Advertisement
E-Paper

‘বন্ধু’ রাজার কথা তুলতেই ম্যাডামের দৃষ্টি স্থির!

এলাকার মানুষ অর্থাৎ সান্দেরগিরি, কাটনায়কমপট্টি, মানথিথোপ্পুর বাসিন্দারা কী বুঝলেন কে জানে, সমবেত ভাবে মাথা নাড়তে শুরু করলেন।

তুতিকোরিন

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৯
রাতের সভায় গ্রামে কানিমোঝি।

রাতের সভায় গ্রামে কানিমোঝি।

সদ্য পিচ ঢালা রাস্তা। গাড়ির চাকায় পিচ জড়িয়ে চিড়চিড় শব্দ হয়েই চলেছে। নির্বাচনের মুখে রাস্তায় এ ভাবে পিচ ঢালল কে? প্রশ্ন করতেই গ্রামের মানুষ মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। শেষ পর্যন্ত যেটা শোনা গেল, ম্যাডামের ‘রোড শো’ আছে পরপর সব গ্রামে। সার দিয়ে গাড়ি ঢুকবে। রাস্তা একটু পাকা না করলে হয়! অতএব দু’ দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে পিচ ঢালা।

ম্যাডাম অর্থাৎ মুথুভেল করুণানিধি কানিমোঝি। স্থানীয় ডিএমকে নেতারা বলেছেন, ‘‘ম্যাডাম কিন্তু আমাদের কিছু করতে বলেননি। আমরা কিছু করিওনি। এলাকার মানুষ কোথা থেকে কী এনে ঢেলেছেন কে জানে।’’

এলাকার মানুষ অর্থাৎ সান্দেরগিরি, কাটনায়কমপট্টি, মানথিথোপ্পুর বাসিন্দারা কী বুঝলেন কে জানে, সমবেত ভাবে মাথা নাড়তে শুরু করলেন। আচমকাই বিভিন্ন বাড়ি থেকে খালি গায়ে হাঁটু পর্যন্ত ধুতি গুটিয়ে বেরিয়ে এলেন এক দল পুরুষ। গলায় ঢোল। শুরু হল উদ্দাম বাজনা। হাতে ডিএমকে-র পতাকা নিয়ে সার সার দাঁড়িয়ে পড়ল ছেলেমেয়েরা। যাদের বয়স চার থেকে দশের ভিতরে। রাত তখন প্রায় ৯টা। স্কুল-পড়ুয়া শিশুদের রাজনৈতিক মিছিলে শামিল করা নিয়ে কত বিতর্কই হয়েছে কলকাতায়! তামিলনাড়ুর বন্দর এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামে ওই রাতে স্কুলপড়ুয়া শিশুদের রোড শো-য়ে শামিল করা নিয়ে প্রতিবাদ করার অবশ্য কেউ ছিলেন না।

রোড শো-য়ে শিশুরা।

নির্দিষ্ট সময়ের ঘণ্টাখানেক পরে তিনি এলেন। রীতিমতো হোমওয়ার্ক করে আসছেন বোঝাই গেল। বিভিন্ন গ্রামে বাসিন্দাদের কয়েক জনের নাম ধরে তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন। যেমন কথা বললেন সান্দেরগিরি গ্রামের একমাত্র কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ঈশ্বরীর সঙ্গে। বললেন, ‘‘ভাল করে পড়ো। বড় চাকরি করতে হবে।’’ জনতা তো আপ্লুত।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গাড়ি এগিয়ে চলল পরের গন্তব্যে। জনতাও যত দূর সম্ভব ছুটল গাড়ির পিছন পিছন। দেখে কে বলবে, এই মহিলাই ‘টু জি স্পেকট্রাম’ কেলেঙ্কারির অভিযুক্ত হিসেবে তিহাড় জেলে কাটিয়েছেন বহু দিন। স্থানীয় ব্যবসায়ী সিন্ধিল কুমারন বলছিলেন, ‘‘মানুষের স্মৃতি বড়ই ক্ষণস্থায়ী। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ টু জি-থ্রি জি বোঝেন না। কলাইনারের মেয়ে তাঁদের ঘরের দরজায় আসছেন, এর চেয়ে বড় তাঁদের কাছে আর কী হতে পারে?’’ কলাইনার অর্থাৎ করুণানিধি। তামিলে এই শব্দের অর্থ শিল্পী।

রাজ্যসভার সদস্য হলেও এই প্রথম দলের হয়ে প্রত্যক্ষ নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন কানিমোঝি। ইতিমধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে এডিএমকে। অভিযোগ, প্রচার চলাকালীন সাধারণ মানুষের মধ্যে নাকি তাঁর তরফে টাকা বিলি করা হয়েছে। এডিএমকের নির্বাচন শাখার ডেপুটি সেক্রেটরি আই এস ইনবাদুরাই বললেন, ‘‘কী ভাবে উনি জিততে চাইছেন, সবাই দেখছেন। মানুষ ভুল করবে না।’’

সাধারণ মানুষ কেন, ভুল তো করে ফেলেছেন এডিএমকের এক প্রার্থীই। তুতিকোরিনে কানিমোঝির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি প্রার্থী (এডিএমকের নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের শরিক) তামিলিসাই সৌন্দররাজন। তাঁর হয়ে ভোট চাইতে গিয়ে পি চিন্নাপ্পন (যিনি আসন্ন উপ নির্বাচনে প্রার্থীও) এক সভায় বেমালুম বলে দিয়েছেন, ‘‘আম্মার আশীর্বাদ নিয়ে আপনারা কানিমোঝিকে ভোট দিন।’’ ভরা জনসভায় স্তব্ধতা। দু’ তিন সেকেন্ডেই ভুল শুধরে ছিলেন চিন্নাপন। ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। হাসতে হাসতে কানিমোঝি যেমন বললেন, ‘‘বিরোধী দলও তো আমার হয়ে প্রচার করছে।’’

দুই নারীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এ বার বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে তুতিকোরিনকে। বিজেপি প্রার্থী তামিলিসাই পেশায় চিকিৎসক। তাঁর কথায়, ‘‘কানিমোঝির অতীত ওঁকে জিততে দেবে না। ওঁকে টিকিট দিয়ে ডিএমকে আমাদের সুবিধেই করে দিয়েছে।’’

সত্যিই কি তা-ই? চেন্নাই থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে তুতিকোরিনের আনাচকানাচে কান পাতলে অবশ্য অন্য আভাস। শোনা যাচ্ছে, করুণানিধির পুত্র এম কে স্ট্যালিন না কি অনেক আগেই কানিমোঝিকে তুতিকোরিনে নিজের ভিত তৈরির কথা বলেছিলেন। তাই বছর দু’য়েক আগে থেকেই এখানে যাতায়াত কানিমোঝির। নিয়মিত গ্রামসভাও করেছেন।

স্টারলাইট কপারপ্লান্ট-কাণ্ডও এ বার তুতিকোরিনের ভোটে অন্যতম বিষয়। আপাতত বন্ধ থাকা ওই কারখানার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বহু দিন ধরেই পরিবেশগত ক্ষতির অভিযোগ আনছিলেন। গত মে মাসে সেই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ যায় ১৩ জন আন্দোলনকারীর। সেই প্রসঙ্গ তুলে কানিমোঝি বলেছেন, পরিবেশের বিষয়ে আপস চলবে না। তিনি জিতলে নতুন শিল্প আনার চেষ্টা করবেন। বেকারদের চাকরি হবে। কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাবেন।

তুতিকোরিন থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে নীলগিরিতে ডিএমকে প্রার্থী আন্দিমুথু রাজাও কিন্তু পরিবেশ এবং চাষেই গুরুত্ব দিচ্ছেন! কথাটা বলতেই কানিমোঝির মুখের ভাব পাল্টে গেল। এমন ভাবে তাকিয়ে থাকলেন যেন সামনে কেউ নেই, সবটাই স্বচ্ছ।

রাজার সঙ্গে তাঁর ‘বন্ধুত্ব’ শুধু তামিলনাড়ু নয়, গোটা দেশেই চর্চিত। এমনকি, তাঁরা দু’জনে গাঁটছড়া বেঁধে টুজি দুর্নীতির ছক কষেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এই প্রথম সরাসরি ভোটে দাঁড়ালেন। ‘বন্ধু’ রাজার থেকে কোনও পরামর্শ নিচ্ছেন কি? প্রশ্ন করা মাত্রই কানিমোঝির দৃষ্টি স্থির। বয়স্ক ডিএমকে নেতা সাংবাদিকের কানে কানে বললেন, ‘‘ম্যাডামকে রাগাবেন না। আপনি বরং এ বার এ বার আসুন।’’

—নিজস্ব চিত্র।

Kanimozhi DMK লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy