জাতীয় রাজনীতির দিকে তাকিয়ে অন্যান্য রাজ্যে নিজেদের বিস্তারের লক্ষ্য ও পন্থা ঠিক করল তৃণমূল কংগ্রেস। সোমবার দলের কর্মসমিতির বৈঠকে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে। তাই আগামিদিনে তৃণমূল যে সব রাজ্যে লড়বে না, সেখানেও সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক দলগুলিকেই তারা সমর্থন দেওয়ার কথা ভাববে।
রাজনৈতিক পযর্বেক্ষকদের মতে, মমতার এই কৌশল ঘোষণার মধ্যে দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের ‘দূরত্ব’ বাড়িয়ে যাওযার বার্তাই স্পষ্ট হচ্ছে।
এ দিনের বৈঠকে আগামিদিনের দিক্নির্দেশের প্রসঙ্গে এটাও সাব্যস্ত হয়েছে যে অদূর ভবিষ্যতে দলের নীতিনির্ধারণ কমিটির বৈঠক হবে দিল্লিতে। যাতে দলের এই তৎপরতাকে সর্বভারতীয় চেহারা দেওয়া যায়। বাংলায় বিজেপিকে হারানোর সাফল্যকে সামনে রেখে সর্বভারতীয় লড়াইয়ের নেতৃত্বে তৃণমূলকে তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া পরিচালনায় তৃণমূলের সংবিধান সংশোধন করে সমস্ত সিদ্ধান্তে চেয়ারপার্সন হিসেবে মমতার সম্মতি বাধ্যতামূলক করা হবে।
রাজ্যের বাইরে তৃণমূলের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কাজকর্মের প্রসঙ্গে বারবারই বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনের বিষয়টি নিয়ে চর্চা হয়েছে। বিজেপি বিরোধী হিসেবে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেসের মতো দলের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক কী হবে, এই চর্চায় তা-ই প্রাধান্য পেয়েছে। এ দিন তৃণমূলের কর্মসমিতির বৈঠকে একাধিক নেতার বক্তব্যেও সেই বিষয়টিই নানা ভাবে এসেছে। বিজেপি থেকে আসা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিংহ থেকে শুরু করে কংগ্রেস ছেড়ে আসা মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা বা হরিয়ানা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অশোক তানওয়ার— সকলেই কংগ্রেসের বদলে তৃণমূলকেই বিজেপি-বিরোধী শিবিরের প্রধান শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দিল্লিতে কর্মসমিতির বৈঠকের প্রস্তাবটি দেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া তানওয়ার। তাঁর মন্তব্য ছিল, কংগ্রেসের ‘মাল্টি অরগ্যান ফেলইওর’ হয়েছে।
এই সূত্রে এ দিনের বৈঠকে বিজেপির বিকল্প শক্তি হিসেবে তৃণমূলকে চিহ্নিত করেছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। যে সব রাজ্যে তৃণমূল সাম্প্রতিক অতীতে রাজনৈতিক কাজ শুরু করেছে সেখানকার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, মুকুল রায় এবং ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর।
তৃণমূলের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করেছেন সাংমা। সেই সূত্রেই আরও এক পা এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও করেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। বৈঠকে তিনি বলেছেন, সারা দেশে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে মানুষ তৃণমূলকেই দেখতে চাইছেন। দলের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ব্যাখ্যা করে শোভনদেব বলেছেন, বিভিন্ন রাজ্যে তৃণমূলের কমিটিগুলির কাজকর্মে সর্বোচ্চ স্তরে কারও অনুমোদন আবশ্যিক করা হোক। তবে অন্য রাজ্যে দলকে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে অভিষেক যে কাজ করছেন তা তেমনই চলবে।
বিজেপির বিকল্প গঠনে তৃণমূলের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন মমতা। ত্রিপুরায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিরোধী হিসেবে তৃণমূল যে ভোট পেয়েছে তাকে তৃণমূলের উপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ার সঙ্কেত বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে মেঘালয় ও গোয়ায় দলের যথেষ্ট ভাল সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে তাঁর মন্তব্য, প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা বড় বিষয় নয়। বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। এটাই বড় কাজ। দলের সর্বোচ্চ স্তরের এই বৈঠকে মমতার বার্তা, কংগ্রেস কী করছে তা দেখতে বসে থাকা অথহীন। তৃণমূলকে নিজের মতো এগোতে হবে।
আজ মঙ্গলবার দু’দিনের সফরে মমতা মুম্বই যাচ্ছেন। এ দিন সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে পুজো দিয়ে তাঁর মুম্বইয়ের কর্মসূচি শুরু হবে। ঘোষিত ভাবে রাজ্যে আসন্ন বাণিজ্য সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে শিল্পপতি এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছন তাঁর এই সফরের উদ্দেশ্য। তবে শরদ পওয়ারের সঙ্গে দেখা করার সম্ভবানা যথেষ্ট। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে অসুস্থ তাই এই সফরে মমতার সঙ্গে দেখা হওয়া কঠিন। যদিও শিবসেনার মুখপাত্র তথা সাংসদ সঞ্জয় রাউতের পরিবারের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।