Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অটলকে অস্ত্র করে কাশ্মীর জয়ের ভাবনা

জমানা বদলেছে। কিন্তু কাশ্মীরে অটলবিহারী বাজপেয়ীর ঐতিহ্যকেই হাতিয়ার করলেন নরেন্দ্র মোদী। ‘ইনসানিয়ত’, ‘কাশ্মীরিয়ত’ আর ‘জামুরিয়ত’-এর কথা বলে জানালেন, মানবিকতা বজায় রেখে গণতন্ত্রের মাধ্যমে কাশ্মীরের মূল ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে চান তিনি। মানবতা, কাশ্মীরিয়ত্ব আর গণতন্ত্র। ২০০৩ সালে শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বক্তৃতা দিতে গিয়ে এই শব্দগুলিকেই বেছে নিয়েছিলেন বাজপেয়ী। এগারো বছর পরে সেই একই স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে বাজপেয়ীরই শরণাপন্ন হলেন মোদী।

শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর স্টেডিয়ামে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই

শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর স্টেডিয়ামে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই

সাবির ইবন ইউসুফ
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৫
Share: Save:

জমানা বদলেছে। কিন্তু কাশ্মীরে অটলবিহারী বাজপেয়ীর ঐতিহ্যকেই হাতিয়ার করলেন নরেন্দ্র মোদী। ‘ইনসানিয়ত’, ‘কাশ্মীরিয়ত’ আর ‘জামুরিয়ত’-এর কথা বলে জানালেন, মানবিকতা বজায় রেখে গণতন্ত্রের মাধ্যমে কাশ্মীরের মূল ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে চান তিনি।

মানবতা, কাশ্মীরিয়ত্ব আর গণতন্ত্র। ২০০৩ সালে শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বক্তৃতা দিতে গিয়ে এই শব্দগুলিকেই বেছে নিয়েছিলেন বাজপেয়ী। এগারো বছর পরে সেই একই স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে বাজপেয়ীরই শরণাপন্ন হলেন মোদী। বললেন, “বাজপেয়ীজি একটা কাজ শুরু করেছিলেন। সেই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার কাজ। এখানে ‘সুদিন’ নিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করব আমি।” সঙ্গে সঙ্গে হাততালিতে ফেটে পড়ল স্টেডিয়াম।

আগামী কাল জম্মু-কাশ্মীরে তৃতীয় দফা ভোট। তার আগে রাজ্যে পরিবর্তন আনার ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর স্টেডিয়ামে আজ প্রায় ১২ হাজার লোকের জমায়েত হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। ছাই রঙা ফিরহান পরে সেখানে বক্তৃতা দেন মোদী। তিরিশ মিনিটের টানা বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নানা প্রসঙ্গ ছুঁয়ে গিয়েছেন। স্টেডিয়ামে হাততালির ঝড় উঠেছে। কংগ্রেসের পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরের মূল দুই রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স আর পিডিপি-কে আজ একহাত নিয়েছেন তিনি। কোনও দলের নাম না নিয়েই জনতার উদ্দেশে বলেছেন “বাবা-ছেলে আর বাবা-মেয়ের রাজত্বে আপনাদের জন্য কিছুই করা হয়নি। বিজেপিকে ভোট দিন। গোটা রাজ্য থেকে দুর্নীতির নাম মুছে ফেলব আমি।” কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সেই সঙ্গেই টেনে এনেছেন বদগাম প্রসঙ্গ। সম্প্রতি বদগামের ছাত্তেরগামে সেনার গুলিতে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। সেনা ওই ঘটনায় নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। মোদী বলেছেন, “বিজেপি আমলেই সেনা নিজেদের ভুল স্বীকার করতে শিখেছে।”

অটলবিহারীর ঐতিহ্যকে সামনে আনাটা বড় রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখছেন অনেকে। তাঁদের মতে, কাশ্মীরে বাজপেয়ীর একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল। আর মোদী সেটা খুব ভালই জানেন। এক সময় গুজরাত দাঙ্গায় নাম জড়ানো মোদী তাই নিজের ভাবমূর্তি ফেরাতেই এখানে বাজপেয়ীকে সামনে এনেছেন বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে যে বাজপেয়ীকে দিয়ে তিনি বাজিমাত করতে চেয়েছেন, তাঁর প্রসঙ্গেই একটা ভুল তথ্য দিয়ে ফেলেছেন মোদী। বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “১৯৮৩ সালের পরে এই স্টেডিয়ামে সভা করার সাহস আর কোনও প্রধানমন্ত্রীই দেখাননি।” কিন্তু ২০০৩ সালে এই স্টেডিয়ামেই সভা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী।

শ্রীনগরের আগে অবশ্য জম্মুর সাম্বায় জনসভা ছিল মোদীর। সেখানে সাম্প্রতিক জঙ্গি হানা নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর আর্জি, “বুলেটের জবাব ব্যালটে দিতে হবে।” মোদীর বক্তব্য, যে সব সেনা ও পুলিশকর্মী জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের বলিদান যাতে বৃথা না-যায়, তা দেখতে হবে সাধারণ কাশ্মীরিদেরই। তাঁর কথায়, “যে আঙুল ইভিএম মেশিনের বোতাম টেপে সেই আঙুল একে-৪৭ চালানো আঙুলের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।”

সেই সঙ্গেই কাশ্মীরের উন্নয়ন নিয়ে এক গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “কাশ্মীরের মানুষ আমার প্রতি ভালবাসা আর বিশ্বাস দেখিয়েছেন। সুদ সমেত সেই বিশ্বাস আর ভালবাসা আমি ফেরত দিতে চাই। উন্নয়নের মাধ্যমে।” তবে আজ গোটা সফরে এক বারের জন্যও বিতর্কিত ৩৭০ ধারা নিয়ে মুখ খোলেননি মোদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE