নয়াদিল্লি, ১০ নভেম্বর: গত দু’সপ্তাহে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৪টি জনসভা করেছিলেন। বিজেপি নেতাদের মধ্যে সব থেকে বেশি। সেই বিহারের দ্বিতীয় তথা শেষ দফায় ভোটগ্রহণের ঠিক আগের সন্ধ্যায় লাল কেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ, দেশের রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতি নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল। কারণ, রাজধানীর নিরাপত্তার দায়িত্ব যে দিল্লি পুলিশের হাতে, তা অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই অধীন। সোমবার সন্ধ্যায় লাল কেল্লায় বিস্ফোরণের পরে বিরোধীরা দাবি তুলল, কী ভাবে লাল কেল্লার মতো ‘হাই সিকিয়োরিটি জ়োন’ ও জনবহুল এলাকায় এই ঘটনা ঘটল, তার তদন্ত হোক। নিরাপত্তায় গাফিলতির জন্য দায়বদ্ধতা স্থির করা হোক। লাল কেল্লার কাছে হামলা দেশের গৌরবের প্রতীকের উপরে হামলা বলেও অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।
মোদী সরকারের এগারো বছরের জমানায় পঠানকোট, উরি, পুলওয়ামা এবং শেষে পহলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। তার সবই জম্মু-কাশ্মীরে। এ জমানায় এই প্রথম দেশের রাজধানী বিস্ফোরণ এবং মৃত্যুর সাক্ষী হল। সরকারি ভাবে প্রথমেই লাল কেল্লার সামনে বিস্ফোরণকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ হিসেবে তকমা দেওয়া হয়নি। ফলে বিরোধীরাও আগেভাগে সন্ত্রাসবাদী হামলার দিকে আঙুল তুলে মোদী সরকারকে নিশানা করেনি। কারণ, তা হলে বিজেপি পাল্টা বিরোধীদের দিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের পাশে দাঁড়ানো’র অভিযোগ তুলতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিহারের শেষ দফার ভোটে সীমাঞ্চলের মতো সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় ভোটের মেরুকরণে বিজেপির সুবিধা হতে পারে।
সেই বুঝেই আজ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীরা গাড়ি বিস্ফোরণে হতাহতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তবে নিরাপত্তার গাফিলতি নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন। খড়্গে দাবি তুলেছেন, ‘‘সরকারকে এই ঘটনায় দ্রুত ও সার্বিক তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। নিরাপত্তায় গাফিলতির জন্য কারা দায়ী, তা নির্ধারণ করতে হবে।’’ দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বক্তব্য, ‘‘লাল কেল্লার কাছে বিস্ফোরণ খুবই চিন্তাজনক। পুলিশ ও সরকার দ্রুত এর তদন্ত করে বলুক, কী ভাবে বিস্ফোরণ হল। এর পিছনে কোনও বড় চক্রান্ত রয়েছে কি না। দিল্লির সুরক্ষা নিয়ে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা যায় না।’’
সোমবার সকালেই দিল্লির পাশে হরিয়ানার ফরিদাবাদে প্রায় ২৯০০ কেজি বিস্ফোরকের সন্ধান মিলেছিল। কংগ্রেসের প্রশ্ন, এত আরডিএক্স দিল্লির কাছে কোথা থেকে চলে এল? কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের প্রশ্ন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিহারে অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। দিল্লির পাশেই যে নিরাপত্তায় অনুপ্রবেশ হল, তা নিয়ে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই।’’ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীদের কেউ কেউ। যেমন, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ‘দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ইস্তফা দাবি করেছেন।
আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংহ সরাসরি মোদী সরকারের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, ‘‘পহেলগামের পরে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় নরেন্দ্র মোদী আচমকা সংঘর্ষবিরতি করে পাকিস্তানের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই কাজ পাকিস্তান ছাড়া কেউ করতে পারে না। নরেন্দ্র মোদীর হাতে দেশ নিরাপদ নয়।’’
বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, রবিবার সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া গেটের সামনে দিল্লির দূষণ নিয়ে প্রতিবাদে নামা সাধারণ নাগরিকদের ঠেকাতে দিল্লি পুলিশের যে তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, তা নাগরিকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেখা যায়নি কেন? কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি এই নিরাপদ রাজধানী নিয়েই বড়াই করেন? তাঁর অভিযোগ, দিল্লির নিরাপত্তায় বার বার গাফিলতি হচ্ছে। তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সরকারের মধ্যে আত্মতুষ্টির মনোভাব চলে এসেছে। দায়বদ্ধতা নেই, নিরাপত্তায় গাফিলতি হচ্ছে, আর এ দিকে শুধু স্লোগান শোনা যাচ্ছে।
এ দিকে, দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘এই হামলার মাধ্যমে নিরপরাধ মানুষকে হত্যার তীব্র নিন্দা করছি। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি’।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)