Advertisement
E-Paper

ট্রাম্পের মুখে ‘বন্ধুত্ব’-কথা, কিন্তু মোদী আমেরিকা থেকে ফিরছেন ‘শুল্ক-কণ্টকে’ বিদ্ধ হয়েই!

মোদী-ট্রাম্প বৈঠকে কি অবৈধবাসী ভারতীয়দের দেশে ফেরানো, ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে ভারতের উপর প্রভাব নিয়ে আলোচনা হল? অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হলেও বৈঠকে অধরা থেকেই গেল শুল্ক-সমাধান।

Narendra Modi and Donald Trump meeting, arise many issue but untouched tax problem

কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প? —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৮
Share
Save

হোয়াইট হাউসের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অপেক্ষায় ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য। তিনি এলেন। গাড়ি থেকে নামতেই মোদীর দিকে এগিয়ে গেলেন তাঁর ‘বন্ধু’ ট্রাম্প। কোলাকুলির মাধ্যমে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন মোদীকে। তার পর করমর্দন করলেন দুই ‘বন্ধু’। ট্রাম্পের মুখে শোনা গেল মোদীর ‘বন্ধুত্ব’-এর কথা। আলোচনায় শুধু দু’দেশের সম্পর্ক নয়, উঠে এসেছে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির প্রসঙ্গও। মোদীকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। বাণিজ্যচুক্তি, সামরিক ক্ষেত্রে সাহায্য, ২৬/১১-এর চক্রীকে ভারতে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি— এমন নানা বিষয় উঠে এসেছে মোদীর মার্কিন সফরে। যা নিয়ে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়েছে বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে। কিন্তু মোদীর সফরে থেকেই গেল ‘শুল্ক-কাঁটা’।

ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম মোদী আমেরিকায় গেলেন। তাঁর সফরের দিকে নজর ছিল সকলের। অবৈধবাসী ভারতীয়দের দেশে ফেরানো, ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে ভারতের উপর প্রভাব নিয়ে কী আলোচনা হয় সেই দিকে নজর ছিল। অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হলেও ট্রাম্প-মোদীর বৈঠকে অধরা থেকেই গেল শুল্ক-সমাধান। তবে কি দুই নেতার মধ্যে শুল্কনীতি নিয়ে আলোচনা হয়নি? ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমেরিকা থেকে ভারতে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক কমানো, আরও বেশি করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে খনিজ তেল এবং সামরিক বিমান কেনার বিষয়ে মোদীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তাঁর। শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনায় মোদীর প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেছেন, “উনি আমার চেয়ে আরও কঠিন এবং ভাল মধ্যস্থতাকারী। এই নিয়ে (আমাদের মধ্যে) প্রতিযোগিতা চলতে পারে না।”

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। বাণিজ্যচুক্তি থেকে শুরু করে ২৬/১১ মুম্বই হামলার চক্রীকে ভারতে ফেরত পাঠানো— ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে দুই প্রধানের মধ্যে। তবে মোদীর সফরের আগেই ট্রাম্প শুল্ক নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। ট্রাম্প জানান, শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে তিনি ‘টিট ফর ট্যাট’ নীতি নিতে চান। অর্থাৎ, যে দেশ আমেরিকার পণ্যে যত শুল্ক চাপাবে, সেই দেশের পণ্যেও আমেরিকা তত শুল্ক চাপাবে। ভারত নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেছিলেন, এই তালিকায় সবার প্রথমে রয়েছে ভারত। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত বড্ড বেশি কর নেয়!’’ ভারতীয় পণ্যের উপর আগামী দিনে আরও বেশি হারে শুল্ক চাপাতে পারেন ট্রাম্প, সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন তিনি। সেই আবহেই মোদী-ট্রাম্পের সাক্ষাৎ, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, শেষে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের যৌথ সাংবাদিক বৈঠক হয়। তবে সেখানে নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেও ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে ‘নীরব’ই মোদী।

ভারতের সঙ্গে ‘অপূর্ব’ বাণিজ্যচুক্তি

ভারতের সঙ্গে ‘অপূর্ব’ বাণিজ্যচুক্তির পথে আমেরিকা। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছেন ট্রাম্প। বাণিজ্যচুক্তির রূপরেখা জানিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা (ভারত এবং আমেরিকা) ইতিহাসের অন্যতম সেরা বাণিজ্যপথ ধরে কাজ করতে সম্মত হয়েছি। এই বাণিজ্যপথ ভারত থেকে শুরু হয়ে ইজ়রায়েল হয়ে, ইটালিকে ছুঁয়ে আমেরিকায় আসবে।” সড়ক, রেল এবং সমুদ্রগর্ভস্থ পথে চলা এই বাণিজ্য দুই দেশের সহযোগী দেশগুলিকেও ছুঁয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এর পাশাপাশি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে যে বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে, তা মেটাতে দু’পক্ষই দ্রুত আলোচনা শুরু করবে।

২৬/১১-র চক্রীকে ভারতে ফেরত পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প

মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। চলতি বছরের শুরুতেই রানার প্রত্যর্পণে সায় দিয়েছিল আমেরিকার একটি আদালত। বৃহস্পতিবার রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণ করার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে ট্রাম্প বলেন, “বিশ্বের অন্যতম শত্রু, যিনি ২০০৮ সালের মুম্বই হামলায় জড়িত, তাঁকে বিচারের সম্মুখীন হওয়ার জন্য ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরে মোদী আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান।

অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি করবে আমেরিকা

২৬/১১ হামলার চক্রীকে ভারতে ফেরানো ছাড়াও নয়াদিল্লির হাতে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তুলে দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন ট্রাম্প। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে মোদীকে পাশে নিয়েই ট্রাম্প জানান, ভারতকে সমরাস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি করবে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত জানুয়ারিতেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বড় কিছু পদক্ষেপ করতে চলেছেন তিনি। একই সঙ্গে এটাও জানিয়েছিলেন যে, ভারতকে তাঁর দেশ আরও বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করতে প্রস্তুত। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সেই বিষয়টিতে সবুজ সঙ্কেত দিলেন ট্রাম্প। শুধু এফ ৩৫ যুদ্ধবিমান নয়, ভারতকে ট্যাঙ্করোধী ক্ষেপণাস্ত্র জ্যাভেলিন দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে। এ ছাড়াও সি১৩০জে সুপার হারকিউলিস, সি-১৭ গ্লোবমাস্টার থ্রি, পি-৮১ পোসাইডন বিমান, সিএইচ-৪৭এফ চিনুক, এমএইচ-৬০আর সিহকস, এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচে, হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র, এম ৭৭৭ হাউৎজ়ার এবং এমকিউ-৯বি মতো সামরিক সরঞ্জাম নিয়েও দু’দেশের মধ্যে কথা হয়েছে।

ঘাটতি মেটাবে তেল আর গ্যাস

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে আমেরিকার বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে। অর্থাৎ, আমেরিকা থেকে ভারতে রফতানি হওয়া পণ্যের তুলনায় ভারত থেকে সে দেশে রফতানি হওয়া পণ্যের পরিমাণ বেশি। সেই অসামঞ্জস্য ঘোচাতে ভারত আরও বেশি খনিজ তেল আমেরিকা থেকে কেনার আশ্বাস দিয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। ‘ভারতের স্বার্থেই’ এই অসামঞ্জস্য কাটানো প্রয়োজন বলে জানান ট্রাম্প। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে মূলত খনিজ তেল এবং গ্যাসের উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি থাকল মোদীর হাতে

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মোদী। সূত্রের খবর, বৈঠকে ট্রাম্প মোদীকে জানান, তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অনেকে দাবি করছিলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গোপনে কলকাঠি নাড়ছে আমেরিকা। মোদীর সঙ্গে আলোচনার শুরুতেই ট্রাম্প জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আমেরিকার কোনও হাত নেই। ট্রাম্প বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছেন। বহু বছর ধরে এই চেষ্টা চলছে। আমি এই সংক্রান্ত খবরাখবর পড়েছি। তবে বাংলাদেশের ব্যাপারটা আমি মোদীর উপরেই ছাড়তে চাই।’’

ভারত-চিন সমস্যা

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি)-য় ভারত-চিন টানাপড়েনের আঁচ পড়েছে মোদী-ট্রাম্পের বৈঠকে। ভারত-চিনের সীমান্ত সমস্যা ঘিরে সংঘাতের সম্ভাবনা দূর করতে বৃহস্পতিবার মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে মোদীকে সম্বোধন করে ট্রাম্প বলেন, ‘‘এ বার আমি ভারতের প্রসঙ্গে আসছি। আমি সীমান্তে সংঘর্ষের আবহ দেখতে পাচ্ছি, যা খারাপ বিষয়। যদি সুযোগ থাকে আমি সাহায্য করতে চাই। কারণ, এটি বন্ধ করা উচিত।’’ কিন্তু ভারত-চিন সমস্যায় আমেরিকার ‘নাক গলানো’ না-পছন্দ ভারতের। বিদেশ মন্ত্রক শুক্রবার নাম না করে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব কার্যত খারিজ করেছে। সমাজমাধ্যমে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রীর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য— ‘‘যে কোনও প্রতিবেশীর সঙ্গে আমাদের যে সমস্যাই থাকুক না কেন, আমরা সব সময়ই তার সমাধানের জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পন্থা অনুসরণ করেছি।’’ ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতেই মিস্রীর ওই মন্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে।

অবৈধবাসী ভারতীয়দের ফেরত নিতে প্রস্তুত ভারত

আমেরিকায় অবৈধ ভাবে বসবাস করা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রথম দফায় ১০৪ জন অবৈধবাসীকে আমেরিকা থেকে ভারতে পাঠানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়েই মোদী জানিয়ে দিলেন, আমেরিকায় যে সকল ভারতীয় অবৈধ ভাবে বসবাস করছেন, তাঁদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত ভারত।

সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে পাকিস্তানকে বার্তা

মোদী-ট্রাম্প বৈঠক শেষে সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। মোদী এবং ট্রাম্পের ওই যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানকে। বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য চেষ্টা করতে হবে পাকিস্তানকে। তাদের মাটি ব্যবহার করে যাতে সীমান্তে সন্ত্রাসবাদী হামলা কেউ চালাতে না-পারে, পাকিস্তানকেই তা নিশ্চিত করতে হবে। বিবৃতিতে পাকিস্তানের উল্লেখেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সে দেশের বিদেশ বিষয়ক মুখপাত্র শাফকাত আলি খান। শুক্রবার তিনি জানান, এই ধরনের বিষয়ে পাকিস্তানের উল্লেখে তিনি বিস্মিত। পাকিস্তান যে আত্মত্যাগ করেছে, তাকে গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না।

আদানি ঘুষ-মামলা নিয়ে আলোচনা?

আমেরিকায় সাংবাদিক বৈঠকে ওঠে আদানি ঘুষ-মামলার প্রসঙ্গও। ওই বৈঠকে এক সাংবাদিক মোদীকে প্রশ্ন করেন, আদানি ঘুষ-মামলা নিয়ে কি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে? প্রশ্ন শুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনায় কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিষয় উত্থাপিত হয় না। তিনি বলেন, “ভারতে বসুধৈব কুটুম্বকম আদর্শে তৈরি গণতন্ত্র রয়েছে। প্রতিটি ভারতীয় এই পরিবারের সদস্য। আমরা ব্যক্তিগত বিষয়কে দুই দেশের পারস্পরিক আলোচনার মধ্যে আনি না।”

PM Narendra Modi Donald Trump Import Tarrif

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}