Advertisement
E-Paper

ভিড়ের ঠেলায় স্ত্রী হারিয়ে গিয়েছেন! এখনও সন্ধান নেই, কুম্ভযাত্রায় বেরিয়ে দিল্লিতে অসহায় প্রৌঢ়

পরিবার এবং আত্মীয়দের সঙ্গে কুম্ভমেলায় যাচ্ছিলেন গুপ্তেশ্বর যাদব। শনিবার রাতে ‘স্বতন্ত্রতা সেনানি এক্সপ্রেস’ ধরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে সঙ্গছাড়া হয়ে যান গুপ্তেশ্বরের স্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:২০
শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়।

শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়। —ফাইল চিত্র।

শনিবার রাতের ঝড়ঝাপটা কাটিয়ে নয়াদিল্লি রেল স্টেশন এখন অনেকটাই শান্ত। স্টেশনের ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে শনিবার রাতে পদপিষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ভিড়ে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মেই হতাশ, বিচলিত মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ৫২ বছর বয়সি গুপ্তেশ্বর যাদব। শনিবার রাতের পর থেকে স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন। কিন্তু কোনও খবর পাচ্ছেন না স্ত্রীর। ধরেই নিয়েছেন, হয়তো আর বেঁচে নেই। কিন্তু ক্ষীণ আশাটুকু এখনও জিইয়ে রেখেছেন মনে। সেই আশাকে সম্বল করেই এখনও খোঁজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন স্ত্রীর।

পরিবার এবং আত্মীয়দের সঙ্গে কুম্ভমেলায় যাওয়ার কথা ছিল গুপ্তেশ্বরের। বছর পঞ্চাশের স্ত্রী তারা দেবীও ছিলেন তাঁর সঙ্গে। কথা ছিল ‘স্বতন্ত্রতা সেনানি এক্সপ্রেস’ ধরার। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ স্ত্রী আলাদা হয়ে পড়েন তাঁদের থেকে। তার পর থেকে আর দেখা পাননি স্ত্রীর। হতাশ কণ্ঠে গুপ্তেশ্বর বলেন, “ভিড়ের মধ্যে আমি স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলি। তার পর অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করি তাঁর জন্য। কিন্তু তাঁকে আর আসতে দেখিনি।” স্ত্রীর খোঁজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ১৪ নম্বর প্লাটফর্মে গীতা প্রেসের ধারে কিছু সময় জিরিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। হাতে ফোন। আঙুলগুলো কাঁপছিল দুশ্চিন্তায়। মোবাইলের স্ক্রিনে স্ত্রীর ছবি। ওই ছবি দেখিয়ে দেখিয়েই হয়তো সকলের থেকে জানতে চাইছেন, কোথাও দেখেছেন কি না।

গুপ্তেশ্বর জানান, শনিবার রাতে ভিড়ের মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে নিজে থেকে নড়াচড়ার আর কোনও উপায় ছিল না। ভিড় যে দিকে ঠেলছে, সে দিকেই চলে যেতে হচ্ছিল। অনেক কষ্টে ভিড়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্ত্রীকে খোঁজার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু শ’য়ে শ’য়ে যাত্রীর ভিড়ে তা সম্ভব হয়নি। কয়েক ফুট পর থেকেই যাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে যেন সব ধাঁধিয়ে উঠছিল। গুপ্তেশ্বর বলেন, “তখন সবাই বাঁচার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোথাও কোনও জায়গা ছিল না। হাওয়া-বাতাস খেলছিল না। কিছু ধরারও জায়গা ছিল না।” গুপ্তেশ্বর এবং তাঁর ভাই চেতেশ্বর মিলে সারা রাত ধরে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেছেন। কোনও খোঁজ এখনও পর্যন্ত পাননি। তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, ও আর বেঁচে নেই। কিন্তু আমরা তো হাল ছেড়ে দিতে পারি না!”

১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গুপ্তেশ্বর যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তার কিছুটা দূরেই গীতা প্রেসের বইয়ের দোকান। প্রায় ১২ বছর ধরে ওই দোকানে বসছেন বছর চল্লিশের দিগম্বর মণ্ডল। দীপাবলি কিংবা দোল (হোলি)-এর সময়ে নয়াদিল্লি স্টেশনে মরসুমি ভিড় অনেক দেখেছেন তিনি। তবে এই পর্যায়ের ভিড় অতীতে কোনও কালেই দেখেননি দিগম্বর। সরকারি হিসাবে নয়াদিল্লি স্টেশনে শনিবার রাতের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রচুর মানুষ আহতও হয়েছেন। তবে আহতদের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি।

New Delhi Station Northern railway Indian Rail
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy