Advertisement
E-Paper

প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ‘চেনেন না’, ‘আই লাভ নরেন্দ্র মোদী’

বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি লালকৃষ্ণ আডবাণীর বার্তাকে রাহুল গাঁধী মোদীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার করলেন। নিজের ‘গুরু’ লালকৃষ্ণ আডবাণীর ‘অপমান’ করে নরেন্দ্র মোদী ‘হিন্দু সংস্কৃতি’-র বিরুদ্ধে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ তুললেন রাহুল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:০৬
পড়ুয়াদের সঙ্গে নিজস্বী রাহুলের। ছবি— পিটিআই।

পড়ুয়াদের সঙ্গে নিজস্বী রাহুলের। ছবি— পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের আশঙ্কাই সত্যি হল।

বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি লালকৃষ্ণ আডবাণীর বার্তাকে রাহুল গাঁধী মোদীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার করলেন। নিজের ‘গুরু’ লালকৃষ্ণ আডবাণীর ‘অপমান’ করে নরেন্দ্র মোদী ‘হিন্দু সংস্কৃতি’-র বিরুদ্ধে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ তুললেন রাহুল।

মোদীর ‘ঘৃণার রাজনীতি’-র বিপরীতে আজ রাহুল নিজের ‘ভালবাসার ভাবনা’ তুলে ধরতে মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমি নরেন্দ্র মোদীকে ভালবাসি।’’ এর আগে সংসদে বিতর্কে মোদী সরকারের কড়া সমালোচনার পরেও তিনি ব্যক্তিগত বিদ্বেষে বিশ্বাস করেন না বোঝাতে রাহুল জড়িয়ে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। তাতে মোদী চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। আজ পুণেয় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাহুল ‘আই লাভ মিস্টার নরেন্দ্র মোদী’ মন্তব্য করার পরেই শ্রোতাদের একাংশ ‘মোদী, মোদী’ স্লোগান তোলেন। তাতে না দমে, হাসতে হাসতে রাহুল জানিয়ে দেন, এতেও তাঁর কোনও সমস্যা নেই। তার পরে বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তি মোদীর প্রতি কোনও রাগ বা ঘৃণা নেই। কিন্তু ফারাক হল, ওঁর মনে আমার প্রতি রাগ রয়েছে।’’

গত কালই আডবাণী ব্লগে মন্তব্য করেছিলেন, বিজেপির জাতীয়তাবাদের ভাবনায় রাজনৈতিক বিরোধীদের দেশদ্রোহী হিসেবে দেখা হয় না। বিজেপি নেতারা বুঝতেই পেরেছিলেন, গাঁধীনগরে তাঁকে প্রার্থী না করা নিয়ে বিজেপি শীর্ষনেতৃত্বের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ আডবাণী আসলে মোদী-অমিত শাহকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন। আজ আডবাণীর সেই বার্তাই লুফে নিয়ে কংগ্রেস সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ তুলেছে, মোদী-অমিত শাহের মুখোশ খুলে দিয়েছেন আডবাণী।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আডবাণী এ কথাও বলেছিলেন, বিজেপি রাজনৈতিক বিরোধীদের শত্রু হিসেবে দেখে না। বিপক্ষ হিসেবেই দেখে। আডবাণী নিজেও সেই আদর্শ মেনে বরাবর সনিয়া, রাহুল থেকে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন। কিন্তু পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার পরেও মোদী বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখেন কি না, তা নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠেছে।

আজ এবিপি নিউজ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে রাহুল গাঁধীর বিশেষ পরিচিতি নেই। কোনও বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগও হয়নি। মোদীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা, ভাই-বোনের মধ্যে তাঁর কাকে বেশি ভাল লাগে? মোদী জবাবে বলেন, ‘‘আমি ওঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত নই। কখনও এক সঙ্গে বসে আলোচনা করার সুযোগ হয়নি।’’

মোদী জমানায় একবারই জিএসটি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাসভবনে মনমোহন সিংহ, সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এর বাইরে রাহুল একবার কৃষকদের প্রতিনিধি দল নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কখনও বিরোধী দলের নেতা হিসেবে রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করেননি। বিজেপির প্রবীণ নেতারা বলছেন, লালকৃষ্ণ আডবাণী নিজের লেখা বই ‘মাই কান্ট্রি, মাই লাইফ’ প্রকাশের পরে সনিয়াকে তা উপহার দিতে দশ জনপথে গিয়েছিলেন।

এখানেই মোদীকে কড়া ভাষায় নিশানা করেছেন রাহুল। আজ মহারাষ্ট্রে তাঁর মন্তব্য, ‘‘গুরুকে অপমান করা হিন্দু সংস্কৃতি নয়। মোদীজির গুরু কে? আডবাণীজি। শিষ্য গুরুর সামনে হাতও জড়ো করে না। মঞ্চ থেকে তুলে আডবাণীজিকে ফেলে দিয়েছেন।...এ দিকে হিন্দু ধর্মের কথা বলেন!’’

রাহুল তথা কংগ্রেস তো বটেই, গাঁধী পরিবারের জামাই রবার্ট বঢরাও আজ আডবাণীর ব্লগ নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বকে কটাক্ষ করেছেন। ফেসবুকে রবার্টের মন্তব্য, ‘দেখে দুঃখ হয় যে, আডবাণীর নিজের দল তাঁকে ভুলে গিয়েছে। দলের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বহু দিন হারিয়ে গিয়েছেন। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শকে মর্যাদা না দেওয়াটা অভদ্রতা।’

বিজেপি নেতৃত্বর এখন চিন্তা হল, আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীরা ভোটের আগে আরও মুখ খোলেন কি না। আজ আডবাণীর সঙ্গে

জোশী বৈঠক করায় তাঁদের

রক্তচাপ বেড়েছে। এমন ঘোরালো পরিস্থিতির মধ্যেও আগামিকাল বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে কিন্তু এক রকম ব্রাত্যই থাকছেন আডবাণী-জোশী। দিল্লিতে দলের সদর দফতরে অরুণ জেটলি, রামলাল হাজির থাকবেন। কিন্তু সূত্রের খবর, ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই জোটেনি আডবাণী-জোশীর মতো বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের!

বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের মতাদর্শের ফারাক বোঝাতে আজ রাহুল টুইট করেন, ‘ঘৃণা হল কাপুরুষতা। গোটা বিশ্ব ঘৃণায় ভরে গেলেও আমি পরোয়া করি না। আমি কাপুরুষ নই। আমি ঘৃণা ও রাগের পিছনে লুকোই না। যাঁরা ঘৃণায় সাময়িক ভাবে অন্ধ, আমি সমস্ত জীবের সঙ্গে তাঁদেরও ভালবাসি।’’ রাহুলের এই কৌশলের সামনে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে

মাঠে নামতে হয়েছে। তিনি টুইটারে লেখেন, ‘ঔদ্ধত্য ও বিভ্রান্তির সুন্দর নমুনা। উনি নিজেকে ছাড়া গোটা মানবজাতিকে ঘৃণায় ভরা দেখছেন। যুবরাজ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।’’

I Love Modi Lok Sabha Election 2019 Narendra Modi Rahul Gandhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy