Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঝড়ের আগে ঢাল খুঁজছেন মোদী-অমিত

সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে পরশু। একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে কোণঠাসা নরেন্দ্র মোদীর সরকার ও দল তার আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আসরে নামল নিজেদের ঘুঁটি সাজাতে। ললিত মোদী বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে আজ রাজধানীতে ডেকে পাঠান বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

নয়াদিল্লিতে মধ্যপ্রদেশ ভবনে শিবরাজ সিংহ চৌহান।

নয়াদিল্লিতে মধ্যপ্রদেশ ভবনে শিবরাজ সিংহ চৌহান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০৩:০২
Share: Save:

সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে পরশু। একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে কোণঠাসা নরেন্দ্র মোদীর সরকার ও দল তার আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আসরে নামল নিজেদের ঘুঁটি সাজাতে।

ললিত মোদী বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে আজ রাজধানীতে ডেকে পাঠান বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন রাজে। তার আগে বিদেশমন্ত্রী তথা ‘ললিত-গেট’-এর আর এক বিতর্কিত নেত্রী সুষমা স্বরাজ, কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গেও বৈঠকে বসেন অমিত শাহ। ব্যপম-কাণ্ডের কেন্দ্রে থাকা শিবরাজ সিংহ চৌহানও দিল্লি এসেছেন অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলতে। এখানে মধ্যপ্রদেশ ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া ভাবে কথাও বলেন তিনি।

সহমতের অভাবে জমি অধিগ্রণের বিল নিয়ে এ বারের অধিবেশনে এগোনোর আশা দেখছে না সরকার। বিলটি রয়েছে যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে। কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপির এস এস অহলুওয়ালিয়া রিপোর্ট পেশের জন্য ৩ অগস্ট পর্যন্ত সময় চাইবেন বলে এ পর্যন্ত ঠিক রয়েছে। এই অবস্থায় মোদী সরকার বেনজির ভাবে চতুর্থ বারের জন্য জমি অধিগ্রহণের অধ্যাদেশ জারি করতে পারে বলে সরকারি সূত্রে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে অধিবেশন শুরুর আগেই। সংসদের কাজকর্ম স্বাভাবিক রেখে আর্থিক সংস্কারের অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি পাশ করানোও মোদী সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

এই পরিস্থিতিতে এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ললিত মোদী নিয়ে প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হলে সুষমা নিজেই তাঁর ব্যাখ্যা দেবেন। এ বিষয়ে তাঁর লুকোছাপার কিছু নেই বলে দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন সুষমা। বিরোধীরা দাবি তুললে মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করতেও রাজি হবে কেন্দ্র।

অমিত কথা বলছেন দলের মন্ত্রী- মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে। আর মোদী কাল কথা বলবেন এনডিএ শরিকদের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম তিনি শরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, গত দেড়-দু’মাসে রাজ্যে রাজ্যে তাঁর দল যে ভাবে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছে, তাতে আসন্ন অধিবেশন যে উত্তাল হবে তা স্পষ্ট। কিন্তু দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত, সেই আক্রমণকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পথে না হেঁটে, বরং তার মুখোমুখি হতে হবে। সে কারণেই প্রতিটি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক জবাব দেওয়ার জন্য, নিজেদের মধ্যে যেমন বিস্তারিত আলোচনা সেরে নেওয়া প্রয়োজন, তেমনই শরিক নেতারাও যাতে ভিন্ন সুরে কথা না বলেন— সেটাও নিশ্চিত করাটা জরুরি নরেন্দ্র মোদীর কাছে। কাল তাই এনডিএ নেতাদের কাছেও বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। যাতে সংসদে সমন্বয়ে কোনও ফাঁক না থাকে।

বিজেপি সূত্রের খবর, বসুন্ধরার সঙ্গে আলোচনায় তাঁর কাছে অমিত শাহ আজ জানতে চান, বিরোধীদের অভিযোগগুলির জবাবে আত্মরক্ষার জন্য কী কী যুক্তি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। কংগ্রেসের আক্রমণের মুখে ঢাল হিসেবে সেগুলিকে কতটা ব্যবহার করা যায়, এখন তা খতিয়ে দেখছেন মোদী-অমিত-জেটলিরা।

অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক শেষে বসুন্ধরা রাজে এবং স্মৃতি ইরানি।

তৎপরতা বিপক্ষ শিবিরেও। সুষমা, বসুন্ধরা ও শিবরাজের পদত্যাগের দাবিতে সুর চড়াচ্ছে কংগ্রেস। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ আজ বলেছেন, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগের পরেও মন্ত্রীরা যে ভাবে গদিতে বসে রয়েছেন তাতে স্পষ্ট, জনমানসের ভাবনা নিয়ে এই সরকার মাথা ঘামায় না।’’ সরাসরি চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি, অন্য দলগুলির সঙ্গেও সরকার-বিরোধী সমন্বয় তৈরি করতে চাইছে কংগ্রেস। সংসদে বিরোধিতার আগে জমি তৈরি করতে সোমবার বিজেপি নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে রাস্তায় নামছে ছ’টি বাম দল।

গত কাল গিরিধারী লাল ডোগরার জন্মশতবর্ষে জম্মুতে গিয়ে একই মঞ্চে কংগ্রেসের আজাদের সঙ্গে দেখা হয় মোদীর। তিনি হাল্কা চালে বলেন, ‘আজ আমাদের এখানে শান্তিতে বসে থাকতে দেখেছেন, সংসদ শুরু হলেই লড়াই শুরু হয়ে যাবে!’ আজ আজাদ বলেন, ‘‘মন্ত্রীরা পদত্যাগ করলে সংসদ সচল থাকবে। বিল পাশ করানোও সহজ হবে।’’ বিহার নির্বাচনের আগে এটাই সংসদের শেষ অধিবেশন। দলের ভাবমূর্তিতে কালির দাগ যাতে আরও গভীর হয়ে না ওঠে তা নিশ্চিত করা ও যতটা সম্ভব ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করাটাও কম জরুরি নয় মোদীর কাছে। অথচ ব্যপম মামলা সিবিআইয়ের হাতে আসতে অস্বস্তি বেড়েছে তাঁর সরকারের। ২০১৩ সালে আয়কর দফতরের দেওয়া একটি রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসায় নাম জড়িয়েছে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ব্যপম কাণ্ড বিতর্কের আগুনে সাম্প্রতিক সংযোজন মাত্র। ললিত-বিতর্ক নিয়ে নিঃসন্দেহে সংসদে হইচই করবে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। বিদেশমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে এখনও অনড় সনিয়া গাঁধীর দল। কিন্তু এ ছাড়াও যে বিষয়গুলি তোলা হবে, তার মধ্যে রয়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের পদত্যাগের দাবি। পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রধান পদে গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। দলীয় সাংসদ হেমা মালিনীর গাড়ির ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু নিয়েও ছেড়ে কথা বলা হবে না। দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী পঙ্কজা মুণ্ডের বিরুদ্ধে। তিনি দরপত্র ছাড়াই রাজ্যের স্কুলগুলির জন্য ২৪টি সংস্থাকে একই দিনে ২০৬ কোটি টাকার জিনিস কেনার বরাত দিয়েছেন। এই বিষয়গুলিকে নিয়েও রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে ঝাঁপাবে কংগ্রেস।

ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE