বেঙ্গালুরুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক যুবককে। অভিযুক্তও ওই কলেজের ছাত্র। অভিযোগ, কলেজ ক্যাম্পাসে পুরুষদের শৌচালয়ে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই ছাত্রীকে। সেখানে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। পরে বাড়ি থেকে নির্যাতিতাকে ফের ফোন করেন যুবক। জানতে চান, তাঁর কোনও ‘পিল’ (গর্ভনিরোধক বড়ি) লাগবে কি না। আতঙ্কে পাঁচ দিন নীরব ছিলেন তরুণী। পরে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি কলেজের সপ্তম সেমেস্টারের ছাত্রী নির্যাতিতা। অভিযুক্ত ষষ্ঠ সেমেস্টারের ছাত্র। পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রথমে তাঁরা একই সঙ্গে পড়তেন। সহপাঠী ছিলেন। পরে যুবক একটি সেমেস্টার পিছিয়ে পড়েন। তবে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। অভিযোগ, গত ১০ অক্টোবর কলেজ ক্যাম্পাসে যুবকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল নির্যাতিতার। মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে তিনি বার বার ফোন করে তরুণীকে বিরক্ত করছিলেন এবং দেখা করতে বলছিলেন। দেখা করতে আট তলায় গেলে তরুণীকে জোর করে চুম্বনের চেষ্টা করেন অভিযুক্ত। এর পর তাঁকে সাত তলায় পুরুষদের শৌচালয়ে টেনে নিয়ে যান। সেখানে ধর্ষণ করেন। ঘটনার পাঁচ দিন পর, ১৫ অক্টোবর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা।
আরও পড়ুন:
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, শৌচালয়ে নির্যাতিতার কাছ থেকে তাঁর ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে ১টা ৫০ মিনিটের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন নির্যাতিতা। ঘটনার পরে তিনি বাড়ি ফিরে যান। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। আতঙ্কে ছিলেন। এই সময়ে অভিযুক্ত তাঁকে ফোন করে গর্ভনিরোধক বড়ির প্রয়োজন আছে কি না, জানতে চান বলে অভিযোগ। পরে বাবা-মাকে ঘটনার কথা খুলে বলেন ওই ছাত্রী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এফআইআর করেছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করা হয়েছে। বুধবার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। কলেজের যে অংশে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই। এতে তদন্তে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে ফরেন্সিক এবং ডিজিটাল নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় কর্নাটকে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা আর ভয় পাচ্ছে না। এর জন্য কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের দিকেই তারা আঙুল তুলেছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আর অশোকা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা একেবারে ভেঙে পড়েছে। গত চার মাসে ৯৭৯টি যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। শুধু বেঙ্গালুরুতেই ১১৪টি। মহিলা এবং শিশুরা ভয়ে আছেন।’’ রাজ্য সরকারের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বেঙ্গালুরুর ঘটনায় দোষীর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে কর্নাটক কংগ্রেস। যে কলেজের ঘটনা, তাদের তরফে এখনও কোনও সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
কিছু দিন আগে দিল্লির আন্তর্জাতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে চার জনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছিলেন এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রী। ক্যাম্পাসের ভিতরে পরিত্যক্ত বাড়িতে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।