শিক্ষানবিশ পুলিশকর্মীদের একাংশকে নিয়ে মাথাব্যথা বেড়েছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের। কারণ, তাঁদের অনেকেই চাইছেন বাড়ির কাছে থাকা কোনও কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে। ওই পুলিশকর্মীদের ঘরকুনো মনোভাব থেকে বার করে আনতে এ বার অভিনব কৌশল নিচ্ছেন সে রাজ্যের পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। প্রতি রাতে ঘুমোনোর আগে তাঁদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তুলসীদাসের ‘রামচরিতমানস’ পাঠ করতে বলা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ মনে করছে, রামচন্দ্রের ১৪ বছরের বনবাস পুলিশকর্মীদের বাড়ি থেকে দূরে গিয়েও কর্তব্যপালনে উদ্বুদ্ধ করবে।
মধ্যপ্রদেশের শিক্ষানবিশ পুলিশের একটি দলের প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে চলতি সপ্তাহ থেকেই। রাজ্যের নানা প্রান্তে থাকা আটটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে (পুলিশ ট্রেনিং স্কুল বা পিটিএস) তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলবে। ওই নতুন পুলিশকর্মীদের বলা হয়েছে, রাতে ঘুমোনোর আগে ‘রামচরিতমানস-এর অন্তত দু’টি পরিচ্ছেদ পাঠ করতে। এই প্রসঙ্গে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের এডিজি (প্রশিক্ষণ) রাজা বাবু বলেছেন, “বহু পুলিশকর্মী তাঁদের আবেদনপত্রে জানিয়েছেন, তাঁরা বাড়ির কাছে প্রশিক্ষণ নিতে চান। কিন্তু এই ধরনের মনোভাব যথাযথ নয়। যদি পুলিশকর্মী কিংবা আধিকারিকেরা বাড়ির কাছেই প্রশিক্ষণ পান, তবে তাঁরা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে কী ভাবে মানিয়ে নেবেন? কী ভাবে মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় পরিস্থিতির মোকাবিলা করবেন?”
১৯৯৪ ব্যাচের আইপিএস আধিকারিক রাজা বাবু জানান যে, তিনি নিজে রামচরিতমানস পড়ে অনেক কিছু জেনেছেন এবং যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করার শক্তি পেয়েছেন। তাঁর কথায়, “পুলিশের প্রশিক্ষণ শাখার প্রধান হিসাবে শিক্ষানবিশদের শক্তিশালী করে তোলা আমার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।” প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়র জ়োনের এডিজি থাকার সময়ে এই পুলিশ আধিকারিক পুলিশদের জন্য ‘গীতা জ্ঞান’ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। দশেরার সময় জেলে ধর্মীয় পুস্তিকাও বিলি করেছিলেন।
আরও পড়ুন:
মধ্যপ্রদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, ৭৪০০ জন শিক্ষানবিশ পুলিশকর্মীর প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। তাঁরা ন’মাসের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেবেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জন বাড়ির নিকটবর্তী প্রশিক্ষণকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেওয়ার আর্জি জানান বলে ওই সূত্রের দাবি। তার পরেই স্থির হয়, শিক্ষানবিশদের রামচরিতমানস পাঠ করতে বলা হবে। তবে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য রামচরিতমানস পাঠ বাধ্যতামূলক নয়। তবে এই নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক থেমে নেই। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশ সরকার সব কিছুর সঙ্গেই ধর্মকে মিশিয়ে দিচ্ছে। একজন পুলিশকর্মীকে ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ না-দিয়ে কেন রামচরিতমানস পড়তে বলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিজেপির পাল্টা যুক্তি, জঙ্গলে প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে কী ভাবে লড়াই করতে হয়, তা শিখিয়েছিলেন রামচন্দ্র। তিনি ১৪ বছর বনবাসে কাটাতে পারলে বর্তমানের পুলিশকর্মীরা পারবেন না কেন? এই শিক্ষা পুলিশকর্মীদের পেশাদার জীবনে কাজে লাগবে বলেই মত শাসক শিবিরের।