Advertisement
E-Paper

মানবতার সাজা! প্রতিবেশিনীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় ৩৯৫ দিন জেল খাটলেন মধ্যপ্রদেশের যুবক!

যুবকের বাবা-মা নেই। জমি-বাড়ি নেই। বস্তিতে একা থাকতেন। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এমন একজনের হয়ে কে-ই বা কথা বলে। অতএব অন্ধকারে দিন গোনা। গারদের ভিতরে আশায় ছিলেন, একদিন ঠিক নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। হলেন। তবে ৩৯৫ দিন পরে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫ ১০:৪০
Rajesh Biswakarma

বাড়িতে ফিরেও অসহায় রাজেশ বিশ্বকর্মা। ছবি: সংগৃহীত।

একচিলতে ঘর। ভাঙাচোরা দেওয়াল। তক্তাপোশে বসে যুবক ভাবছেন, এটা তাঁর সঙ্গে কেন হল। জবাব আসে না। তখন কপাল চাপড়ে দোষ দেন অদৃষ্টকে। পরক্ষণেই বিড়বিড় করেন, ‘‘করেছিলাম কী? এক জনকে বাঁচাতেই চেয়েছিলাম তো?’’

তিনি মধ্যপ্রদেশের ভোপালের আদর্শনগরের বস্তির বাসিন্দা। নাম রাজেশ বিশ্বকর্মা। অসুস্থ প্রতিবেশিনীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ‘দায়ে’ ১৩ মাস জেল খেটেছেন। শেষমেশ আদালত তাঁকে নির্দোষ বলে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু ঘরে ফিরেও আর এক সমস্যা। এখন ‘খুনি’ বলে কেউ কাজ দিচ্ছেন না ওই ঠিকাশ্রমিককে।

২০২৪ সালের ১৬ জুন। পাশের বাড়িতে এক অসুস্থ মহিলা রাজেশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। বলেছিলেন হাসপাতালে নিয়ে যেতে। মানবিকতার খাতিরে আর পাঁচজনের যা করা উচিত, রাজেশও তা-ই করেছিলেন। তিনি মহিলাকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে যান। কাজের শেষে রাজেশ সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন রোগীর খবরাখবর নিতে। সেখান থেকেই গ্রেফতার! অভিযোগ, মহিলাকে খুন করেছেন তিনি!

রাজেশ অনেক বার পুলিশকে বোঝাতে চেয়েছেন। কেউ কথা শুনলে তো! প্রথমে লক আপ। তার পর আদালত এবং কারাবাস। যুবকের বাবা-মা নেই। জমি-বাড়ি নেই। বস্তিতে একা থাকতেন। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এমন একজনের হয়ে কে-ই বা কথা বলে। অতএব অন্ধকারে দিন গোনা। গারদের ভিতরে আশায় ছিলেন, একদিন ঠিক নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। হলেন। তবে ৩৯৫ দিন পরে। সম্প্রতি বেকসুর খালাস পেয়েছেন রাজেশ।

কী ঘটেছিল সে দিন? রাজেশের কথায়, ‘‘আমি তো শুধু অসুস্থ একজনকে সাহায্যই করেছিলাম। তার জন্য শাস্তি?’’ তিনি বলে যান, ‘‘সে দিন প্রতিবেশী আমায় ডেকে বলেছিল, শরীর ভীষণ খারাপ। একা হাসপাতালে যেতে পারবে না। আমি যেন সাহায্য করি। আমিও একা থাকি। জানি, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে কী অবস্থা হয়। ওকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে কাজে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় খবর নিতে গিয়ে শুনলাম মারা গিয়েছে মহিলা। তার পর আমাকেই খুনের অভিযোগে জেলে ভরে দিল পুলিশ!’’

নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা রাজেশের। নিজের জন্য উকিল দাঁড় করাবেন কী ভাবে? বোন খবর পেয়ে দাদার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও অসহায়। কমলেশ নামে ওই মহিলার কথায়, ‘‘দাদাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরের দিন বিকেলে আমায় কোর্টে যেতে বলা হয়েছিল। আমি বাড়িতে একা ছিলাম। যেতে পারিনি। সাত দিন পরে থানায় গেলাম দাদার আধার, মোবাইল নিতে। সে জন্য আমার কাছে ৫০০ টাকা চাইল পুলিশ। ওই টাকাও আমার কাছে ছিল না। দাদাকে এখন জেল থেকে ফিরেছে। কিন্তু কেউ ওকে কাজ দিচ্ছে না।’’

আদালত রাজেশের হয়ে সওয়ালের জন্য যে আইনজীবীকে ঠিক করেছিলেন, সেই রিনা বর্মার কথায়, ‘‘ওঁর কাছে টাকা ছিল না। আদালত আমায় ওঁর হয়ে সওয়াল করতে বলেছিল। মামলা হাতে নিয়ে দেখলাম, আমার মক্কেল সম্পূর্ণ নির্দোষ।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মৃতার নথিপত্র অনুযায়ী, তিনি দীর্ঘ অসুস্থতার জেরে মারা গিয়েছেন। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, পুলিশ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেনি। মেডিক্যাল রিপোর্টে বেশ কিছু খামতি ছিল। এমনকি, এটাও স্পষ্ট নয় যে ওই মহিলার ঠিক কী হয়েছিল এবং কিসের ভিত্তিতে রাজেশকে তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। শেষমেশ প্রমাণ করতে পেরেছি যে, উনি নির্দোষ।’’

তক্তাপোশে বসে রাজেশ বললেন, ‘‘কী ভুল যে করলাম, এখনও বুঝতে পারলাম না। কে ফিরিয়ে দেবে আমার ১৩টা মাস? আমার মতো গরিবের জীবনের দাম নেই?’’

Crime Madhya Prdesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy