আমেরিকা সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় কোন পাঁচটি বিষয় প্রাধান্য পাবে, বিবৃতি দিয়ে তা স্পষ্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবারই দু’দিনের সফরে ফ্রান্স উড়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকেই আগামী বুধবার আমেরিকায় যাবেন তিনি। দু’দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন মোদী। ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে বৈঠকটি হওয়ার কথা। ট্রাম্প দ্বিতীয় বার আমেরিকার মসনদে বসার পর এই প্রথম দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে মুখোমুখি সাক্ষাৎ হবে।
সোমবার বিবৃতি দিয়ে মোদী জানিয়েছেন, তাঁর এই সফর দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া বৃদ্ধির সুযোগ এনে দেবে। প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের প্রথম পর্বের কথা উল্লেখ করে মোদী জানান, দুই দেশের সমঝোতা আরও গভীর হবে। সেই সূত্রেই প্রযুক্তি, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, শক্তি এবং সরবরাহ শৃঙ্খল— এই পাঁচ ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করেন। বিবৃতির শেষে মোদী বলেন, “দুই নেতা (মোদী এবং ট্রাম্প) দুই দেশের মানুষের পারস্পরিক স্বার্থে এবং বিশ্বে উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবেন।” বিবৃতিতে মোদী বলেন, “ট্রাম্পের আমন্ত্রণে আমি ফ্রান্স থেকে দু’দিনের সফরে আমেরিকা যাচ্ছি। বন্ধু ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার জন্য আমি মুখিয়ে রয়েছি।”
মোদী ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে উত্থাপিত হতে চলা পাঁচ বিষয়ের কথা বললেও আরও বেশ কিছু বিষয় দু’জনের আলোচনায় উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠকে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন, শুল্কনীতির পাশাপাশি উঠতে পারে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও! প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে কানাডা এবং মেক্সিকোর উপর শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ওই দুই দেশ থেকে অবৈধ ভাবে প্রচুর মানুষ আমেরিকায় ঢুকে পড়েন। তারা সীমান্ত সুরক্ষিত না-করলে এবং অবৈধ অভিবাসীদের না-আটকালে শুল্ক জারি থাকবে। কানাডাও পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আমেরিকার উপর চাপানোর কথা ঘোষণা করে। কর চাপানোর হুঁশিয়ারি দেয় মেক্সিকোও। পরে বিতর্কের মাঝে হোয়াইট হাউস জানায়, আপাতত কানাডা-মেক্সিকোর কাছ থেকে বাড়তি শুল্ক নেওয়া হচ্ছে না। বাণিজ্য সহযোগী চিনের বিরুদ্ধে নতুন শুল্কনীতি প্রয়োগের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে জাপানকেও।
ট্রাম্পের পরবর্তী নিশানা কারা হবে, এখন তা নিয়েই জল্পনা চলছে বিশ্ব জুড়ে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই তালিকায় রয়েছে ভারতের নামও! কারণ, আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট যে দেশগুলির পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক বসিয়েছেন, তাদের সকলের সঙ্গেই বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ওয়াশিংটনের। ঘটনাচক্রে, ভারতের ক্ষেত্রেও রয়েছে ঘাটতি। তবে এখনও ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর ব্যাপারে মুখ খোলেননি ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মোদী শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের আশ্বাস আদায় করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অবৈধবাসীদের যার যার দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপর হয়েছেন ট্রাম্প। প্রথম দফায় ফেরানো হয়েছে ১০৪ জন অবৈধবাসী ভারতীয়কে। ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। অভিযোগ, তাঁদের নাকি হাতকড়া পরিয়ে, শিকলে বেঁধে বিমানে করে ভারতে নিয়ে আসা হয়। তার পর বিমান থেকে নামানোর আগে হাতকড়া এবং শিকল খুলে দেওয়া হয়েছিল! কেন এ ভাবে ভারতীদের পাঠানো হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যদিও এ ব্যাপারে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘বিতাড়িত অবৈধবাসীদের সঙ্গে যাতে কোনও দুর্ব্যবহার না করা হয় তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল।’’ পরবর্তী সময়ে অবৈধবাসীদের সম্মানজনক ভাবে দেশে ফেরানোর বিষয়টি বৈঠকে তুলতে পারেন মোদী।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রসঙ্গও দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে উঠতে পারে বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী।