পৃথক ঘটনায় গুরুতর জখম হয় জয় এবং বীরু। জঙ্গলের দুই আলাদা জায়গায় এলাকা দখল নিয়ে অন্য সিংহদের সঙ্গে লড়াই হয়েছিল তাদের। গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের। কিন্তু লড়াইয়ের কয়েক দিন পরেই গত ১১ জুন মৃত্যু হয় বীরুর। গত মঙ্গলবার মৃত্যু হল জয়েরও। গুজরাতের অতিরিক্ত মুখ্য বনসংরক্ষক এবং মুখ্য বন্যপ্রাণ ওয়ার্ডেন জয়পাল সিংহ জানান, এই দু’টি সিংহ গির জাতীয় উদ্যানের গর্ব ছিল। তিনি বলেন, “বীরু গুরুতর জখম হওয়ার কয়েক দিন পরেই মারা যায়। মঙ্গলবার জয়েরও মৃত্যু হয়। (লড়াইয়ের পরে) দু’টি সিংহকেই উদ্ধার করা হয়েছিল। আমরা ওদের বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি।”
গির জাতীয় উদ্যানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঘুরে বেড়াত জয়-বীরু। এই দুই সিংহকে দেখার জন্যই অনেকে গির জাতীয় উদ্যানে সাফারিতে যেতেন। গত মার্চ মাসে বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবসে গিরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় এই দুই সিংহের কথা উঠে আসে মোদীর মুখেও। গুজরাতের সাসন-গির বন্যপ্রাণ বিভাগে উপ বনসংরক্ষক মোহন রাম জানান, এই দুই প্রাপ্তবয়স্ক সিংহের সঙ্গে প্রায় ১৫টি সিংহী থাকত। তিনি বলেন, “এই দুই সিংহের এলাকা অনেক বড় ছিল। পর্যটকদের ঘোরার জায়গা থেকে শুরু করে যেখানে পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ এলাকা, তৃণভূমি থেকে বনাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল তাদের এলাকা।” যখন অন্য সিংহের সঙ্গে এলাকা দখলের লড়াই হয়েছিল, তখন জয়-বীরু একসঙ্গে ছিল না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
রাজ্যসভার সাংসদ তথা বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ পরিমল নাথওয়ানির কথায়, “জয়-বীরুর বন্ধুত্বকে যাঁরা দেখেছেন, বা যাঁরা তাদের গল্প শুনেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের কাছে এই দুই সিংহের মৃত্যু বেদনাদায়ক।” জয়-বীরুকে ছাড়া গির আর আগের মতো থাকবে না বলেই মনে করছেন তিনি।