Advertisement
০৭ মে ২০২৪
National News

আগে ২০১৯ সামলাও: লালুর পাশে দাঁড়িয়ে মোদীকে চ্যালেঞ্জ মমতার

পটনায় লালুপ্রসাদের জনসভায় বিরোধী শিবিরের রথী-মহারথীদের জমায়েত। মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধী ঐক্যের ডাক দিলেন সকলেই।

পটনার জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে পেয়ে দৃশ্যতই আপ্লুত ছিলেন লালুপ্রসাদ। ছবি: পিটিআই।

পটনার জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে পেয়ে দৃশ্যতই আপ্লুত ছিলেন লালুপ্রসাদ। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
পটনা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ২০:০৬
Share: Save:

প্রস্তুতি পর্বে কিছুটা ধাক্কাই খেয়েছিলেন লালু। ‘দেশ বচাও, বিজেপি ভাগাও’ র‌্যালির ডাক দিয়ে পটনার গাঁধী ময়দান থেকে বিরাট মোদী-বিরোধী জোটের ছবি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী যে সভায় হাজির হবেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল র‌্যালির বেশ কয়েক দিন আগেই। দলিত হৃদয়েশ্বরী মায়াবতীও জানিয়ে দিয়েছিলেন, লালুর সভায় যোগ দেবেন না। এ ধরনের জোট সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা নাকি সুখকর নয়। গাঁধী ময়দানে এ দিন যাঁরা হাজির হলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথা বলছে। লক্ষাধিক লোকের জমায়েতের যে দৃশ্য রবিবার দেখা গেল, লালু-মমতা-শরদ-অখিলেশ-গুলাম নবি আজাদদের কাছে সে ছবি শুধু সুখকর নয়, উচ্ছাসেরও হওয়ার কথা।

লালুপ্রসাদ যাদব নিজেও ভিড় জেখে আপ্লুত। কর্মী-সমর্থকদের দল একটাও গাড়ি দিতে পারেনি, তা সত্ত্বেও গাড়ি ভাড়া করে, নিজেদের খরচে ঝান্ডা কিনে গোটা রাজ্য থেকে দলে দলে মানুষ হাজির হয়েছেন গাঁধী ময়দানে। জানান লালু। জমায়েতকে ধন্যবাদও জানান তিনি। লালু বলেন, ‘‘এই সভায় কী বিপুল ভিড় হয়েছে, তা গোটা দেশ আজ দেখছে। সবার নজর আজ পটনার দিকে রয়েছে।’’

পটনার গাঁধী ময়দানে লালুপ্রসাদের ডাকে বিজেপি-বিরোধী জমায়েত। ছবি: পিটিআই।

লালুপ্রসাদ এ দিন নিজের টুইটার হ্যান্ডলে গাঁধী ময়দানে হওয়া জমায়েতের একটি ছবি টুইটও করেছিলেন। ভিড়ে ঠাসা গাঁধী ময়দানের ছবি দিয়ে লালু লিখেছিলেন, ‘‘নো ‘ফেস’ উইল স্ট্যান্ড ইন ফ্রন্ট অব লালু’জ ‘বেস’।’’ অর্থাৎ লালুর ‘জনভিত্তি’র (বেস) সঙ্গে কোনও ‘মুখ’ (ফেস) টক্কর নিতে পারবে না। খোঁচা যে নীতীশের প্রতিই তা স্পষ্ট। কিন্তু লালুর দেওয়া ভিড়ের ছবি নিয়ে বিতর্কও হয়েছে এ দিন। সংবাদ সংস্থা এএনআই লালুর সভাস্থলের যে ছবি প্রকাশ করেছিল, সেই ছবি তুলে ধরে বিজেপির তরফে দাবি করা হয়, পুরো গাঁধী ময়দান ভরাতেই পারেননি লালু, ব্যর্থতা ঢাকতে ফোটোশপ করা ছবি টুইট করেছেন।

আরও পড়ুন: বিশ্বাসের নামে হিংসা বরদাস্ত নয়, মন খুললেন ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী’

লালুপ্রসাদ, রাবড়ী দেবী, তেজস্বী প্রসাদ-সহ গোটা যাদব পরিবার এ দিনের সভামঞ্চে হাজির ছিল। তৃণমূল চেয়ারপার্সন তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সপা সভাপতি তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, রাজ্যসভার কংগ্রেস দলনেতা তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদও যোগ দেন সভায়। জেডি(ইউ) নেতা শরদ যাদবকে চিঠি দিয়ে দলের নেতৃত্ব এই সভায় হাজির হতে বারণ করেছিলেন। বলাই বাহুল্য, শরদ নিষেধাজ্ঞা মানেননি। তিনি যথাসময়ে হাজির হন সভামঞ্চে, লালুপ্রসাদ তাঁকে বুকে টেনে নেন, উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।

হেমন্ত সোরেন, অখিলেশ যাদব, তেজপ্রতাপ যাদব, তেজস্বী যাদব— ভারতীয় রাজনীতির পরবর্তী প্রজন্ম একসঙ্গে। ছবি: পিটিআই।

লালুর সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রে এখন ‘এজেন্সির সরকার’ চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কেউ মুখ খুললেই এজেন্সি (কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা) দিয়ে তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দল খুব পরিশ্রম করে মানুষের জন্য কাজ করে। আমাদের তাই কিছু করতে পারছে না। পারছে না বলেই আমাদের সংসদীয় দলনেতাকে ধরে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল।’’ পরবর্তী নির্বাচনে বাংলার মসনদ থেকে তৃণমূলকে সরানোর যে ডাক বিজেপি দিয়েছে, তাকে এ দিন তীব্র কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আগে ২০১৯ সামলান, তার পরে অন্য নির্বাচনের কথা ভাববেন।’’ লালুপ্রসাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশংসায় এ দিন যতটা পঞ্চমুখ হন মমতা, ততটাই কটাক্ষ করেন নীতীশ কুমারকে। নীতীশ বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে অভিযোগ করেন মমতা। আগামী নির্বাচনে বিহারের মানুষ নীতীশের পাশে থাকবেন না, থাকবেন লালুর সঙ্গেই, বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: নিষ্ক্রিয় খট্টর, দাবি রাষ্ট্রপতি শাসন জারির

অসুস্থতার কারণে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী সভায় হাজির হতে পারেননি। কিন্তু মোবাইলে তাঁর ভাষণ শোনানো হয় সভামঞ্চ থেকে। নীতীশ কুমারকে তীব্র আক্রমণ করে সনিয়া গাঁধী বলেন, ‘‘বিহারে জনতার রায়ের যত বড় অপমান হয়েছে, তত বড় অপমান আর কখনও হয়নি।’’

নীতীশ কুমার যে ভাবে মহাজোট ভেঙে এনডিএ-তে সামিল হয়েছেন, তার তীব্র নিন্দা করে শরদ যাদব বলেন, ‘‘যিনি বিহারে জোট ভাঙলেন, তাঁকে বলতে চাই, এখানে জোট ভাঙলেও গোটা দেশে ১২৫ কোটি মানুষ জোট বাঁধবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE