ফাইল চিত্র।
এক বছর ধরে দিল্লির সীমানায় বসে আন্দোলনকারী কৃষকেরা তিন কৃষি আইনের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিলেরও বিরোধিতা করেছিলেন। উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করেন। আজ তাঁর সরকার লোকসভায় বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিল পেশ করল।
লোকসভায় আজ কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিংহ বিল পেশ করতেই কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল, ডিএমকে-সহ বিরোধীরা এই বিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে বলে আপত্তি তোলে। সংবিধানের যৌথ তালিকায় থাকা বিদ্যুৎ বিষয়ে বিল কেন রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই পেশ করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলা হয়। বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, তিনি সব রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, তা সত্ত্বেও তিনি স্থায়ী কমিটিতে বিল পাঠানোর প্রস্তাব করছেন।
কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, এ বিষয়ে আন্দোলনকারী কৃষকদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও কেন বিলটি মোদী সরকার সংসদে পেশ করছে? বিরোধীদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ আইনে সংশোধন করে কেন্দ্র বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ব্যাপক বেসরকারিকরণের পথে হাঁটতে চাইছে। রাজ্যের হাত থেকে অধিকাংশ ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সর্বোপরি বিদ্যুৎ মাসুলে কৃষকদের ভর্তুকি তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে কৃষক সংগঠনগুলির মূল আপত্তি ছিল। কারণ বিলে বলা হয়েছে, নিখরচায় বিদ্যুৎ বা বিদ্যুতের বিলে ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। তা হলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির ঘাড়ে বোঝা চাপছে। কৃষকদের পুরো বিলই মেটাতে হবে। রাজ্য সরকার চাইলে নিজের কোষাগার থেকে আলাদা ভাবে কৃষকদের ভর্তুকি দিতে পারে।
চাষিদের ভর্তুকির বিষয়ে বিরোধীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে বিদ্যুৎমন্ত্রীর অভিযোগ। মন্ত্রী বলেন, ‘‘এই বিলে কোথাও চাষিদের ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের কথা বলা নেই। চাষিদের জন্য নিখরচায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় থাকবে।’’
কৃষক সংগঠনগুলির মঞ্চ সংযুক্ত কিসান মোর্চা সম্প্রতি বিবৃতিতে বলেছে, বিদ্যুৎ আইনে সংশোধনের প্রস্তাব প্রত্যাহার তাঁদের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল। গত ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্র মোর্চাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, বিদ্যুৎ বিলের যে সব ক্ষেত্রে চাষিদের উপরে প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা হবে। কিন্তু কোনও আলোচনা হয়নি। এই বিল সংসদে পেশ করা হলে তাতে চাষিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। আজ কৃষক ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের কর্মী সংগঠনগুলিও রাস্তায় নেমে বিরোধিতা করে বিল পুড়িয়েছে।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার সংযুক্ত কিসান মোর্চাকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তার পরেও কৃষক বিরোধী বিল পেশ করা হচ্ছে।’’ কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, এই বিলে বিধি-নিয়ম জারি করে সংবিধান সংশোধনের চেষ্টা হচ্ছে। যা সংসদের ক্ষমতার পরিধির বাইরে। একই এলাকায় একাধিক বেসরকারি সংস্থাকে বিদ্যুৎ বণ্টনের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষতি হবে সরকারি সংস্থার। মুনাফা বেসরকারি সংস্থার ঝুলিতে যাবে। তৃণমূলের সৌগত রায় বলেন, ‘‘রাজ্যের বিদ্যুৎ সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সরকার কিসান মোর্চাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করছে না।’’
কেন্দ্রীয় সরকার বিল স্থায়ী কমিটিতে পাঠালেও বিল পেশেরবিরুদ্ধে স্লোগান তুলে বিরোধীরা ওয়াকআউট করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy