সরকারি লাইসেন্স মিলেছে বটে, কিন্তু দেশি মদেরই সরবরাহ নেই বরাক উপত্যকায়। এতে বিপাকে পড়েছেন ৪০ জন বিক্রেতা।
তাঁরা জানান, লাইসেন্স পাওয়ার জন্যও কম ঝক্কি হয়নি। লাইসেন্স ফি-সহ কত নীতিনিয়ম। এখানে টাকা, ওখানে টাকা। লাইসেন্সের শর্ত ছিল, ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্দিষ্ট জায়গায় তাঁরা ব্যবসা করতে পারবেন। কিন্তু লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকে মদ সরবরাহ নিয়েই চলছে টালবাহানা। কয়েক দিন মদের জোগান মেলে, কয়েক দিন বন্ধ। গত দেড় বছর ধরে একেবারেই তা মিলছে না। ঘরভাড়া, দোকানের কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীর বেতন— সব মিলিয়ে লোকসানের বহর বেড়ে চলেছে।
আবগারি দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, দরপত্র ডেকে যে সংস্থাকে দেশি মদ সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা সে কাজে ব্যর্থ হয়েছে। এখন নতুন সরবরাহকারীর খোঁজ চলছে। দেশি মদ ব্যবসায়ীদের তরফে করিমগঞ্জের নিলামবাজারের বিশু দাস জানান, ২০১৩ সালের ১ জুলাই তাঁরা এ সংক্রান্ত লাইসেন্স হাতে পান। ৪৮ জনকে তিন বছরের জন্য বাছাই করা হলেও, ৮ জন পরে ব্যবসা ছেড়ে দেন। ২০১৩ সালের ১ জুন ব্যবসা শুরু। দু’মাস সব ঠিকঠাক চলেছিল। পরে আবগারি বিভাগ দু’মাসের জন্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ছ’মাস ফের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে দেশি মদের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ। শিলচরের তারাপুরের গুদাম আর খোলাই হয়নি। দু-তিনজন চালান কেটে টাকা জমিয়ে না পাচ্ছেন মদ, না ফেরত পাচ্ছেন টাকা।
বিশুবাবুর অভিযোগ, গত ১৪ মাসে তাঁরা জেলাশাসক থেকে শুরু করে আবগারি সচিব, মুখ্যসচিব ও বিভাগীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। কোথাও সুরাহা মেলেনি। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু যে আমাদেরই পথে বসার মতো অবস্থা তা নয়, এ জন্য মাসে রাজ্য সরকার অন্তত ১২ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।’’
আবগারি মন্ত্রী অজিত সিংহ বরাক উপত্যকার মানুষ। নিজের এলাকার এই সমস্যা সমাধানে তিনি উদ্যোগী নন বলে দেশি মদের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা জানান, রাজ্যে চারটি গুদাম রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের তিনটি যথারীতি চললেও বন্ধ রয়েছে বরাক উপত্যকার গুদাম।
অভিযোগ, উপত্যকা জুড়ে কোথাও দেশি মদ না পাওয়ায় চোলাই মদের রমরমা বেড়ে গিয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা বাড়ছে। হাইলাকান্দি জেলার সিঙ্গালা চা বাগানের গ্রামরক্ষী বাহিনীর সম্পাদক ক্ষিতীশ নুনিয়া বলেন, ‘‘দেশি মদের দোকান নির্দিষ্ট সময় খোলা থাকে বলে ক্রেতাদের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা যায় না। কিন্তু চোলাই মদ বেড়ে যাওয়ায় যখন-তখন মদ খেয়ে লোকেরা হল্লা করেন। বিশেষ করে, চা বাগান এলাকায় সমস্যা বেড়ে চলেছে। ঝগড়া-বিবাদ লেগেই রয়েছে।’’
আবগারি বিভাগের পক্ষ থেকেও চোলাই মদের ব্যবসা বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স দেওয়ার পরও মদ সরবরাহ করতে না পারার দায় তারা চাপিয়েছেন সরবরাহকারী সংস্থার উপর। এক আবগারি কর্তা জানিয়েছেন, ১৮ মাস ব্যবসা করতে না পারার লোকসান মেটাতে রাজ্য সরকার তাঁদের লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে পারে।