কানুরাম মুন্ডা। — ফাইল চিত্র
রঞ্জিত পাল সস্ত্রীক আত্মসমর্পণ করেছেন সপ্তাহ তিনেক আগে। এ বার আত্মসমর্পণ করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় সক্রিয়, শীর্ষ মাওবাদী নেতা কানুরাম মুন্ডা— এমনই দাবি সিআরপি ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র একাধিক সূত্রের। তাঁদের বক্তব্য, শেষ মুহূর্তে কোনও গণ্ডগোল না হলে, দু’-এক দিনের মধ্যেই কানু মুন্ডা ধরা দেবেন।
বছর পঞ্চাশের কানুরাম সিপিআই (মাওবাদী) দলের বাংলা-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড বর্ডার রিজিওনাল কমিটির সম্পাদক। ওই কমিটির সদস্য ছিলেন রঞ্জিত পাল। গোরাবান্ধা স্কোয়াডের শীর্ষে থাকা কানু ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার গোরাবান্ধার বাসিন্দা, বাড়ি জিয়ান গ্রামে। কানুর হদিস পেতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছিল ঝাড়খণ্ড পুলিশ।
এক দশক ধরে পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর লাগোয়া ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিস্তীর্ণ তল্লাটের ত্রাস ছিলেন কানু। কিছু দিন আগেও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ির কয়েকটি গ্রামে এসে তিনি নিয়মিত গোপন প্রচার চালাতেন বলে গোয়েন্দারা জেনেছিলেন। গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, কানু মুন্ডাই ‘অপুদা’ ছদ্মনামের আড়ালে বেলপাহাড়ির শিমুলপাল ও আশপাশের কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে কিছু দিন ধরে প্রচার চালিয়েছেন।
সেই কানু মু্ন্ডা আত্মসমর্পণ করলে মাওবাদীদের বাংলা-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড বর্ডার রিজিওনাল কমিটি ও গোরাবান্ধা স্কোয়াড এক রকম ভেঙে যাবে বলে যেমন গোয়েন্দারা আশা করছেন, তেমনই সে কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন মাওবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের একাংশ।
একদা মাওবাদী রাজ্য কমিটির সদস্য, এখন সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে গণ সংগঠন করছেন, এমন এক জনের কথায়, ‘‘প্রথমে রঞ্জিত পাল, তার পর খোদ কানু মুন্ডা যদি আত্মসমর্পণ করেন, তা হলে বোঝাই যাচ্ছে, সংগঠনের কী হতশ্রী অবস্থা।’’ তাঁর বক্তব্য, ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমানায় কিছুটা হলেও মাওবাদীদের যে গতিবিধি ছিল, এখন সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁর মতে, ‘‘শর্টকাটে কিছু হবে না। শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।’’
সিআরপি ও আইবি সূত্রের খবর, কানুর আত্মসমর্পণ করার পিছনে পশ্চিমবঙ্গের এক জামাইয়ের প্রসঙ্গ উঠে আসছে। সেই জামাইয়ের নাম সুপাই টুডু, ৩ জানুয়ারি যিনি ঝা়ড়খণ্ড পুলিশের বিশেষ বাহিনী, ‘জাগুয়ার’-এর হাতে নিহত হন। সুপাইয়ের স্ত্রী সোনালি টুডু ওরফে সুনি হেমব্রম লালগড়ের ঝাটিয়াড়া গ্রামের মেয়ে।
আরও পড়ুন:
বিজেপি অফিসে হামলায় বাহিনী পাঠিয়ে ঠিক করেছি, জবাব কেন্দ্রের
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, একদা কিষেণজির দেহরক্ষী সুপাই ছিলেন কানুর সব চেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী। গত বছরের জুলাই মাসে কানুর দুই আস্থাভাজন ক্যাডার, মঙ্গল ও গীতা আত্মসমর্পণ করার পরে তিনি সব চেয়ে বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন সুপাইয়ের উপর। একটা সময়ে কানুর ঘনিষ্ঠ কার্তিকও তাঁর দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কাজেই, সুপাই নিহত হওয়ার পর কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন কানু। আর সেই জন্যই তিনি এখন আত্মসমর্পণের ইঙ্গিতমূলক বার্তা দিচ্ছেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘাটশিলা কলেজ থেকে ভূগোলে অনার্স নিয়ে স্নাতক কানুর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁরা জামশেদপুরে থেকে পড়াশোনা করছেন। কানুর স্ত্রী বৈশাখী ধলভূমগড় ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। ২০১২-র জুলাইয়ে বৈশাখীকে মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে এখন তিনি মুক্ত।
গোরাবান্ধা স্কোয়াডের প্রধান কানু দু’বছর আগে মাওবাদী দলের বাংলা-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড বর্ডার রিজিওনাল কমিটির সম্পাদক হন। আইবি-র এক অফিসারের কথায়, ‘‘রঞ্জিত পালের ওই পদ পাওয়ার প্রবল ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বার বার শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে রঞ্জিতের কথা বিবেচনায় আনেননি মাওবাদী নেতৃত্ব। তার পর থেকেই হতাশায় ভুগছিল রঞ্জিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy