Advertisement
০১ জুন ২০২৪

অনেকটা রেহাই লোকাল ট্রেনে, মাসিক টিকিটেও

বিরোধী দলগুলিকে জায়গা না-দিতে জোটের সাংসদদের দাবি মেনেই লোকাল ট্রেনের বর্ধিত ভাড়া খানিকটা কমাল এনডিএ সরকার। নতুন ভাড়া চালু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে আজ রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, শহরতলির ট্রেনে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাত্রার ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে না। পাশাপাশি মাসিক টিকিটের উপরে বর্ধিত ভাড়াও অনেকটাই প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

বিরোধী দলগুলিকে জায়গা না-দিতে জোটের সাংসদদের দাবি মেনেই লোকাল ট্রেনের বর্ধিত ভাড়া খানিকটা কমাল এনডিএ সরকার। নতুন ভাড়া চালু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে আজ রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, শহরতলির ট্রেনে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাত্রার ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে না। পাশাপাশি মাসিক টিকিটের উপরে বর্ধিত ভাড়াও অনেকটাই প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।

গত শুক্রবার ভাড়া বাড়ানোর সময় রেল মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, মাসিক টিকিটের ক্ষেত্রে ১৫টি সফরের বদলে এখন থেকে ৩০টি সফরের ভাড়া গুনতে হবে। অর্থাৎ ভাড়া বাড়ছিল ১০০ শতাংশ। আজ সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাসিক টিকিটের দাম বাড়বে ১৪.২ শতাংশ। তা ছাড়া, অন্যান্য ক্ষেত্রে আগামিকাল থেকে ভাড়া বাড়লেও লোকাল ট্রেনে বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হবে ২৮ তারিখ থেকে। সব মিলিয়ে এই ঘোষণায় নিত্যযাত্রী আমজনতা যে খুশি হবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

বস্তুত, আমজনতাকে খুশি করতেই আজ লোকাল ট্রেনে ভাড়া কমানোর দাবি নিয়ে রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়ার দ্বারস্থ হয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি এবং শিবসেনা সাংসদেরা। সামনেই মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। রেলের ভাড়া বৃদ্ধি ভোটারদের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলবে, সেই আশঙ্কা করছিলেন রাজ্যের এনডিএ নেতারা। শরিক শিবসেনা তো খোলাখুলিই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিল।

বিজেপি এবং শিবসেনা দু’দলই মনে করছে, মুম্বইয়ের বড় সংখ্যক মানুষ লোকাল ট্রেনের উপর নির্ভরশীল। রেলের সিদ্ধান্তে পরিবহণ খাতে তাদের খরচ এক ধাক্কায় দ্বিগুণ হতে চলেছিল। গৌড়ার সঙ্গে দেখা করে প্রতিনিধি দলের সদস্য মহারাষ্ট্রের বিজেপি সাংসদ কিরীট সোমাইয়া বলেন, “সম্পূর্ণ না হলেও লোকাল ট্রেনের বর্ধিত ভাড়া অন্তত আংশিক ভাবে যাতে প্রত্যাহার করা হয়, রেলমন্ত্রীর কাছে সেই দাবি জানানো হয়েছে।” প্রতিনিধি দলকে দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন গৌড়া। তার পরেই ভাড়া বৃদ্ধি আংশিক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে রেল মন্ত্রক।

গোটা ঘটনাপ্রবাহ দেখে অনেকেই অবশ্য মনে করছেন যে, অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবেই বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন শাসক দলের সাংসদরা। যাতে অন্তত মহারাষ্ট্রে লোকসভা ভোটে হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে না পারে কংগ্রেস-এনসিপি। রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, আজকের সিদ্ধান্তে সব থেকে লাভবান হবেন মহারাষ্ট্রের মানুষ। সেখানেই নিত্যযাত্রীর সংখ্যা সব থেকে বেশি।

তবে মহারাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে লোকাল ট্রেনের ভাড়া আংশিক প্রত্যাহার ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন রেল মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের মতে, সব দিক খতিয়ে দেখেই ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেল ভাড়া এতটা ভাড়া বাড়ানো উচিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন রেলমন্ত্রী নিজে এবং মন্ত্রকের কর্তারাও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এ নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেন গৌড়া। তার পরেই ঠিক হয় ভাড়া বাড়ানো হবে।

কারণ, দশ বছর ইউপিএ শাসনের একটা দীর্ঘ সময় ধরে ভাড়া বাড়ানোর সাহস দেখাননি কোনও রেলমন্ত্রী। ফলে রেলের কাঁধে বিপুল লোকসানের বোঝা চেপেছে। এখন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। দলও মনে করছে এটাই ভাড়া বৃদ্ধির আদর্শ সময়। রাজনৈতিক কারণে বিরোধীরা ভাড়া বৃদ্ধির বিরোধিতা করবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাদের দাবি মানলে তো কোনও দিনই ভাড়া বাড়ানো সম্ভব নয়।

এই পরিস্থিতিতে এক দিকে ভাড়া বাড়িয়ে আর্থিক সংস্কারের পথে কড়া পদক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় সরকার। অন্য দিকে, মহারাষ্ট্রের ভোটের দিকে তাকিয়ে দলীয় সাংসদদের দাবি মেনে বর্ধিত ভাড়া খানিকটা কমিয়ে বিরোধীদের রাজনৈতিক পরিসরটিও দখল করার চেষ্টা করলেন নরেন্দ্র মোদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE