বিহারের ভোট যতই এগিয়ে আসছে জমে উঠছে নরেন্দ্র মোদী ও নীতীশ কুমারের দ্বৈরথ।
অভিযোগ আর তার পাল্টা জবাব কয়েক দিন ধরেই সামনে আসছিল। কিন্তু আজ বিহারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচারে সেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। গয়ায় ভোটের জনসভায় মোদীর নিশানায় ছিলেন নীতীশ ও লালু। বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি আক্রমণ করেন এই দুই নেতাকে। বিহারে জঙ্গলরাজ চলছে বলে কটাক্ষ করেন তিনি। আক্রমণ করেন নীতীশের শাসন, এমনকী লালুর সঙ্গে তাঁর জোট নিয়েও। আর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি অভিযোগের জবাব দিতে টুইটারে যুদ্ধে নামেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়েন লালুপ্রসাদও। গয়ার মোদীর সভা শুরুর আগেই টুইট করেন নীতীশ। মোদীকে কটাক্ষ করে লেখেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত আমরা এমন এক সরকার পেয়েছি, যাকে বলা যায় ‘কেন্দ্রীয় টুইটার সরকার’! কেন না, এই সরকার টুইটারে শোনে, সেখানেই প্রতিক্রিয়া দেয়!’’ সেই শুরু। তার পর থেকে জমে ওঠে লড়াই। গয়ার সভায় বিহারকে ‘বিমারু’ বা দুর্বল রাজ্য বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জবাবে নীতীশ লেখেন, ‘‘প্রথমে বললেন ডিএনএ-র কথা, এর পর বিমারু! আপনি জানেনই না, বিহার আজ আর পিছিয়ে নেই।’’ মোদী বলেছিলেন, রাজস্থান আর মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি বিজেপি শাসনে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে নীতীশের চ্যালেঞ্জ, সত্যিটা পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়ে দিন। টুইটারে নীতীশের মন্তব্য, ‘‘আমরা সমাজবিরোধীদের টিকিট দেব না বলে ঠিক করেছি। বুদ্ধের জমিতে দাঁড়িয়ে আপনিও সে কথা ঘোষণা করুন।’’ এর পরেই নরেন্দ্র মোদী মঞ্চে দাঁড়িয়ে জেডিইউকে ‘জনতা দমন ও উৎপীড়ন’ বলে নতুন নামকরণ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে জবাবও আসে তৎক্ষণাৎ। হিন্দিতে নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ করে নীতীশ লেখেন, ‘‘গুজরাত দাঙ্গার পরে অটলবিহারী বাজপেয়ী আপনাকে রাজধর্ম পালনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। দেশের এখনও সে কথা মনে আছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘বিহারে যদি জঙ্গলরাজ-২ আসে, সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।’’ লালুকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘জঙ্গলরাজ-১ –এ জেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। জেল থেকে মানুষ খারাপ শিখে এসে আরও খারাপ কাজ করে।’’ নীতীশের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘দয়া করে বলবেন, জেল থেকে বের হওয়া আপনার দলের সভাপতি অমিত শাহজি কোন খারাপ জিনিস নিয়ে এসেছেন!’’ মোদীকে পাল্টা আক্রমণ করেন লালুও। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর বন্ধু অমিত শাহকে জিজ্ঞাসা করুন, জেল থেকে কুৎসা ও মিথ্যাচার ছাড়া আর কী কী শিখে এসেছেন!’’ জেলে ভগবান কৃষ্ণ জন্ম নিয়েছেন এবং তিনি পাপী কংসকে বধ করেছেন বলেও মন্তব্য লালুর। মোদীকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘যে জঙ্গলরাজ ২-এর ভয় দেখাচ্ছে, সে নিজে মণ্ডলরাজ-২ এর কথা ভেবে ঘাবড়ে গিয়েছে! বিহারে এ বার মণ্ডলরাজ বনাম কমণ্ডলরাজ হবে।’’
এ দিনের সভায় মোদী বিহারের বাসিন্দাদের ভালবাসা সুদ-সহ ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। নীতীশের জবাব, ‘‘দু’বছর ধরে বিহারের বাসিন্দাদের ভালবাসা ও সমর্থন সুদ-সহ ফেরানোর কথা বলছেন! দেড় বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, সুদ ছাড়ুন আসলেরই কোনও খবর নেই!’’ ২৫ বছরে বিহারে কোনও রকম উন্নয়ন হয়নি বলে দাবি মোদীর। পাল্টা নীতীশের প্রশ্ন, ‘‘আপনি বলছেন ২৫ বছরে কিছু হয়নি। অথচ আপনার দলের নেতারাই উন্নয়নের কৃতিত্ব নিতে চাইছেন!’’ কালো টাকা ফেরানো নিয়েও মোদীকে কটাক্ষ করেন নীতীশ।
দিন কয়েক আগে লালু বলেছিলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে তিনি বিষ খেতেও রাজি। নীতীশও একটি দোঁহা টুইট করে লেখেন, ‘খারাপ মানুষ ভাল মানুষের কোনও ক্ষতি করতে পারে না। চন্দন গাছকে জড়িয়ে থাকে সাপ, কিন্তু তাতে চন্দন গাছের কোনও ক্ষতি হয় না।’ অনেকেই মনে করেছিলেন, ‘দায়ে পড়ে’ জোট বাঁধার অসন্তোষই প্রকাশ পাচ্ছে নীতীশ-লালুর বক্তব্যে। আজ সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদীর কটাক্ষ, ‘‘এ রাজ্যে ভুজঙ্গপ্রসাদ এবং চন্দনকুমার কে, তা আমি জানি না। তবে ভোটের পরে এই জোট থাকবে তো?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy