Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Narendra Modi

কোভিড নিয়ে পরিকল্পনায় ব্যর্থ, পরপর ভোটে হারে মোদীর জনপ্রিয়তা কমার স্পষ্ট ইঙ্গিত, দিশেহারা দল

কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে মোদী সরকারের কোনও পরিকল্পনাই নেই। বিজেপি নেতাদেরও বক্তব্য মোটামুটি এক।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২১ ০৫:২৩
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা ধরে রাখবেন কী ভাবে? প্রশ্ন শুনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উত্তর, “কিছুই বুঝতে পারছি না!”

যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ধস নেমেছে। এর পরে কোভিডের ধাক্কা সামলাবেন কী ভাবে? লখনউ থেকে ফোনে বিজেপি নেতার একই জবাব— “কিছুই বুঝতে পারছি না!”

কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে মোদী সরকারের কোনও পরিকল্পনাই নেই। বিজেপি নেতাদেরও বক্তব্য মোটামুটি এক। তার মধ্যেই কোভিডের এই ধাক্কার পরেও যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ থাকে, তার ‘স্ট্র্যাটেজি’ কোথায়, তা নিয়ে চিন্তায় তাঁরা।

বিজেপি নেতারা মানছেন, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশ জুড়ে মৃত্যুর মিছিল এবং তার সঙ্গে অক্সিজেন, টিকার অভাবের ফলে মোদী সরকারের দিকেই আঙুল উঠেছে। স্বাভাবিক ভাবেই এর ফলে মোদীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার গ্রাফ নিম্নমুখী হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা মনে করছেন, রাজ্যের নির্বাচনে শেষ দু’তিন দফার ভোটে কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্রের ব্যর্থতার খেসারত দিতে হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, এর পরেও হাল শোধরাতে মোদী-অমিত শাহের দিক থেকে কোনও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না কেন?

আজ মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদীর সরকারই দেশে জাতীয় বিপর্যয় ডেকে আনার জন্য দায়ী থাকবে। মোদী সরকার কোভিডের মোকাবিলার থেকে টুইটারের সমালোচনা মুছতে বেশি ব্যস্ত বলে মনে হচ্ছে। এই সমালোচনা বন্ধ করার চেষ্টা ক্ষমার অযোগ্য।

‘দ্য ইনস্টিটিউট ফর হেল্থ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন’-এর হিসেব তুলে ধরে ল্যান্সেট-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ১ অগস্টের মধ্যে দেশে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লক্ষ ছোঁবে। এখনও পর্যন্ত কোভিডে মৃত্যুর সরকারি সংখ্যা ২.৩৮ লক্ষর ঘরে। ল্যানসেট-এর বক্তব্য, ১০ লক্ষ মৃত্যুর অনুমান সত্যি হলে তার জন্য মোদী সরকারই দায়ী থাকবে। কারণ
বিপদ-বার্তা সত্ত্বেও মোদী সরকার গোটা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে জড়ো করে ধর্মীয় উৎসব, বড় বড় রাজনৈতিক সভা হতে দিয়েছে। কোভিডের সংক্রমণ ছড়ানোর কথা ভুলে থেকেছে। তার আগে মার্চ মাসেই মোদী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, কোভিডের খেলা শেষ।

বিজেপির কিছু নেতা আবার এতে হর্ষ বর্ধনের দোষ দেখতে নারাজ। তাঁদের যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তো তার আগে দাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সম্মেলনে কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয় ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। তার পরে ফেব্রুয়ারিতে বিজেপি জাতীয় পদাধিকারীদের বৈঠকে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় প্রস্তাবও পাশ হয়েছে।

বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “মোদীজি বোধহয় অতিরিক্ত আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন। তাই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যে এ রকম বিপর্যয় ডেকে আনবে, তা বুঝতে পারেননি। কিন্তু এখনও কি আমরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী? দলের নেতারা কি ভাবছেন, মানুষ ২০২৪-এর আগে এই অক্সিজেন, আইসিইউ বেডের জন্য হাহাকার, টিকার অভাবের কথা ভুলে যাবে?” বিরোধী নেতারা বলছেন, বিজেপি হয়তো কোভিডের ব্যর্থতা ভোলাতে ২০২৪-এর আগে ফের মন্দির-মসজিদ, হিন্দু-মুসলিম, পাকিস্তান-জাতীয়তাবাদের ইস্যু তুলে আনতে চাইবে। কিন্তু বারবার একই হাতিয়ারে কাজ দেবে না। বিজেপি সূত্রের খবর, পরে যা হবে, দেখা যাবে।

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ধাক্কা দেওয়ার পরে গত ২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা করেছিলেন। তার পরে ‘মন কি বাত’ ছাড়া তিনি এ বিষয়ে সরাসরি মুখ খোলেননি। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, পরিস্থিতি কিছুটা শোধরালে হয়তো তিনি ফের জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা করবেন। কিন্তু এখনই বিজেপির সাংসদ-বিধায়করা নিচু তলায় ক্ষোভ টের পাচ্ছেন।

উত্তরপ্রদেশেই দেখা গিয়েছে, বিধায়ক-সাংসদরা নিজেদের এলাকায় অক্সিজেনের অভাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে চিঠি লিখছেন। উত্তরপ্রদেশের এক বিজেপি নেতা বলেন, “২০১৭-য় আমরা উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় ৪০৩টির মধ্যে ৩১২টি আসন জিতেছিলান। তাতে ভর করেই ২০১৯-এ লোকসভায় এ রাজ্য থেকে ৮০টির মধ্যে ৬২টি আসন জিতে বিজেপি কেন্দ্রে ফের ক্ষমতায় ফিরেছে। কিন্তু এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনেই ধস নেমেছে। এর পরে কোভিডের ক্ষত যোগ হবে।”

কিছু দিন আগে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা কোভিড রোগীদের সাহায্যে যুব মোর্চার হেল্পলাইন চালু করেছিলেন। কিন্তু দলের পর্যালোচনা বলছে, বিজেপি নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে বড় রাজনৈতিক দল বলে দাবি করলেও, আরএসএসের বিরাট সংগঠন সত্ত্বেও তাদের তুলনায় ভাঙা সংগঠন নিয়েও যুব কংগ্রেসের মানুষকে সাহায্য অনেক বেশি চোখে পড়েছে। বিজেপি নেতাদের যুক্তি, আসলে দল ক্ষমতায় রয়েছে। তার পরেও সাধারণ মানুষের সাহায্যে কর্মীরা মাঠে নামলে সরকারি ব্যর্থতাই স্পষ্ট হয়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE