প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের আলোচনার পরে রাজনৈতিক স্তরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে কলকাতা হাই কোর্ট পশ্চিমবঙ্গে ফের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু করার নির্দেশ দেওয়ায় এক দিক থেকে জট কাটার রাস্তা খুলল বলেই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারামনে করছেন।
মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজ ফের চালু করার নির্দেশ দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু দুর্নীতি এড়াতে জব কার্ড হোল্ডারদের হাতে সরাসরি টাকা দেওয়ার বিকল্পের কথাও বলেছে। ফলে সেই রাস্তায় এগিয়ে রাজ্যে ফের ১০০ দিনের কাজ (এমজিএনআরইজিএ) প্রকল্প চালু করা যেতে পারে। সূত্রের দাবি, সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ। ঘরোয়া স্তরে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের মতামতও নেওয়া হবে।
২০২২ থেকে দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ রায় দিয়েছে, ১ অগস্ট থেকে ফের প্রকল্প চালু করতে হবে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, এত দিন ওই প্রকল্প বন্ধ থাকায় তৃণমূল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা ও বঞ্চনার রাজনীতির অভিযোগ করে ফায়দা তুলছিল। তার মোকাবিলা করতে গিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যদি প্রকল্পে টাকা দিত, তা হলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তির ভোঁতা হয়ে যেত। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ১০০ দিনের কাজ চালু হলে বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের পক্ষে আর কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা-বঞ্চনার অভিযোগ তোলা সম্ভব হবে না। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে পশ্চিমবঙ্গের উপরে বিশেষ শর্ত আরোপ করা গেলে অতীতে যে দুর্নীতি হয়েছিল, কেন্দ্রের সেই অবস্থানও বহাল থাকবে। ফলে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। অভিযোগওবহাল থাকবে।
২০২৩-এর ডিসেম্বরে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের আমলাদের মধ্যে আলোচনা হবে বলে ঠিক হয়েছিল। দফায় দফায় সেই বৈঠক হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে রাজ্য সরকারের রিপোর্ট এসেছে। তার পর থেকে ফাইল শিবরাজের টেবিলেই রয়েছে।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকসূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রের সামনে রাস্তা দু’টি। এক, হাই কোর্টের রায় মেনে নেওয়া। দুই, হাই কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়া। এই দ্বিতীয় পন্থা নেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, তা হলে আমজনতার মধ্যে ভুল বার্তা যাবে যে মোদী সরকার মানুষের টাকা আটকাতে চাইছে। বরং হাই কোর্ট তার রায়ে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ শর্ত আরোপ করার কথা বলেছে। জব কার্ড হোল্ডারদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর কথা বলেছে। হাই কোর্টের রায় খতিয়ে দেখে কী ভাবে এই পথে এগোনো যায়, তা নিয়ে আমলা স্তরে ভাবনাচিন্তা শুরু হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)