Advertisement
E-Paper

ইতিহাস গড়ে জেলা হিসেবে যাত্রা শুরু মাজুলির

অসমের ৩৫ তম জেলা হিসেবে পথ চলা শুরু হল মাজুলির। আজ মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা জেলা হিসেবে মাজুলির উদ্বোধন করলেন। মাজুলির প্রথম জেলাশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন পল্লবগোপাল ঝা।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯
মাজুলির প্রথম জেলাশাসক পল্লবগোপাল ঝা-কে তাঁর চেয়ারে বসালেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং তাঁর মন্ত্রীসভার সহকর্মীরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: উজ্জ্বল দেব।

মাজুলির প্রথম জেলাশাসক পল্লবগোপাল ঝা-কে তাঁর চেয়ারে বসালেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং তাঁর মন্ত্রীসভার সহকর্মীরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: উজ্জ্বল দেব।

অসমের ৩৫ তম জেলা হিসেবে পথ চলা শুরু হল মাজুলির। আজ মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা জেলা হিসেবে মাজুলির উদ্বোধন করলেন। মাজুলির প্রথম জেলাশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন পল্লবগোপাল ঝা। স্বপ্নপূরণ উপলক্ষে কাল থেকেই আলো, মালা, ফেস্টুনে সজ্জিত মাজুলি এ দিন ছিল আনন্দে মাতোয়ারা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাচে-গানে মেতে ওঠে বিশ্বের বৃহত্তম নদী-দ্বীপটি।

মাজুলির আয়তন ৮৮০ বর্গ কিলোমিটার। মিসিং, দেউরি, সোনোয়াল-কছারি, আহোমদের ১৪৪টি গ্রাম রয়েছে মাজুলিতে। জনসংখ্যা প্রায় এক লক্ষ ৭০ হাজার। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে

মাজুলির যোগাযোগের মাধ্যম এক থেকে দেড় ঘণ্টার ফেরি। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ফেরি পার হয়েই এত দিন জেলাসদর যোরহাটের সঙ্গে মাজুলিবাসীকে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছিল। বর্ষায় একেবারে বন্ধ হয়ে যেত সেই যোগাযোগ। রাজ্যে সত্র-সংস্কৃতির (বৈষ্ণব ধর্ম) প্রাণকেন্দ্র মাজুলি গিনেস বুকে মানুষের বসতি থাকা বিশ্বের বৃহত্তম নদী-দ্বীপ হিসেবে স্বীকৃত।

সাংসদ হিসেবে মাজুলি সর্বানন্দ সোনোয়ালের লোকসভা আসনেরই অন্তর্গত ছিল। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবেও তিনি মাজুলি বিধানসভা আসনকেই বেছে নেন। সে সময়েই সোনোয়াল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সরকার গড়লে মাজুলি পৃথক জেলা হবে। কথা রাখলেন তিনি। অবহেলা ও বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব মাজুলিবাসী। ভূমিক্ষয়ে দ্বীপের প্রায় ৩০ শতাংশ তলিয়ে গিয়েছে। ফি বছরের বন্যায় দ্বীপের ৬০ শতাংশ বাসিন্দাকে নতুন করে ঘর গড়তে হয়। নষ্ট হয় ফসল, গবাদি পশু। সেই সঙ্গে হাতির পাল তছনছ করে গ্রাম।

মুখ্যমন্ত্রী জেলা উদ্বোধনের আগে, সকালে মাজুলিতে মন্ত্রিসভার বৈঠক সারেন। তিনি জানান, ‘‘ব্রহ্মপুত্রে ড্রেজিং করলে বন্যা ও ভূমিক্ষয় কমতে পারে। বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত মোকাবিলা করতে মাজুলিতে জলসম্পদ বিভাগের ‘র‌্যাপিড অ্যাকশন সেন্টার’ গড়া হবে।’’ মাজুলিকে রাজ্যের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, মাজুলিতে আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে সব বিভাগের জেলা দফতর তৈরি করা হবে। অর্থ তথা শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, মাজুলিতে তৈরি হবে সরকারি কলেজ।

আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়: মাজুলিতে সব বাঁধ নতুন ও মজবুত করে তৈরি করা হবে। রাজ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নার্সিংহোমগুলির নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেবে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ বিনামূল্যে করা এবং দরিদ্রদের চিকিৎসা বিনামূল্যে করার চেষ্টা হবে। হিমন্ত জানান, অসম আন্দোলনের সব শহিদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি দফতরকে স্বতন্ত্র দফতর করা হবে। মাজুলির রাস্তাঘাটের বেহাল দশা ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব, নতুন জেলায় সব রাস্তা কংক্রিটের করা হবে। মাজুলি বাঁচাতে ব্যবস্থা নেবে সরকার। শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি জানান, রাজ্যের সব সরকারি দফতরে সত্রীয় সংস্কৃতির প্রতিফলন থাকবে। মাজুলি থেকে গুয়াহাটি আসার এসি বাস পরিষেবারও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।

মাজুলিতে এক সময় ৬৫টি সত্র ছিল। অনেকগুলিই বন্যা-ভূমিক্ষয়ে ভেঙে গিয়েছে। বাকি সত্রগুলির সংরক্ষণে রাজ্য সরকার অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সোনোয়াল জানান, জেলায় তৈরি হবে বিশ্বমানের সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়। গড়া হবে আয়ুর্বেদিক হাসপাতাল ও জৈবশিল্প প্রতিষ্ঠান। মানুষের হস্তশিল্প, রাসলীলা, মুখোশ শিল্প, ফসল সংরক্ষণে নেওয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা। জেলায় একটি স্টেডিয়াম তৈরির আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের পাশাপাশি মানুষকেও মাজুলির উন্নয়নে হাত মেলাতে হবে। আমার বা আমার সরকারের কাজে কোনও ভুল হলে বা জেলার উন্নয়নে ব্যর্থ হলে অবশ্যই মানুষ সমালোচনা করবেন।’’ ভূপেন হাজরিকা যখন সঙ্গীত-নাটক অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান ছিলেন তখন সত্রীয় নৃত্যকে ধ্রুপদী নৃত্যের মর্যাদা দিতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়ে সোনোয়াল জানান, ভূপেনবাবুর কুঠরির বাড়ি ঐতিহ্যভবন হিসেবে সংরক্ষিত করা হবে। ভূপেনবাবুকে শ্রদ্ধা জানাতেই তাঁর পবিত্র জন্মদিনে নতুন জেলার উদ্বোধন করা হল।

Majuli New district
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy