Advertisement
E-Paper

কৃষি তলানিতে, তবে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি চলছে

গত পাঁচ বছরে প্রতিশ্রুতি ছিল অনেক। সেচ ব্যবস্থার উন্নতি করে কৃষকদের জমিতে জলের ব্যবস্থা করা হবে। ভেঙে যাওয়া ছোট ছোট ড্যামগুলি সারাই করা হবে।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১০
জলের অভাবে চাষের জমি ফুটিফাটা। দেখাচ্ছেন যমুনা সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

জলের অভাবে চাষের জমি ফুটিফাটা। দেখাচ্ছেন যমুনা সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

লাতেহার থেকে পলামু যাওয়ার পথে প্রধান রাস্তা থেকে নেমে ডান দিক অথবা বাঁদিকের সরু রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে চাতরা লোকসভার চুড়িয়া, বেদি, হেহেগোরা—ছোট ছোট গ্রাম। দুপুরের গনগনে রোদে ঝুম মেরে রয়েছে গ্রামগুলি। আচমকাই প্রচার ভ্যানের মাইকের আওয়াজে সচকিত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। চাতরার বিজেপি প্রার্থী সুনীল সিংহের সমর্থকরা আওয়াজ তুলছেন ‘ফির একবার/মোদী সরকার।’

গত পাঁচ বছরে প্রতিশ্রুতি ছিল অনেক। সেচ ব্যবস্থার উন্নতি করে কৃষকদের জমিতে জলের ব্যবস্থা করা হবে। ভেঙে যাওয়া ছোট ছোট ড্যামগুলি সারাই করা হবে। কৃষকরা পাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘কৃষাণ সম্মান নিধি’ প্রকল্পের সব ধরনের সুবিধা। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের কৃষকরা তাদের পাওয়া, না-পাওয়ার হিসেব কষতে গিয়ে বলেই ফেলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সব সময় কৃষকদের পাশে আছেন বলে দাবি করেন। কৃষকদের জন্য প্রকল্পও করছেন। তা হলে আমাদের এই অবস্থা কেন!’’

চাতরা লোকসভা কেন্দ্রের বেশির ভাগ গ্রামের মানুষই কৃষি-নির্ভর। কারও ১০ একর, কারও ২০ একর, কারও বা রয়েছে আর একটু বেশি জমি। বেদি গ্রামের এমনই এক কৃষক, হাসমত আনসারির কথায়, ‘‘সারা বছরে একবার ধান চাষই করি। চাষের জন্য উপরওয়ালাই ভরসা। বৃষ্টি হলে ভাল। না হলে মাথায় হাত। এখানে সেচের অন্য কোনও ব্যবস্থাই হয়নি। তাই একাধিক ফসল তো স্বপ্ন।’’ হাসমত জানান, ধান বাদেও সারা বছর নানা ধরনের আনাজ ফলাবেন, এই আশায় কয়েকজন বন্ধু মিলে ঋণ নিয়ে কিনে ফেলেছিলেন একটা ট্রাকটর। সেই ট্রাকটর কোনও কাজেই এলো না। ট্রাকটরের চাকা পাংচার হয়ে বহুদিন পড়ে রয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গত বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় একর পিছু ১৮ থেকে ২০ কুইন্ট্যাল ধান হয়েছিল। ওই গ্রামেরই কয়েকজন কৃষকের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর ‘কৃষক সম্মান নিধি’ প্রকল্প অনুযায়ী বছরে তিন দফায় ছ’হাজার টাকা পাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্প থেকে কোনও টাকা তাঁরা পাননি। ওপাগ গ্রামের কৃষক যমুনা সিংহ বলেন, ‘‘বৃষ্টি না হওয়ায় আমার ১০ একর ধান নষ্ট হয়েছে গত বছর। এ বারও যদি বৃষ্টি কম হয়, তাহলে ঋণের বোঝাই বাড়বে।’’

আগামী ২৯ এপ্রিল চাতরায় ভোট। খরা প্রবণ এই চাতরা লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী সুনীল সিংহের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের মনোজ যাদব। তবে এলাকার মানুষদের মতে, মনোজ নন, বিজেপি প্রার্থী সুনীলের গলার কাঁটা বিজেপি থেকেই বেরিয়ে এসে নির্দলের হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া রাজেন্দ্র প্রসাদ সাহু। ভোট কেটে সুনীলবাবুর দিল্লি যাত্রায় বাগড়া দিতে পারেন তিনিই। রাজেন্দ্রবাবু চাতরার জনপ্রিয় নেতা হওয়ায় তাঁকে বেশ শক্তিশালী প্রার্থী বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

চাতরার বাসিন্দা রঘু প্রধানের কথায়, ‘‘শুধু ভোট কাটাকাটির অঙ্কই নয়, কোনও ক্ষেত্রেই আশানুরূপ পরিষেবা পাননি চাতরার মানুষ। সব থেকে উপেক্ষিত কৃষকরা। প্রায় প্রতিবছর চাতরা জেলাকে হয় খরাপ্রবণ নয় তো খরা-কবলিত ঘোষণা করা হয় । কৃষকরা ঋণে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বিজেপির জনজাতি জমি নীতি নিয়েও প্রচুর ক্ষোভ। এ সবই বিজেপি প্রার্থীকে সামলাতে হবে। যদিও সুনীলবাবুর মতে, ‘‘এখানকার মানুষ বিজেপিকেই চায়। চাতরার প্রত্যন্ত গ্রামে পাকা রাস্তা হয়েছে। তৈরি হয়েছে বেশ কিছু নদী-সেতু। গরিব মানুষ পাকা ঘর পেয়েছেন। জমিতে সেচের কাজও শুরু হচ্ছে।’’

Politics Sunil Singh Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy