শেষ হয়েও হয়নি শেষ। খেলা এখনও বাকি!
বিধানসভা ভোটের আগে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে বিহারে। তার পরে চূড়ান্ত যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন, তার ভিত্তিতেই নভেম্বরে হতে চলেছে দুই পর্বের ভোট। সূত্রের খবর, নথিপত্রের সমস্যার কারণে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া অনেকেই ফের নাম তোলার জন্য আবেদন শুরু করেছেন। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ায় সে সব আবেদনের এখন নিষ্পত্তি হবে না। তবে কমিশন সূত্রের বক্তব্য, ভোট মিটে যাওয়ার পরে আবেদন বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আবার তালিকায় ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ কমিশনের এসআইআর নামক লাল কার্ডে বিহারে এ বারের বিধানসভা নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকতে হবে ভোটারদের একাংশকে! এখানেই উঠছে ফের প্রশ্ন ও বিতর্ক। বাংলায় এসআইআর-এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশের মত।
এসআইআর-এর আগে বিহারে যে ভোটার-সংখ্যা ছিল, তার থেকে ৪৭ লক্ষের বেশি নাম বাদ গিয়েছে গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায়। রাজ্যে ২৩ লক্ষ মৃত বা ৩৫ লক্ষ স্থানান্তরিত ভোটারের নাম বাদ যাওয়ার কথা খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের সময়েই জানিয়েছিল কমিশন। যদিও নাম বাদ যাওয়া বা অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে নানা বেনিয়মের অভিযোগ ছিলই। খসড়া থেকে চূড়ান্ত তালিকায় বাদ গিয়েছিল আরও তিন লক্ষ ৬৬ হাজার ভোটারের নাম। সূত্রের খবর, এঁদের মধ্যে থেকেই একাংশ ফের আবেদন করতে শুরু করেছেন। সংখ্যাটা প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ভোটের মনোনয়নের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাওয়ার পরে এখন আর আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। বিহারে আগামী ২২ নভেম্বর নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে আবার আবেদনের জানলা খুলে দেওয়া হবে। সাধারণ ভাবে তখন ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারবেন আবেদনকারীরা।
বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘এসআইআর-এ নিবিড় সমীক্ষা হয়েছে। নির্ধারিত নথি দিতে না-পারলে তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে। আবার অনেক নতুন নামও উঠেছে। যাঁদের আগে তালিকায় নাম ছিল কিন্তু এখন নির্দিষ্ট নথি দিতে পারেননি, তাঁদের আবেদন বিবেচনা করে ঠিক মনে করলে পরে তালিকায় ফিরে আসার সুযোগ থাকবে।’’ সূত্রের মতে, সেই প্রক্রিয়া হবে এসআইআর বহির্ভূত। এবং তত দিনে বিধানসভা ভোট পেরিয়ে যাবে!
নেপাল বা অন্যত্র থেকে বিবাহ-সূত্রে বিহারের বাসিন্দা হওয়া বহু মহিলার নাম এসআইআর-এ বাদ গিয়েছে। মুসলিমদের একাংশও এই তালিকায় আছেন। অথচ আগে সাধারণ নথি দেখিয়েই তাঁরা ভোটার হয়েছিলেন। কমিশন সূত্রে ইঙ্গিত, সেই প্রক্রিয়াতেই তাঁরা পরে পুনর্বিবেচিত হতে পারেন। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শিবিরের অনেকের মতে, বাংলায় আসন্ন এসআইআর-এও কাগজপত্রের জটিলতায় যাঁদের নাম বাদ যাবে, পরে তাঁদের একাংশ আবার ভোটার তালিকায় নাম ফিরে পেতে পারেন। কিন্তু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন না। ভোটমুখী রাজ্যে এসআইআর করার ‘বৈশিষ্ট্য’ এখানেই!
বিহারের সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের নেতা কুমার পারভেজের মতে, ‘‘ভোটের আগে এসআইআর করে একটা অংশের মানুষের ভোটের অধিকার পরিকল্পিত ভাবে কেড়ে নেওয়া হল। কমিশনকে সামনে রেখে এটাই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অভিসন্ধি ছিল।’’ বাংলায় কংগ্রেসের এসআইআর সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারপার্সন প্রসেনজিৎ বসুর কথায়, ‘‘এটা এসআইআর-এর পরিকল্পনাগত গলদ। ভোটের মুখে তড়িঘড়ি না-করে হাতে সময় নিয়ে এই কাজ করলে বহু মানুষের সমস্যা কমতো।’’ বিহার বিজেপির দিলীপ জয়সওয়াল বা বাংলার শমীক ভট্টাচার্যেরা অবশ্য বলছেন, কমিশন তার পদ্ধতি মেনে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে। এই ক্ষেত্রে যা করণীয়, কমিশনই করবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)