Advertisement
E-Paper

সেনার ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কুলগাম

সংঘর্ষের আগে যত বেশি সম্ভব স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে দেওয়াই বাহিনীর অভিযানের নীতি। কিন্তু রবিবার দক্ষিণ কাশ্মীরে কুলগামের লারু গ্রামে বাহিনী সেই নীতি মানেনি বলেই অভিযোগ তুললেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৫২
সফর: শ্রীনগরে রাজনাথ সিংহ। মঙ্গলবার। পিটিআই

সফর: শ্রীনগরে রাজনাথ সিংহ। মঙ্গলবার। পিটিআই

সংঘর্ষের আগে যত বেশি সম্ভব স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে দেওয়াই বাহিনীর অভিযানের নীতি। কিন্তু রবিবার দক্ষিণ কাশ্মীরে কুলগামের লারু গ্রামে বাহিনী সেই নীতি মানেনি বলেই অভিযোগ তুললেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, সেই নীতি মানা হলে শেল ফেটে সাত জন নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।

পুলিশের দাবি, সংঘর্ষের পরে ঘটনাস্থলে যেতে নিষেধ করেছিল বাহিনী। তা সত্ত্বেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ কুলগামের লারু গ্রামে যে বাড়িতে জঙ্গিরা লুকিয়েছিল সেটির চারপাশে জড়ো হন। সংঘর্ষের পরে বাড়িটিতে আগুন লেগে গিয়েছিল। বাসিন্দারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। সেই সময়ে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা একটি শেল ফেটে সাত জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে তিন জন ছাত্র। মহম্মদ মুকিম ও উজেইর আহমেদ দ্বাদশ ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। অন্য দিকে তালিব মকবুল লাওয়ে পড়ত কুলগাম গভর্নমেন্ট কলেজে। ইরশাদ আহমেদ সম্প্রতি কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল।

সাত জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর জেরে প্রশাসন তথা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তাতে সমর্থন রয়েছে কার্যত গোটা কাশ্মীরি সমাজের।

দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া মুকিমের মৃত্যুটা এখনও মেনে নিতে পারছেন না তার বাবা হাফিজ বাট। বললেন, ‘‘কয়েক দিন পরেই ওর পরীক্ষা ছিল। বা়ড়িতে বসে পড়ছিল। সকাল ন’টা নাগাদ গুলির আওয়াজ থেমে গেল। ও আর ওর ভাই আদনান দেখতে গেল কী হয়েছে। আর ফেরেনি।’’ হাফিজ জানিয়েছেন, ভাল ছাত্র ছিল মুকিম। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ভাল ফল করেছিল। ইচ্ছে ছিল অনেক দূর পড়াশোনা করার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সাধারণত সংঘর্ষ হলে যত বেশি সম্ভব বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দেয় বাহিনী। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমনটা করা হয়নি। আবার এখন জনতার পাথর ছোড়ার জেরে সংঘর্ষের পরে বাহিনী ঘটনাস্থল বিপন্মুক্ত করার কাজও ঠিক মতো করে না বলে দাবি তাঁদের। তবে লারু ও তার লাগোয়া গ্রাম শুরাটের বাসিন্দাদের দাবি, এ ক্ষেত্রে অনেক পরে পাথর ছোড়া শুরু হয়েছিল। তাই ঘটনাস্থল বিপন্মুক্ত করার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিল বাহিনী। কিন্তু তারা আগ্রহই দেখায়নি। তাঁদের দাবি, স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘শিক্ষা’ দিতে ইচ্ছে করেই এ
কাজ করা হয়েছে।

সেনা ও পুলিশের অবশ্য দাবি, লারুতে জঙ্গিরা হঠাৎ বাহিনীর উপরে হামলা চালানোয় বাসিন্দাদের সরানোর সুযোগ পাওয়া যায়নি। সংঘর্ষ চলাকালীন বাসিন্দাদের সরাতে গেলে আরও বেশি প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। সে জন্য বাসিন্দাদের বাড়ির রান্নাঘরের মতো জায়গায় শুয়ে থাকতে বলা হয়েছিল। বাহিনী অনুমতি দেওয়ার আগে সংঘর্ষস্থলে যেতে স্থানীয় বাসিন্দাদের বার বার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু লারু ও শুরাটের বাসিন্দারা সেই নিষেধ মানেননি।

আজ কাশ্মীর সফরে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কুলগামে শেল ফেটে মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের কাছে আমার আবেদন, সংঘর্ষের পরে ঘটনাস্থলে যাবেন না।’’ এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আর্জি জানান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। বৈঠকের পরে রাজনাথ বলেন, ‘‘ভারত সব সময়েই আলোচনার জন্য তৈরি। কিন্তু সন্ত্রাস আর আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।’’

শেল ফেটে মৃত্যুর জেরে এ দিনও কাশ্মীরে বিপর্যস্ত হয় জনজীবন। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা লাল চকে ধর্নার ডাক দিয়েছিল। তা রুখতে লাল চকের ঘণ্টা ঘরের কাছাকাছি সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাল চকের কাছে কোকের বাজারে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে আটক হন হুরিয়ত নেতা ইয়াসিন মালিক। অন্য হুরিয়ত নেতারা গৃহবন্দি।
রাজভবনের দিকে মিছিল করে যাওয়ার সময়ে চার ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শ্রীনগরের অনেক এলাকাতেই আজও বন্ধ ছিল দোকানপাট, বেসরকারি সংস্থার অফিস।

Indian Army Blame Encounter Kulgam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy