Advertisement
E-Paper

কানহাইয়াকে ঘিরে ভিড়, মোদী আর ‘দেশপ্রম’ সহায় গিরিরাজের

ছোটখাটো চেহারা, পরনে জিনস আর অলিভ-সবুজ রঙের পুরোহাতা শার্ট। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতিকে ঘিরে তখন নতুন ভোটারদের ভিড়।

দেবব্রত ঠাকুর

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৪
কানহাইয়া কুমার।

কানহাইয়া কুমার।

জেলা সদর বেগুসরাইয়ের মীরগঞ্জে, পটেল চক থেকে বাঁদিকে ঘুরে দু’-তিনটে বাড়ি পরেই ‘এল’ আকৃতির দোতলা বাড়ি। রাস্তায় গাড়ির সারি। বিশাল গেটের উপরে লেখা ‘ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি, বেগুসরাই’। গেট দিয়ে ঢুকতেই সামনে বড় চত্বর। সেখানেও দাঁড়িয়ে দু’টি গাড়ি। চত্বর থেকে নীচের তলা, সিঁড়ি থেকে উপরের টানা বারান্দায় থিকথিকে ভিড়। ভিড়ের বয়স গড়পড়তা আঠারো থেকে তিরিশ। অধিকাংশের পিঠেই ব্যাকপ্যাক।

ভিড় ঠেলে পায়ে পায়ে উপরের বারান্দায়। মুখোমুখি এক বয়স্ক ভদ্রলোকের। যেন কতদিনের পরিচয়! জানতে চাইলেন, কেমন আছি। পরিচয় দিতেই নিয়ে গেলেন অন্য একটি ঘরের দিকে। ভিতরে মিটিং চলছে। ভিড়ে ঠাসা বারান্দায় দাঁড়িয়ে। মিনিট পনেরো পরে সেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন কানহাইয়া কুমার। বেগুসরাইয়ের সিপিআই প্রার্থী।

ছোটখাটো চেহারা, পরনে জিনস আর অলিভ-সবুজ রঙের পুরোহাতা শার্ট। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতিকে ঘিরে তখন নতুন ভোটারদের ভিড়। সেই ভিড় ঠেলেঠুলে বাঁ হাতে চেপে ধরেছিলাম তাঁর কনুই। কলকাতা থেকে এসেছি। ‘পত্রকার’। সংক্ষিপ্ত পরিচয় পর্বে তাঁর মুখে সেই হাসি, ‘‘বোলিয়ে দাদা! বহুত বিজি শিডিউল হ্যায়। অব জায়েঙ্গে উজিয়ারপুর। আজ তিন মিটিং ভি হ্যায়।’’ কেমন বুঝছেন? তৎক্ষণাৎ উত্তর, ‘‘জিৎ নিশ্চিত হ্যায় দাদা। ইয়াং ভোটার আমার সঙ্গেই আছে। দেখছেন তো! এরা সবাই যে পার্টি করে তা নয়।’’

আজ কোথায় কোথায় ভোট, দেখে নিন

বেরিয়ে গেলেন কানহাইয়া। সঙ্গে বেরিয়ে গেল সেই ভিড়। বারান্দা খালি হতে পায়ে পায়ে সেই মিটিং কক্ষেই। টেবিলের এ পাশে এক তাড়া কাগজপত্র নিয়ে বসে অবধেশবাবু, অবধেশ রায়। ঘরের সব চেয়ারই ভর্তি। পরিচয় দিতেই পাশের চৌকিতে আধশোয়া এক ভদ্রলোক সরে গিয়ে বসার জায়গা করে দিলেন। অবধেশবাবু বললেন,‘‘জানেন তো বেগুসরাইকে বলে উত্তর ভারতের লেনিনগ্রাদ। ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে ভূমিহীনদের লাগাতার লড়াইয়ের কারণেই এই নাম। কমিউনিস্ট আন্দোলনের সেই ঐতিহ্য আমরা এখনও বহন করছি।’’

ইতিমধ্যে ঘরে ঢুকলেন নাসিমা বানু। সিপিআইয়ের দখলে থাকা একটি পঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সন তিনি। টেবিলের অপর প্রান্তে বসা এক সৌম্য বৃদ্ধ অন্যদের জানালেন, নাসিমা কানহাইয়ার মনোনয়নের অন্যতম প্রস্তাবক। বললেন, ‘‘এক ভূমিহার, এক মুসলিম, এক যাদব আর এক দলিত— এই চার প্রোপোজার ও সেকেন্ডার কানহাইয়ার মনোনয়নের জন্য বাছাই করা হয়েছিল।’’ বিহারের সেই জাতপাত! জানা গেল, বৃদ্ধের নাম শত্রুঘ্ন প্রসাদ সিংহ। ১৯৯৬ সালে বেগুসরাই থেকে সিপিআইয়ের শেষ সাংসদ। তাঁর পাশেই দলের আর এক ‘পূর্ব্’ সাংসদ রামেন্দ্র কুমার। প্রাক্-ডিলিমিটেশন পর্বে, ১৯৯৬ সালেই বালিয়া (বিহারের বালিয়া) থেকে নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় যান রামেন্দ্রবাবু। ২২ বছর পরে ফের জয়ের আশায় এঁরা সকলেই বেশ চনমনে।

কথা হচ্ছিল পটেল চকের একটি ঘড়ির শো-রুমের মালিক উপেন্দ্র পণ্ডিতের সঙ্গে। পদবী পন্ডিত হলেও ব্রাহ্মণ নন, ওবিসি। জল-চা খাইয়ে উপেন্দ্রবাবু বললেন, ‘‘দেখুন কানহাইয়া এক নম্বর, দু’নম্বর নাকি তিন নম্বর হবেন তা জানি না। তবে এই ছেলেটি বেগুসরাইয়ে প্রার্থী হওয়ায় এখানে কমিউনিস্টরা দীর্ঘ দিন পরে বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।’’ এমনিতে প্রায় ১৮ লক্ষ ভোটারের এই আসনে সিপিআইয়ের নিজস্ব ভোট এক লক্ষ নব্বই হাজারের কাছাকাছি। যিনিই প্রার্থী হোন না কেন, কমবেশি এই রকম ভোট তিনি পেয়ে থাকেন। এ বার গরিব ‘ভূমিহার’ ছাত্রনেতা কানহাইয়া প্রার্থী হওয়ায় সেই ভোট বাড়বেই। কিন্তু জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট তিনি পাবেন কি না, তা লাখ টাকার প্রশ্ন। আর গিরিরাজ সিংহ? উপেন্দ্রবাবুর বক্তব্য, ওঁর বড় সহায় ‘মোদী’।

ঠিক সেই সময়েই রাস্তা দিয়ে গেল বিশাল ‘জলুস’, বাইক, গাড়ির মিছিল। ‘মহাগটবন্ধনে’র প্রার্থী তনভির হোসেন মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাচ্ছেন। এর আগে দু’-দু’বারের হারা প্রার্থী। এ বার কংগ্রেসের সমর্থন থাকায় জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। উপেন্দ্রবাবুর আক্ষেপ, ‘‘কানহাইয়া যদি মহাগটবন্ধনের সমর্থন পেত তবে এখনই আপনাকে বলে দিতাম কানহাইয়া জিতছে।’’

উপেন্দ্রবাবুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সওয়ার হই এক টোটোয়। চালকের পাশে বসতেই গম্ভীর প্রশ্ন, বহিরাগত? কলকাতা শুনেই জানালেন কালীঘাটে, মমতাদিদির বাড়ির কাছেই তাঁর ‘বুয়া’র বাড়ি। নাম কৈলাস পোদ্দার। জাতে বানিয়া। সাকিন বন্ধুয়া। বেগুসরাই থেকে ১২ কিলোমিটার।

ভোটের কথা পাড়তেই কৈলাসবাবু শোনালেন, মূল সড়ক থেকে তাঁর গ্রামে যাওয়ার পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা গত তিরিশ বছর ধরে একেবারেই ভাঙাচোরা, জলকাদায় ভর্তি। বাড়িতে কুটুম আসতে চাইত না। ভিন গ্রামের মানুষ বিয়ের সম্বন্ধ করেও তা ভেঙে দিত এই রাস্তার জন্য। একবার ভোট বয়কটও করে গ্রামের প্রায় সাড়ে বারো হাজার ভোটার। কোনও ফল হয়নি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গত বিধানসভা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী অমিতা ভূষণ কৈলাসবাবুদের বলেন, জিতুন বা হারুন, রাস্তা তিনি করে দেবেন। গ্রামের মাথারা বসে আলোচনা করে তাঁকেই ভোট দেন। তিনি এখন বেগুসরাইয়ের বিধায়ক। এবং রাস্তা তিনি করে দিয়েছেন। কিস্সা শেষ করে কৈলাসবাবুর বক্তব্য, এরপরে বন্ধুয়া বেইমানি তো করবে না। কংগ্রেসকেই ভোট দেবে। তারপরেই বললেন, কংগ্রেস প্রার্থী তো নেই, তাই কংগ্রেস সমর্থিত আরজেডি প্রার্থী তনভিরই পাবেন ওই সাড়ে বারো হাজার ভোট। বেগুসরাই যেমন কমিউনিস্টদের ‘লেনিনগ্রাদ’, তেমনই একদা কংগ্রেসের গড়। কংগ্রেস নেতা এল পি শাহি, কৃষ্ণা শাহির খুবই প্রভাব ছিল। কৃষ্ণা শাহি দু’বার এখানকার সাংসদও ছিলেন। সে দিক থেকে বিজেপি হাল আমলের পার্টি।

তবু ওই যে, ‘দেশপ্রেম’ ট্যাগলাইনে গিরিরাজের ‘মোদী সহায়’!

Lok Sabha Election 2019 general-election-2019-national লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Kanhaiya Kumar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy