পুলিশের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী হয়েছেন মহারাষ্ট্রের এক মহিলা চিকিৎসক। বাঁ হাতের তালুতে লিখে গিয়েছেন অভিযুক্তের নাম এবং নিজের মৃত্যুর কারণ। সূত্রের খবর, শুধু হাতে নয়। মৃত্যুর আগে কাগজেও কিছু লিখে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। চার পাতার একটি চিঠিকে ‘সুইসাইড নোট’ বলে জল্পনা জোরালো হচ্ছে। দাবি, ওই চিঠিতে এক সাংসদের উল্লেখও করেছেন তরুণী। তাঁকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য ফোনে সাংসদ চাপ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
তরুণীর মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে, তাঁকে দিয়ে ভুয়ো মেডিক্যাল রিপোর্ট তৈরি করিয়ে নেওয়া হত। চাপ দিয়ে ওই কাজে বাধ্য করা হত তাঁকে। যে চিঠি নিয়ে জল্পনা দানা বাঁধছে, তাতেও এই অভিযোগ রয়েছে। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি দাবি করেছে, ওই চিঠি তারা পড়ে দেখেছে। তাতে লেখা আছে, পুলিশের তরফে ভুয়ো মেডিক্যাল রিপোর্ট লেখার জন্য চিকিৎসককে চাপ দেওয়া হত। শারীরিক কোনও পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট লিখে দিতে হত। এই কাজ করতে না চাইলে মূল অভিযুক্ত সাব-ইনস্পেক্টর এবং অন্যরা তাঁকে হুমকি দিতেন। একটি ঘটনার কথা বলতে গিয়ে তরুণী জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট লিখতে তিনি রাজি ছিলেন না। তখন এক সাংসদের দুই ব্যক্তিগত সহকারী হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁরা সাংসদকে ফোন করেন এবং সেই ফোন তরুণীকে ধরিয়ে দেন। ফোনে পরোক্ষ ভাবে সাংসদ তাঁকে হুমকি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তরুণী। সাংসদের নাম প্রকাশ্যে আসেনি।
আরও পড়ুন:
পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কোনও চিঠি বা সুইসাইড নোটের কথা উল্লেখ করা হয়নি। হাতের তালুতে তরুণী যা লিখে গিয়েছেন, তা-ই তাঁর শেষ বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার বাসিন্দা ছিলেন তরুণী। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ময়নাতদন্তের ভুয়ো রিপোর্টও তাঁকে তৈরি করতে বাধ্য করা হত। দীর্ঘ দিন ধরে এই মানসিক চাপ তিনি সহ্য করছিলেন। পুলিশের উপরিমহলে অভিযোগ জানিয়ে লাভ হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার ফলটনের হোটেলের ঘর থেকে তরুণী চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাঁ হাতের তালুতে দু’জনের নাম লিখে গিয়েছেন তিনি। প্রথম নামটি এসআই-এর। লেখা হয়েছে, ‘‘ও আমার মৃত্যুর কারণ। ও আমাকে চার বার ধর্ষণ করেছে। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ও আমাকে ধর্ষণ, মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করেছে।’’ এ ছাড়া, ফলটনের যে বাড়িতে তরুণী ভাড়াটে হিসাবে থাকতেন, তার মালিকের বিরুদ্ধেও হেনস্থার অভিযোগ করেছেন। হাতে লিখেছেন সেই বাড়িওয়ালার নাম। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, যে দু’জনের নাম তরুণী লিখে গিয়েছেন, তাঁদের খোঁজ চলছে। অভিযুক্ত এসআই-কে ঘটনার পরেই বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহারাষ্ট্রে রাজনীতির পারদ চড়ছে। বিরোধীরা এক যোগে আক্রমণ করেছে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের সরকারকে। যদিও বিজেপির তরফে উপযুক্ত পদক্ষেপ এবং অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।