গোবিন্দ, গোপাল, অর্চনাদেবীর সঙ্গে কাছাড়ের জেলাশাসক। ছবি: সানি গুপ্ত।
শিলচর সংশোধনাগারের কর্মীর অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশ থেকে টাকা আসত— বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সময় এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন আনোয়ার হোসেন।
২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর কাজের সন্ধানে করিমগঞ্জে এসে ধরা পড়েছিলেন জকিগঞ্জের ওই যুবক। করিমগঞ্জের জেলে ছিলেন ৬ মাস। পরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পে। তাঁর কথায়, ‘‘সেখানে যাওয়ার পর প্রথম কিছু দিন মারাত্মক সমস্যা হচ্ছিল। অতি নিম্নমানের খাবার। মুখে তোলা যায় না। পরে দেখা যায়, সবই টাকার খেলা। টাকা দিলে জেলের ভেতরে কি-না হয়! গাঁজা-মাদক সবই মেলে।’’
আনোয়ারের অভিযোগ, ‘‘মোবাইলে যে কেউ যখন-তখন ভিতর থেকে ফোন করতে পারেন।’’ তিনিও কিছুদিন কাটানোর পর সেই সুযোগ পেয়ে যান। বাংলাদেশের নম্বরে প্রায়শই ফোন করতেন আনোয়ার হোসেন। কারাগার কর্মীদের কল-রেকর্ড দেখলে তার প্রমাণ মিলবে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, অনেক বার শিলচর কারাগারের এক কর্মীর অ্যাকাউন্টে তাঁর বাড়ি থেকে টাকা পাঠানো হয়েছে। শর্ত একটাই, ৩০ শতাংশ কমিশন হিসেবে কেটে রাখবেন ওই কারাকর্মী। তাঁর অভিযোগে সুর মিলিয়ে এনাম উদ্দিন, শামিম আহমেদরাও জানান— ভাল খাবারের জন্য মাসে মাথাপিছু ৪ হাজার টাকা করে দিতে হয়। তাঁরা টাকা দিতে পারবেন না বলে রান্নার কাজে লেগে যান। সেই সূত্রেই মুখে তোলার মতো খাবারের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু কত জন আর সেই সুযোগ পান! তাঁরা খাবার নিয়ে আপত্তি করলেই শারীরিক নিগ্রহের শিকার হন। কারা কর্তৃপক্ষ নিজে কিছু বলেন না। কয়েদিদের দিয়েই মারধর করান। তাঁরা ডিটেনশন ক্যাম্পে পড়ে থাকা অন্য বন্দিদের জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। তবে করিমগঞ্জের কারাগারে শিলচরের মতো দুর্নীতি নেই বলে জানান আনোয়ার হোসেন, আলি হুসেনরা।
ভারতীয় কারাগারের দুর্নীতি নিয়ে বাংলাদেশিরা মুখ খোলায় বিভিন্ন মহল থেকে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি উঠেছে। তাঁদের কথায়, ‘‘বহিঃরাষ্ট্র থেকে টাকা আসা, নিয়মিত ভারতের জেল থেকে মোবাইলে বাংলাদেশে কথা বলা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।’’ তবে শিলচরের জেল সুপার এইচসি কলিতা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘বেরিয়ে গিয়ে কতজনই কত কথা বলে! প্রকৃতই অভিযোগ থাকলে শিলচরে তা বলতে পারতেন। কাছাড়ের জেলাশাসক তাঁদের নানা কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। তাঁরা বরং জেলের কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের প্রশংসা করেছেন।’’ কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন জানিয়েছেন, এই অভিযোগ তিনি খতিয়ে দেখবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy