মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে হত্যার পরে লুকিয়ে উত্তরপ্রদেশ গিয়েছিলেন সোনম রঘুবংশী। ‘প্রেমিকের’ ভাড়া করা গাড়িতে উঠেছিলেন বোরখা পরে। প্রায় ১০০০ কিলোমিটার রাস্তা ওই ভাবেই গাড়ির পিছনের আসনে বসে থেকেছেন যুবতী। কোথাও গাড়ি দাঁড় করাননি। এমনকি, খাবারও খাননি। গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই তথ্য জানতে পারল মেঘালয় পুলিশ।
রাজা রঘুবংশী হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করানো হয়েছিল সোনম এবং তাঁর ‘প্রেমিক’ রাজ কুশওয়াহাকে। তাঁদের আরও দু’দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। অন্য দিকে, তদন্তকারীদের একটি দল ইনদওরে গিয়েছে। সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এক গাড়িচালককে, যাঁর গাড়িতে চেপে উত্তরপ্রদেশ গিয়েছিলেন সোনম। বস্তুত, দু’জন গাড়িচালকের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। এক জনের নাম মোহিত এবং অপর জন পীযূষ।
মোহিত একটি ট্রাভেল এজেন্সি-তে কাজ করেন। মেঘালয় পুলিশের অপরাধ শাখার আধিকারিকেরা তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। গাড়িচালক জানিয়েছেন, তাঁর এবং পীযূষের গাড়ি ভাড়া করেছিলেন রাজ (সোনমের বাবার কোম্পানির কর্মচারী এবং সোনমের ঘনিষ্ঠ)। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, গাড়িটি ভাড়া করা হয়েছিল গত ৮ জুন। তার ঠিক ছ’দিন আগে রাজার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয় মেঘালয়ের সোহরায়। খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও সোনমের খোঁজ শুরু করেছিল পুলিশ। মনে করা হয়েছিল, সোনমও খারাপ কোনও কিছুর শিকার। কিন্তু পরে অভিযোগ ওঠে, নববিবাহিত বধূই স্বামীর হত্যাকারী। ‘প্রেমিক’-এর সাহায্য নিয়ে তিন ভাড়াটে খুনিকে দিয়ে খুন করিয়েছেন ব্যবসায়ী স্বামীকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গাড়িচালক মোহিত তাদের জানিয়েছেন, গাড়িতে বোরখা পরে উঠেছিলেন সোনম। প্রায় হাজার কিলোমিটার রাস্তায় কোথাও গাড়ি থামাতে বারণ করেন তিনি। এমনকি, খাবার খাওয়ার জন্যও কোথাও নামেননি। শৌচাগারেও যাননি। তা ছাড়া চালকের সঙ্গে খুব বেশি কথাও বলেননি ইনদওরের যুবতী। প্রথমে গাড়িটি যায় বারাণসী। ৯ মে গাড়িটি থামে গাজ়িয়াবাদে। সেখানেই একটি ধাবার মালিকের ফোন থেকে ভাই গোবিন্দকে ফোন করেছিলেন সোনম। ঘটনাক্রমে মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুনের ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন ২৪ বছরের ওই এমবিএ পড়ুয়া।
ইনদওরে এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে সোনমের সঙ্গে কাজ করতেন এমন দুই মহিলাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার পর ডাকা হয়েছিল সোনমের ভাইকে। সকলেই তদন্তে সহায়তা করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। অন্য দিকে, মৃত রাজার ভাই বিপিন রঘুবংশী জানান, তাঁর দাদাকে খুনের জন্য ঠান্ডা মাথায় ছক করেছিলেন বৌদি এবং তাঁর ‘প্রেমিক।’ তিনি বলেন, ‘‘আমি যা জানি, যতটুকু দেখেছি, সবটাই পুলিশকে জানিয়েছি। আমরা সমস্ত দোষীর কঠিন শাস্তি চাই।’’
আরও পড়ুন:
গত বৃহস্পতিবার শিলং সিভিল হাসপাতালে সোনম-সহ ধৃত পাঁচ জনের ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। তার পরে তাঁদের তোলা হয়েছিল শিলং আদালতে। সোনম এবং রাজকে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাকি তিন জনকে (ভাড়াটে খুনি বলে অভিযুক্ত) ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজত দেওয়া হয়েছে।