এক পায়ে দাঁড়িয়ে। টালমাটাল ঝাড়খণ্ডের মন্ত্রী, নেতা ও আমলারা। বিশ্ব যোগ দিবসের আগে রাঁচির এক প্রশিক্ষণ শিবিরে। শুক্রবার। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।
এক পায়ে দাঁড়িয়ে টানা এক মিনিট অন্য পায়ের চেটো ঠেকিয়ে রাখতে হবে হাঁটুতে। যে সে কথা নয়! যোগের নিয়ম মানতে গিয়ে পা টলমলিয়ে আর একটু হলেই পড়ে যাচ্ছিলেন ওঁরা। তাই দেখে নিরাপত্তা কর্মীদের ফিক ফিক হাসি যেন থামতেই চায় না!
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশ বলে কথা। পই পই করে ব্যায়াম অনুশীলনের কথা বলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসও। নাকানিচোবানি খেয়েও তাই দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গেলেন মন্ত্রীরা। রাঁচির দীনদয়াল নগরের আইএএস অফিসার্স ক্লাবে শুক্রবার বিধায়ক, আমলাদের সঙ্গে হাজির ছিলেন ঝাড়খণ্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামচন্দ্র রাজবংশী ও জলসরবরাহ মন্ত্রী চন্দ্রপ্রকাশ চৌধুরি। কিন্তু ব্যাপারটা যে আদৌ সহজ নয়, সেটা খোলাখুলি কবুল করলেন চন্দ্রপ্রকাশ। বললেন, ‘‘আগে কখনও যোগাসন করিনি। তবে এ বার থেকে নিয়মিত করব।’’
দলের সবাইকে মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন— রবিবার ভোরে প্রত্যেক মন্ত্রী, বিধায়ককে নিজের নিজের কেন্দ্রে কোনও ময়দানে গিয়ে নাগরিকদের সঙ্গে যোগ ব্যায়াম করতে হবে। তাতেই টেনশন কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে চন্দ্রপ্রকাশ, রামচন্দ্রদের। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেও ফেলছেন, ‘‘বক্তৃতা পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু থলথলে শরীরে মঞ্চে ব্যায়াম করতে গিয়ে হাস্যকর কিছু ঘটলেই তো চিত্তির!’’
কিন্তু প্রকাশ্যে তো বলা যাবে না এ সব। আপনি কি নিয়মিত ব্যায়াম করেন? সাংবাদিকের প্রশ্নে থতমত ভাব কাটিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামচন্দ্রের উত্তর, ‘‘যোগাসন খুব ভাল অভ্যাস। সবার নিয়মিত করা উচিত।’’
বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, রবিবার ভাল ভাবে ব্যায়াম না করতে পারলে দলীয় হাইকম্যান্ডের কাছে নম্বর কমে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন মন্ত্রীরা। তাই যোগাসন শেখার হিড়িক লেগেছে। যোগগুরুর নির্দেশ আসছে, ‘‘শুয়ে পড়ে হাঁটু দু’টো পেটে স্পর্শ করুন।’’ মন্ত্রীদের মুখের চেহারা বলছে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য নির্বিকার। তাঁর কোনও সমস্যা নেই। রঘুবর দাসের রাজনৈতিক সচিব অজয় কুমার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রোজ সকালে যোগ ব্যায়াম করেন। রবিবার ভোরে রাঁচির মোরাবাদি ময়দানে তাঁর ব্যায়াম দেখে মানুষ তা বুঝতে পারবেন।’’
ভরপুর আত্মবিশ্বাস প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার গলাতেও। বললেন, ‘‘আমি নিয়মিত শারীরিক কসরত করি। আমার বাড়ির জিমে রোজ ঘাম ঝরাই। দেখে বুঝতে পারছেন না?’’
বিরোধী শিবির বলছে, এ সবই লোক ঠকানোর কল। প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র অজয় কুমারের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি ঝাঁটা হাতে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের পর এ বার যোগাসন শিবির করে মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছে।’’ ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের টিপ্পনি, ‘‘পেট্রোলের দাম কমল না। কালো টাকা দেশে ফিরল না। নাগরিকদের বোকা বানানোর ফন্দি এঁটে ভাল মানুষের মতো যোগাসনে বসছেন মন্ত্রীরা।’’
ঝাড়খণ্ডের বিজেপি নেতা, মন্ত্রীদের অবশ্য এ সবে কান দেওয়ার সময় নেই। তাঁদের একটাই ভয়— ভাল করে যোগ না করতে পারলে দল থেকেই না বিয়োগ হয়ে যেতে হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy