দু’দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ভারতে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার আগে মঙ্গলবার ভারতের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তিতে অনুমোদন দিয়ে রাখল রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ স্টেট ডুমা। দু’দেশের মধ্যে লজিস্টিক সাহায্যের আদানপ্রদানের জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তির নাম ‘রেসিপ্রোকাল এক্সচেঞ্জ অফ লজিস্টিক সাপোর্ট’, সংক্ষেপে আরইএলওএস।
দু’দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার দিক থেকে এই চুক্তিটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। গত সপ্তাহেই এই চুক্তিটিতে অনুমোদনের জন্য রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে পাঠান সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন। মঙ্গলবার তাতে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন নিম্নকক্ষ। স্টেট ডুমার স্পিরাক ভ্যাচেস্লভ ভলোদিন বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের কৌশলগত এবং সার্বিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এই সম্পর্কের কদর করি। এই চুক্তির অনুমোদন পারস্পরিক সহযোগিতা এবং আমাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
বস্তুত, পুতিন এমন এক সময়ে দিল্লিতে আসছেন, যখন আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক টানাপড়েন চলছে। ফলে এই সফরে দিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে বন্ধুত্ব আরও বৃদ্ধি করতে চাইছেন পুতিন। এ ক্ষেত্রে রুশ তেলের পাশাপাশি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে সামরিক সরঞ্জাম সংক্রান্ত বিষয়ও। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ভারতকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে আসছে রাশিয়া। এ অবস্থায় পুতিনের সফরের আগে রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে চুক্তিতে অনুমোদন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
আরইএলওএস চুক্তিতে রুশ সামরিক সরঞ্জাম, যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান রাশিয়া থেকে ভারতে সরবরাহের পদ্ধতিগত বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। একই রকম ভাবে ভারতের থেকেও সামরিক সহযোগিতার পদ্ধতিগত দিকও উল্লেখ রয়েছে চুক্তিতে। এটি দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি পারস্পরিক সহযোগিতার চুক্তি। দু’দেশের বাহিনীর যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সামরিক আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে চুক্তিতে।
আরও পড়ুন:
পুতিনের ভারত সফরকালে দু’দেশের মধ্যে অসামরিক পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রেও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হতে পারে। অসামরিক পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সাহায্যের পথ আরও দৃঢ় করতে একটি সমঝোতা স্মারক (মউ) স্বাক্ষরিত হতে পারে। পুতিনের সফরের আগে এমন একটি সমঝোতা স্মারকে অনুমোদন দিয়েছে রুশ মন্ত্রিসভা। রাশিয়ার তরফে এই সমঝোতায় সই করবে রুশ পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটম। তারা আগে থেকেই তামিলনাড়ুতে বেশ কিছু পরমাণু রিঅ্যাক্টর তৈরি করছে।
ট্রাম্পের হুমকি এবং পশ্চিমের বেশ কিছু দেশের আপত্তির পরেও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে ভারত। রুশ তেল আমদানি সামান্য কিছুটা কমলেও, তা উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। এখনও ভারতে জ্বালানি তেলের সিংহ ভাগই আসে রাশিয়া থেকেই। ট্রাম্পের হুমকির কোনও প্রভাব যাতে দিল্লি-মস্কো বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপরে না পড়ে, এই সফরে তা নিশ্চিত করতে চাইবেন পুতিন।