Advertisement
E-Paper

‘এই প্রথম গণপ্রহার নিয়ে কড়া আইন এনেছে সরকার’, নতুন ফৌজদারি আইন চালু হওয়ার দিন জানালেন শাহ

প্রসঙ্গত, ১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি)-র পরিবর্তে হয়েছে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি দণ্ডবিধি)-র নতুন রূপ ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪ ১৩:৫৮
Mob lynching has been made punishable with death said Amit Shah

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ভারতীয় দণ্ডবিধিতে গণপ্রহার নিয়ে এত দিন আলাদা কোনও বিধান ছিল না। তবে সোমবার থেকে দেশ জুড়ে চালু হওয়া নয়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতাতে এই গণপ্রহারের ধারা যুক্ত করা হয়েছে। গণপ্রহারের জেরে মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজা হতে পারে। দেশে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন চালু হয়েছে। সোমবার সে নিয়েই সাংবাদিক বৈঠকে গণপ্রহারের বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একই সঙ্গে নতুন আইনে কী কী বিধান রয়েছে, তা-ও স্পষ্ট করেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, বিরোধীদের উদ্দেশে শাহের বার্তা, ‘‘নতুন আইন নিয়ে রাজনীতি না করে দেশের মানুষের স্বার্থে সমর্থন করুন।’’

দেশে প্রায়ই গণপ্রহারের মতো ঘটনা ঘটে। কখনও অপরাধীরা শাস্তি পান, আবার কখনও ছাড়া পেয়ে যান। যা নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক গণপ্রহারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে। এত দিন গণপ্রহারের জেরে মৃত্যু হলে পুলিশ খুন বা খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত করত। তবে নতুন আইনে গণপ্রহারকে আলাদা ধারায় চিহ্নিত করা হয়েছে। তার জন্য কী শাস্তি হবে, তারও উল্লেখ রয়েছে।

সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে শাহ বলেন, ‘‘আইনে গণপ্রহার নিয়ে কোনও বিধান ছিল না। তবে নতুন আইনে গণপ্রহারকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। গণপ্রহার নিয়ে বিধান আনার দাবি দীর্ঘ দিনের। গণপ্রহারের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।’’ সেই সঙ্গে শাহ জোর দেন ‘দণ্ড’ এবং ‘ন্যায়’-এর উপর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘নতুন আইনে সাজার থেকে সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায় পান— সেটাই দেখা হয়েছে।’’ শাহ সোমবার আরও বলেন, ‘‘ঔপনিবেশিক যুগের ফৌজিদারি আইনের সংশোধনের পাশাপাশি বিচারব্যবস্থায় ভারতীয় আত্মা যোগ করা হয়েছে। বিধানগুলি এমন যে, এতে অনেক গোষ্ঠী উপকৃত হবে। ব্রিটিশ আমলের আইনের অনেক ধারা আজকের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।’’

এ ছাড়াও শাহ জানান, নতুন আইনে নারী সুরক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এমনকি, নতুন আইনে ভুক্তোভোগী বাড়িতে বসেই নিজে বয়ান দিতে পারবেন। অনলাইনে এফআইআর দায়েরের সুবিধাও রয়েছে নতুন আইনে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশদ্রোহের ধারা আমরা সম্পূর্ণ ভাবে সরিয়ে দিয়েছি। তার পরিবর্তে দেশবিরোধী কার্যকলাপের জন্য একটি নতুন ধারা নিয়ে এসেছি। এর আগে সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়া অপরাধ ছিল। তবে এখন কেউ যদি ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা এবং অখণ্ডতা ক্ষতি করার চেষ্টা করেন তাঁর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

শাহের কথায়, ‘‘অপরাধের প্রমাণ জোগাড়ে ভিডিয়ো রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তল্লাশি অভিযানের সময়ও ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে। কাউকে যাতে ফাঁসানো না যায়, সে কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির মতো ঘটনা ভুক্তভোগীর ই-বিবৃতি এখন আইনত বৈধ। আগে পুলিশ কাউকে তুলে নিয়ে গেলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের আদালতে ছুটতে হত। তবে এখন আমরা প্রতিটি থানায় একটি রেজিস্টার এবং ই-রেজিস্টার রাখা বাধ্যতামূলক করেছি। কোন কোন অভিযুক্ত পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন, তার তালিকা থাকবে।’’

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ জমানা থেকে চলে আসা ভারতীয় আইনে বদল এনেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি)-এর পরিবর্তে হয়েছে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি দণ্ডবিধি)-এর নতুন রূপ ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন)-এর বদলে কার্যকর হচ্ছে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’।

নতুন আইন সংসদে পাশ করানো নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল বিরোধী শিবির। তাদের অভিযোগ, কোনও আলোচনা ছাড়াই একতরফা বিল পাশ করানো হয়েছে সংসদে। সেই অভিযোগের পাল্টা শাহ বলেন, ‘‘এই বিল নিয়ে লোকসভায় ন’ঘণ্টা ৩৯ মিনিট ধরে আলোচনা চলেছে। আলোচনায় ৩৪ জন সংসদ সদস্য অংশ নিয়েছিলেন। রাজ্যসভাতে সাত ঘণ্টা আলোচনা হয়। এই বিল আগে থেকেই সংসদে তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়েছিল।’’

শাহ জানান, তাঁর মন্ত্রক নতুন আইন সম্পর্কে সমস্ত সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টগুলির বিচারপতি এবং আমলাদের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছিল। সেই সব পরামর্শ পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিরোধীদের উদ্দেশে শাহ বলেন, ‘‘নতুন আইন দেশের ১৪০ কোটি মানুষের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। এটা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। আমি চাই বিরোধীরা সমর্থন করুক। নতুন আইন নিয়ে যে কোনও আলোচনার জন্য আমার মন্ত্রকের দরজা খোলা আছে। আমি সকলের কথা শুনব।’’

New Criminal Laws Mob Lynching
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy