Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Amit Shah

শুধু হিন্দি নয়, এ বার বাংলা ভাষাতেও পড়া যাবে ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং, জানালেন অমিত শাহ

মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই ১০টি রাজ্য তামিল, তেলুগু, মরাঠি, বাংলা, মালয়ালম ও গুজরাতি ভাষায় ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের বই অনুবাদ শুরু করে দিয়েছে।

ডাক্তারি পাঠ্যক্রমের প্রথম হিন্দিতে অনূদিত বইয়ের উদ্বোধন করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ডাক্তারি পাঠ্যক্রমের প্রথম হিন্দিতে অনূদিত বইয়ের উদ্বোধন করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৮:২৫
Share: Save:

হিন্দির পাশাপাশি বাংলা, তামিল-সহ আরও ছ’টি ভাষায় ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার, জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ দেশে ডাক্তারি পাঠ্যক্রমের প্রথম হিন্দিতে অনূদিত বইয়ের উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মধ্যপ্রদেশের ভোপালে সেই অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই ১০টি রাজ্য তামিল, তেলুগু, মরাঠি, বাংলা, মালয়ালম ও গুজরাতি ভাষায় ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের বই অনুবাদ শুরু করে দিয়েছে। শাহ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মালয়ালম, গুজরাতি, বাংলার মতো আঞ্চলিক ভাষায় মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর ডাক দিয়েছিলেন। শিবরাজ সিংহ চৌহানের নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশ সরকার তাঁর ইচ্ছা প্রথম পূরণ করেছে। ইতিহাসে আজকের দিনটি সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।’’

এ দিন এমবিবিএস প্রথম বর্ষের অ্যানাটমি, মেডিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রি ও মেডিক্যাল ফিজ়িয়োলজির হিন্দিতে অনুবাদ করা বই উদ্বোধন করেন শাহ। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান জানিয়েছেন, বিভিন্ন পারিভাষিক শব্দ বইয়ে ইংরেজি উচ্চারণ অনুসরণ করে হিন্দিতে লেখা হয়েছে। অর্থাৎ কিডনি বোঝাতে দেবনাগরী অক্ষরে লেখা আছে ‘কিডনি’। রাজ্যের ডাক্তারি-শিক্ষামন্ত্রী বিশ্বাস সারঙ্গ জানিয়েছেন, ৯৭ জন বিশেষজ্ঞ গত ২৩২ দিন ধরে গান্ধী মেডিক্যাল কলেজে জাতীয় শিক্ষানীতির অনুসরণে বইগুলি অনুবাদের কাজ করেছেন। অনুবাদকদের এক জন সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, খুবই সহজ-সরল ভাষায় সেগুলি লেখা। বোঝানোর জন্য অতিরিক্ত ছবি, চার্ট প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে শিবরাজ জানান, অন্য রাজ্যের পড়ুয়ারা যাতে তাঁদের অনূদিত বইগুলি থেকে উপকৃত হতে পারেন, সে জন্য সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি দেখা করবেন। শাহ বলেন, ‘‘দেশের ছাত্রছাত্রীদের আর ইংরেজি ভাষাটা না-জানা নিয়ে হীনম্মন্যতা থাকবেনা। তাঁরা নিজের ভাষায় গর্বের সঙ্গে পড়াশোনা করতে পারবেন।’’ তবে হিন্দিতে অনূদিত বইয়ের উপরে নির্ভর করে পড়াশোনা করতে গিয়ে পড়ুয়াদের চিকিৎসাবিদ্যা অর্জনের পরিসর কতটা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

এ দিন ডাক্তারি পাঠ্যক্রমের বইয়ের উদ্বোধনের মঞ্চে শুধু ডাক্তারির ব্যাপারে থেমে থাকেননি শাহ। টেনে এনেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার প্রসঙ্গও। কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য পড়াশোনা ইংরেজির বদলে হিন্দিতে চালু করা-সহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সরকারি ভাষা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। যার প্রধান শাহ স্বয়ং। সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক তরুণকান্তি নস্কর মনে করছেন, ঘুরিয়ে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার জন্যই অন্য ভারতীয় ভাষার কথা বলছেন শাহরা। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা, হিন্দি বা ভারতীয় কোনও ভাষায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ভারতীয় ছাত্রদের পক্ষে এখনই সম্ভব নয়। এর ফলে ভারতীয় পড়ুয়ারা কেবল কারিগরিবিদ্যার বিশাল জ্ঞানভান্ডার থেকে শুধু বঞ্চিতই হবেন না, উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রেও বাধা তৈরি হবে।’’

রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ম্যাকাউট) উপাচার্য সৈকত মৈত্র জানিয়েছেন, অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই) ম্যাকাউটকে বাংলায় বই তৈরির বরাত দিয়েছিল। কিন্তু করোনার সময়ে এর জন্য আর্থিক সাহায্য আর তেমন না পাঠানোয় কাজ এগোয়নি। তাঁর মতে, বাংলা-সহ স্থানীয় ভাষায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো খুব বাস্তবসম্মত নয়। মূল পাঠ্যবই এবং ক্লাসে পড়ানোর ভাষা ইংরেজি হওয়াই বাঞ্ছনীয়। যাঁরা একান্ত বুঝতে পারছেন না, তাঁদের জন্য স্থানীয় ভাষায় কিছু সহায়ক বই রাখা যেতে পারে। পড়ুয়াদের ইংরেজিতে পারদর্শী করাতেই জোর দিচ্ছেন তিনি।

তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলছেন, ‘‘ভারতে এই ব্যবস্থা চালু করতে গেলে কতগুলি ভাষায় ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে হবে, সে সম্পর্কে এঁদের কোনও ধারণা আছে? আন্তর্জাতিক স্তরে গবেষণার সুযোগ আমাদের এখানে বিভিন্ন ভাষায় পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীরা নিতে পারবেন না।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আসলে এটা হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুস্তান— সঙ্ঘ পরিবারের এই ভাবনারই অংশ। এমন একটা ব্যবস্থার কথা একমাত্র বিজেপির মতো ‘কুয়োর ব্যাঙ’ ভাবতে পারে!’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মাতৃভাষায় শিক্ষা তো ভাল ব্যবস্থা। সব ভাষাকেই বিকশিত হতে দেওয়া এবং গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তবে সরকারি যোগাযোগের ভাষা হিসেবে শুধু হিন্দিকে চাপিয়ে দিলে সমস্যা। কোনও সিদ্ধান্ত নিলে সরকারি স্তরে ঠিকমতো সমন্বয় রেখে সেটা করা উচিত।’’ এমবিবিএসের বই কেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ করছেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন সুজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah MBBS engineering language
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE